৬৩,০০০ কোটি টাকার ঐতিহাসিক চুক্তি: ভারত কিনছে ২৬টি রাফেল এম যুদ্ধবিমান

৬৩,০০০ কোটি টাকার ঐতিহাসিক চুক্তি: ভারত কিনছে ২৬টি রাফেল এম যুদ্ধবিমান
সর্বশেষ আপডেট: 27-04-2025

ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি বিশাল প্রতিরক্ষা চুক্তি হতে চলেছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ৬৩,০০০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। এই ঐতিহাসিক চুক্তির অধীনে ভারত ফ্রান্স থেকে অত্যাধুনিক রাফেল এম (Rafale M) যুদ্ধবিমান কিনবে, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধক্ষমতা আরও জোরদার করবে।

রাফেল জেট: ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ২৮ এপ্রিল ২০২৫-এ একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হতে চলেছে, যার মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ২৬টি রাফেল মেরিন (Rafale-M) যুদ্ধবিমান কেনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই চুক্তির মূল্য প্রায় ৬৩,০০০ কোটি টাকা এবং এটিকে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম প্রতিরক্ষা কেনাকাটা বলে মনে করা হচ্ছে।

এই চুক্তিতে প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এবং ভারতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত থিয়েরি মাথু স্বাক্ষর করবেন, যখন উভয় দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

রাফেল এম: ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি নতুন শক্তি

রাফেল এম, ফ্রান্সের ড্যাসল্ট এভিয়েশন কর্তৃক নির্মিত একটি অত্যাধুনিক মেরিন যুদ্ধবিমান, যা বিশেষ করে বিমানবাহী জাহাজ থেকে চালানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই বিমানগুলি ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি প্রধান বিমানবাহী জাহাজ, INS বিক্রমাদিত্য এবং স্বদেশী INS বিক্রান্তে স্থাপন করা হবে। বর্তমানে, এই জাহাজগুলিতে স্থাপিত মিগ-২৯কে বিমানে রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যার ফলে তাদের কার্যকরী ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

চুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য

  1. বিমানের সংখ্যা: ২৬টি রাফেল মেরিন যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ২২টি সিঙ্গেল-সিটার এবং ৪টি টুইন-সিটার ট্রেইনার বিমান অন্তর্ভুক্ত।
  2. সম্পূর্ণ প্যাকেজ: এই চুক্তিতে বিমানের সাথে সাথে অস্ত্র ব্যবস্থা, সিমুলেটর, স্পেয়ার পার্টস এবং লজিস্টিক সাপোর্টও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
  3. আর্থিক মূল্য: প্রায় ৬৩,০০০ কোটি টাকা।
  4. ডেলিভারি সময়: প্রথম বিমানের ডেলিভারি ৩৭ থেকে ৬৫ মাসের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর কৌশলগত শক্তিবৃদ্ধি

রাফেল এম বিমান স্থাপনের ফলে ভারতীয় নৌবাহিনীর সমুদ্র শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এই বিমানগুলি দীর্ঘ দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত করতে সক্ষম মেটিওর এবং এক্সোসেট ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত হবে, যার ফলে শত্রু জাহাজ এবং বিমানগুলিকে কার্যকরভাবে লক্ষ্য করা যাবে। এছাড়াও, রাফেল এম এবং ভারতীয় বায়ুসেনার রাফেল বিমানের মধ্যে প্রায় ৮০% সাদৃশ্য থাকার কারণে লজিস্টিক এবং রক্ষণাবেক্ষণেও সুবিধা হবে।

স্বদেশী প্রচেষ্টা: TEDBF প্রকল্প

ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য স্বদেশী টুইন ইঞ্জিন ডেক বেজড ফাইটার (TEDBF) বিমানের উন্নয়নও অগ্রগতির পথে। তবে, এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় এক দশক সময় লাগতে পারে। তাই, রাফেল এম বিমান কেনাকে একটি অন্তর্বর্তী সমাধান হিসাবে দেখা হচ্ছে, যার ফলে নৌবাহিনীর তাৎক্ষণিক প্রয়োজন পূরণ করা যাবে।

এই চুক্তি ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে গভীরতর হতে থাকা প্রতিরক্ষা সম্পর্কের প্রতীক। এর আগেও ভারত ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফেল বিমান কিনেছিল, যা বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনার সেবায় রয়েছে। নতুন রাফেল এম বিমান কেনার ফলে উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও জোরদার হবে।

Leave a comment