আরবিআই-এর নতুন সোনা ঋণ নিয়মের খসড়া প্রকাশিত হয়েছে। সরকার চায়, ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম প্রযোজ্য না হয়। নতুন নিয়ম ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরবিআই নিয়মাবলী: ভারতে সোনা শুধুমাত্র অলংকার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রতিটি পরিবারের জরুরী তহবিলের মতো। কঠিন সময় আসলে, ঘরের সোনা ধারণ করে দ্রুত অর্থের ব্যবস্থা করা হয়। এই কারণেই সারা দেশে সোনা ঋণের চাহিদা সর্বদা বজায় থাকে। কিন্তু এখন সোনা ঋণ নিয়ে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) এবং সরকার মিলে কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতে পারে। আসুন সহজ ভাষায় বুঝি, সোনা ঋণ নিয়ে কি পরিবর্তন আসছে এবং আপনার জন্য এর অর্থ কী।
কী সোনা ঋণ এবং কেন তা জরুরী?
সোনা ঋণ মানে আপনার কাছে যে সোনা আছে, তা ব্যাংক বা এনবিএফসি (Non-Banking Finance Company)-র কাছে ধারণ করে ঋণ নেওয়া। এটি একটি সহজ এবং দ্রুত উপায় যার মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত কাগজপত্র ছাড়াই আপনার প্রয়োজনীয় অর্থ দ্রুত পেতে পারেন। বিশেষ করে ছোট শহর ও গ্রামে সোনা ঋণ খুবই জনপ্রিয় কারণ মানুষ তাদের জমি-জমায়ের পরিবর্তে সোনা ধারণ করা সহজ বলে মনে করে।
আরবিআই-এর নতুন নিয়ম কেন আসছে?
এখন পর্যন্ত সোনা ঋণ নিয়ে ব্যাংক এবং এনবিএফসি-র নিজ নিজ নিয়ম রয়েছে। কারও ঋণের সুদের হার আলাদা, কারও কাগজপত্রের নিয়ম আলাদা। এতে মানুষকে অনেক সময় অসুবিধা হয়। তাই আরবিআই চায় সোনা ঋণের জন্য সারা দেশে একই রকম নিয়ম থাকুক। এতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রাহকদেরও আশ্বাস পাবে যে তাদের সোনা নিরাপদে রয়েছে।
সরকার আরবিআই-কে কী পরামর্শ দিয়েছে?
সরকার আরবিআই-কে কিছু পরামর্শ দিয়েছে যাতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা না হয়। আসুন এগুলো এক একটি করে বুঝি।
ছোট ঋণের ক্ষেত্রে কঠোরতা কম হোক
সরকার বলেছে যে ছোট ঋণ গ্রহীতাদের উপর বেশি কঠোর নিয়ম প্রযোজ্য না হোক। যেমন, যদি কোন ব্যক্তি ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সোনা ঋণ নেয়, তাহলে তার উপর নতুন নিয়মের কঠোরতা কম হওয়া উচিত। এতে ছোট ঋণ গ্রহীতারা সুবিধা পাবে।
নতুন নিয়ম কার্যকর করার জন্য সময় দেওয়া হোক
সরকার আরবিআই-কে পরামর্শ দিয়েছে যে সোনা ঋণের নতুন নিয়ম ১ জানুয়ারী ২০২৬-র আগে কার্যকর করা না হোক। এতে ব্যাংক ও এনবিএফসি-র প্রস্তুতির সময় পাবে এবং গ্রাহকরাও সহজেই পরিবর্তন বুঝতে পারবে।
সকল স্টেকহোল্ডারের মতামত নেওয়া হোক
সরকার চায় আরবিআই নতুন নিয়ম কার্যকর করার আগে সকল স্টেকহোল্ডার, অর্থাৎ ব্যাংক, এনবিএফসি এবং সাধারণ জনগণের সাথে আলোচনা করুক। এতে নিয়ম তৈরিতে বেশি স্বচ্ছতা থাকবে এবং মানুষের সমস্যাও সামনে আসবে।
আরবিআই-এর খসড়া নিয়মে কী বিশেষ?
আরবিআই যে সোনা ঋণের জন্য খসড়া তৈরি করেছে, তাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। আসুন সেগুলো সহজ ভাষায় বুঝি।
সোনার ৭৫% পর্যন্ত ঋণ
আরবিআই-এর নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ধারণকৃত সোনার মোট মূল্যের ৭৫% পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। অর্থাৎ, যদি আপনার সোনার মূল্য ১ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে আপনাকে ৭৫ হাজার টাকা ঋণ পাবে।
সোনার মালিকানা প্রমাণ করা জরুরী
সোনা ঋণ গ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে যে সে যে সোনা ধারণ করছে তা তারই। এর জন্য তাকে মূল বিল বা অফিডেভিট দিতে হবে।
সোনার বিশুদ্ধতার সার্টিফিকেট জরুরী
ব্যাংক বা এনবিএফসিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে যে তারা ধারণকৃত সোনার বিশুদ্ধতার সার্টিফিকেট জারি করবে। এতে স্পষ্টভাবে লেখা থাকবে সোনা কত ক্যারেটের, তাতে রত্ন বা হীরা জড়ানো আছে কি না এবং তাতে কতটা মিশ্রণ আছে।
কী ধরণের সোনা ধারণ করা যাবে?
কি ধরণের সোনার অলংকার, সোনার কয়েন বা বার ধারণ করে ঋণ নেওয়া যাবে, তার জন্যও নিয়ম নির্ধারণ করা হবে। সাথে সোনার কয়েনের অংশীদারিত্বের উপরও একটি সীমা নির্ধারণ করা হবে।
২২ ক্যারেট হিসেবে মূল্য নির্ধারণ করা হবে
আরবিআই-এর মতে, সোনা ঋণের জন্য ২২ ক্যারেট বা তার বেশি সোনা গ্রহণযোগ্য হবে। যদি কেউ ১৮ ক্যারেট সোনা ধারণ করে, তাহলে তার মূল্যও ২২ ক্যারেট হিসেবে নির্ধারণ করা হবে।
রূপার উপরও ঋণ পাওয়া যাবে
এখন রূপার অলংকার এবং কয়েন ধারণ করেও ঋণ পাওয়া যাবে। এর জন্য আরবিআই একটি মান নির্ধারণ করবে। রূপার বিশুদ্ধতা ৯২৫ হলে তবেই তা ঋণের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে।
চুক্তিতে সম্পূর্ণ তথ্য থাকবে
সোনা ঋণের জন্য যে চুক্তি হবে, তাতে সকল নিয়ম স্পষ্টভাবে লেখা থাকবে। ঋণ পরিশোধের পর, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধারণকৃত সোনা গ্রাহককে ফেরত দিতে হবে।
সাধারণ মানুষের উপর কী প্রভাব পড়বে?
যদি আপনি সোনা ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাহলে এই পরিবর্তন আপনার জন্য অনেক দিক থেকে উপকারী হতে পারে। নতুন নিয়ম থেকে আপনার এই সুবিধাগুলি হবে –
- আপনার সোনা আরও নিরাপদে থাকবে।
- সোনা ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে।
- ছোট ঋণগ্রহীতারা বেশি সুবিধা পাবে।
- সোনার সঠিক মূল্য জানা যাবে এবং বিশুদ্ধতার নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।
- প্রয়োজন হলে রূপা ধারণ করেও ঋণ পাওয়া যাবে।