২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার অভিযুক্ত তাহওয়ুর রানাকে ভারতে আনা হয়েছে, যা এই মামলায় একটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তাকে আমেরিকা থেকে ভারতে আনার দায়িত্ব নিয়েছিল NIA-এর ৭ সদস্যের একটি বিশেষ দল, যারা তাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিল্লি বিমানবন্দরে নিয়ে এসেছে।
মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ড: ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এবং ডেভিড হেডলির ঘনিষ্ঠ তাহওয়ুর হুসেন রানাকে আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পণ করে ভারতে আনা হয়েছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-এর সাত সদস্যের একটি দল বুধবার রাতে রানাকে নিয়ে দিল্লি পৌঁছে। ৬৪ বছর বয়সী রানাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে একটি চার্টার্ড বিমানে দিল্লি আনা হয় এবং সরাসরি চিকিৎসা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এখন NIA-এর সদর দফতরে তার বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।
তিহারের সবচেয়ে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে রানাকে
সূত্রমতে, তাহওয়ুর রানাকে দিল্লির তিহার জেলে উচ্চ নিরাপত্তা বিভাগে রাখা হয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষ তার নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যেই বিশেষ ব্যবস্থা করে রেখেছে। তাকে আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে, যেখানে ২৪ ঘন্টা নজরদারি এবং CCTV ব্যবস্থা আছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাকে সাধারণ বন্দীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রাখা হবে।
রানার জিজ্ঞাসাবাদ শুধুমাত্র NIA নয়, RAW (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)-এর কর্মকর্তারাও মিলে করছেন। সংস্থাগুলি রানার ভূমিকা, হেডলির সাথে সম্পর্ক, পাকিস্তানের ISI-এর সাথে যোগাযোগ এবং লাস্কর-ই-তৈয়বার সাথে তার সম্পর্কের তথ্য জানার চেষ্টা করছে।
প্রত্যর্পণের আইনি লড়াই এখন শেষ
তাহওয়ুর রানার প্রত্যর্পণ নিয়ে আমেরিকায় দীর্ঘ আইনি লড়াই চলে। তিনি বারবার আমেরিকার আদালতে আপিল করে প্রত্যর্পণ বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু অবশেষে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত তার আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় ভারত সরকার এবং আমেরিকার মধ্যে গভীর কূটনৈতিক আলোচনা হয়েছিল, যেখানে প্রাক্তন আমেরিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল।
কোন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে?
NIA রানার বিরুদ্ধে UAPA, হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, জালিয়াতি এবং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা সহ গুরুতর ধারা দায়ের করেছে। রানার উপর অভিযোগ আছে যে তিনি ২৬/১১-এর ষড়যন্ত্রে শুধু অংশ নেননি, বরং হেডলিকে ভারতে পাঠানো এবং জাল পরিচয়পত্র তৈরি করতেও সাহায্য করেছিলেন।সূত্রমতে, রানাকে পরে মুম্বই স্থানান্তর করা হতে পারে। তাকে অর্থার রোড জেলে একই উচ্চ নিরাপত্তা কক্ষে রাখা হবে, যেখানে ২৬/১১ হামলার দোষী সন্ত্রাসবাদী আজমল কাসাবকে রাখা হয়েছিল। তবে এখনও NIA-এর জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হওয়ার পরে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরো কি কি নাম উঠে আসতে পারে?
তদন্তকারী সংস্থাগুলি আশা করছে রানার জিজ্ঞাসাবাদে হামলার সাথে জড়িত অনেক অমীমাংসিত দিক স্পষ্ট হবে। এর মধ্যে পাকিস্তানের ভূমিকা, অর্থায়নের নেটওয়ার্ক, হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ এবং ভারতীয় এজেন্টদের পরিচয় ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। NIA-এর সূত্র জানিয়েছে যে কিছু নতুন নামও উঠে আসতে পারে।এই প্রত্যর্পণ ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে একটি বড় কূটনৈতিক এবং আইনি সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাহওয়ুর রানা থেকে পাওয়া তথ্য ২৬/১১-এর মতো হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
