গত মঙ্গলবার গুজরাটের রাজধানী গান্ধীনগরে এক জনসভাকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে ‘অপারেশন সিন্দুর’ এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই অভিযানটি ভারতের সেনাবাহিনী শুরু করেছে, কিন্তু একে সফল করার দায়িত্ব এখন দেশের ১৪০ কোটি জনতার উপর। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এর জন্য আমাদের বিদেশী পণ্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে ঘরোয়া পণ্য গ্রহণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জনতাকে বলেন যে, তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদেশী পণ্যের বদলে দেশে তৈরি পণ্য ব্যবহার করুক। এতে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি স্থানীয় শিল্প ও কারিগরদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। একইসাথে, আমদানি কমলে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও উন্নত হবে।
ভারতের অর্থনৈতিক শক্তি ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ
নীতি আয়োগের সিইও বি. ভি. আর. সুব্রহ্মণ্যম সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, ভারত এখন জাপানকে পেছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ভারতের অর্থনীতির আকার ৪.১৮৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যখন জাপানের ৪.১৮৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এখন ভারতের লক্ষ্য বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়া।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “দেশকে আত্মনির্ভরশীল করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই লড়াই কেবল সীমান্তে নয়, আমাদের ঘর-পরিবারেও চলে। প্রত্যেকটি ছোটো ছোটো দরকারী জিনিসপত্র যেমন, হেয়ারপিন, টুথপিক পর্যন্ত দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়ান। বিদেশী পণ্য থেকে মুক্ত হয়ে আমরা ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও উন্নত ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব।”
বিদেশী পণ্যের উপর নির্ভরতা কমানো জরুরি
ভারত বিশ্বের প্রায় ১৪০ টি দেশ থেকে প্রায় ৬০০০ প্রকারের পণ্য আমদানি করে। এর মধ্যে চীন থেকে আমদানি মোটের ১৩.৭ শতাংশ, যার মধ্যে ইলেকট্রনিক্স, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং অটো পার্টস উল্লেখযোগ্য। ভারত সরকার বিদেশী পণ্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে উৎসাহিত করছে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি ৯১৮.৯৩ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা গত বছরের ৮৫৪.৮০ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি। তাই ঘরোয়া উৎপাদনকে বৃদ্ধি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
দেশীয় পণ্য গ্রহণ করুন, জানুন কিভাবে
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক বিদেশী ব্র্যান্ডের পণ্য যেমন, কাপড়, শেভিং ক্রিম, সাবান, ডিটারজেন্ট, ব্যাটারি এবং প্রাকৃতিক রস ব্যবহার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী জনগণকে বলেছেন যে, তারা ব্র্যান্ডের পরিবর্তে পণ্যের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ কোম্পানির দেশের দিকে লক্ষ্য রাখুক এবং স্থানীয় পণ্যকে অগ্রাধিকার দিক। এতে কেবলমাত্র আমাদের বাজারে দেশীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে না, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গতি আসবে।
স্বদেশী প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর সাফল্য
ভারত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও আত্মনির্ভরতার দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অধীনে ঘরোয়া প্রতিরক্ষা উৎপাদনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। গত দশকে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ক্ষমতা ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্বদেশী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সীমান্তে শত্রুর আধুনিক অস্ত্রকে সফলভাবে পরাজিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এই জনশক্তি তখনই তৈরি হবে যখন আমরা আমাদের দেশে তৈরি পণ্য গ্রহণ করব এবং গর্বের সাথে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ কে অগ্রাধিকার দেব। বিদেশী পণ্যের উপর নির্ভরতা কেবলমাত্র ১-২ শতাংশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখুন এবং বাকি সকল পণ্য স্বদেশী পণ্য দিয়ে পূরণ করুন।”
