ভারতে ছয় মাসে পাঁচটি বড় দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জনের মৃত্যু

ভারতে ছয় মাসে পাঁচটি বড় দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জনের মৃত্যু
সর্বশেষ আপডেট: 13-06-2025

গত ছয় মাসে ভারতে পাঁচটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে ৩৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল, যাতে ২৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। অন্যান্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে জনসমাগমের কারণে হিংস্রতা এবং সন্ত্রাসবাদী হামলা।

আক্রমণ ২০২৫: গত ছয় মাস দেশের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। একের পর এক পাঁচটি বড় দুর্ঘটনা শুধুমাত্র শত শত পরিবারকেই নয়, সমগ্র দেশকেই কাঁপিয়ে তুলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা, যাতে একাই ২৬৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আসুন জেনে নিই এই পাঁচটি বড় দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ তথ্য।

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা

১২ জুন ২০২৫ তারিখে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার বিমান আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়। কিন্তু উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই এটি একটি আবাসিক ভবনের সাথে ধাক্কা লেগে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। এই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনের মৃত্যু হয় এবং ভবনে থাকা আরও ২৪ জনও প্রাণ হারায়।

মৃতদের মধ্যে গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানী এবং বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় কাপুরও ছিলেন। দুর্ঘটনার শিকার হওয়া বিমানটি আধুনিক নিরাপত্তা প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত ছিল, তবুও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এই দুর্ঘটনা সমগ্র দেশকে স্তম্ভিত করে তুলেছে।

মহাকুম্ভে জনসমাগম: আস্থার উপর প্রচণ্ড অশান্তি

২৮-২৯ জানুয়ারী ২০২৫-এর রাতে প্রয়াগরাজে চলমান মহাকুম্ভ মেলায় মৌনী অমাবস্যার দিন লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী সংগম স্নানের জন্য ভিড় জমায়। রাত ১:৩০ টায় ব্যারিকেড ভেঙে পড়া এবং অব্যবস্থার কারণে ভয়াবহ জনসমাগম হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয় এবং ৬০ জনের বেশি আহত হয়।

ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। এই দুর্ঘটনা দেখিয়েছে যে এত বড় আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরী।

পহেলগাম সন্ত্রাসবাদী হামলা: ছুটি মাতমে পরিণত

এপ্রিল ২০২৫-এ জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে অবস্থিত বেসরণ উপত্যকা, যা মিনি সুইজারল্যান্ড নামেও পরিচিত, সন্ত্রাসবাদী হামলার শিকার হয়। সন্ত্রাসবাদীরা সেখানে ছুটি কাটা পর্যটকদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এই হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়।

মৃতদের মধ্যে কর্ণাটক, ওড়িশা এবং কানপুরের মানুষ ছিলেন। এই হামলা উপত্যকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তুলে ধরেছে এবং একবার আরও প্রমাণ করেছে যে সন্ত্রাসবাদ এখনও দেশের জন্য একটি গুরুতর হুমকি।

দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে জনসমাগম: অবহেলার ফল

১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫-এর রাতে নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ১৪ এবং ১৫-এ প্রচুর ভিড়ের কারণে জনসমাগম হয়। এই দুর্ঘটনা প্রয়াগরাজগামী বিশেষ ট্রেনের ঘোষণা এবং প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তনের গুজবের কারণে ঘটে।

এই জনসমাগমে ১৮ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে ১৪ জন মহিলা এবং ৩ জন শিশু ছিল। ২৫ জনের বেশি আহত হয়। ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং তথ্য ব্যবস্থাপনার অভাব এই দুর্ঘটনার কারণ। ফুট ওভারব্রিজে যাত্রীরা একে অপরের উপর পড়ে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

ব্যাঙ্গালোরে RCB-এর জয়ের পর জনসমাগম

RCB (Royal Challengers Bangalore) IPL 2025-এর শিরোপা জয়ের পর ব্যাঙ্গালোরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আয়োজিত উৎসব অনুষ্ঠানে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমা হয়। স্টেডিয়ামের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫,০০০, কিন্তু সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় জমে।

গেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ভিড় জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করে, যার ফলে জনসমাগম হয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ১১ জনের প্রাণহানি ঘটে। আয়োজকদের অবহেলা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতাকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

পাঁচটি দুর্ঘটনা, একই রকম অবহেলা

এই পাঁচটি দুর্ঘটনার মধ্যে একটি সাধারণ বিষয় লক্ষণীয় — নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। চাই তা বিমান চলাচল ব্যবস্থা হোক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সন্ত্রাসবাদী হুমকি বা ভিড় নিয়ন্ত্রণ — প্রতিটি ক্ষেত্রেই ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। এই ঘটনাগুলি এটিও দেখিয়েছে যে, সংকট ব্যবস্থাপনা এবং সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণে কতটা উন্নতির প্রয়োজন।

Leave a comment