ফওয়াদ খান এবং ভানী কাপুর অভিনীত চলচ্চিত্র ‘আবির গুলাল’ ৯ মে ভারতে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ২২ এপ্রিল পালঘামে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানি অভিনেতা ফওয়াদ খানের এই ছবির বিরুদ্ধে বয়কটের দাবি তীব্র হয়ে উঠেছিল।
আবির গুলালের গান সরিয়ে ফেলা: পাকিস্তানি অভিনেতা ফওয়াদ খান এবং বলিউড অভিনেত্রী ভানী কাপুর অভিনীত চলচ্চিত্র ‘আবির গুলাল’ নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। এই ছবিটি ৯ মে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পালঘামে জঙ্গি হামলার পর ছবিটি বয়কটের দাবি উঠতে শুরু করে। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত শিল্পী এবং তাদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যার ফলে ছবিটির মুক্তি স্থগিত করা হয়।
এইসাথে, ছবির গানগুলিও ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা পাকিস্তানি শিল্পীদের নিয়ে বর্ধমান প্রতিবাদকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
পালঘাম জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপট
২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পালঘাম এলাকায় একটি জঙ্গি হামলা হয়েছিল, যাতে ২৬ জন নিরীহ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিল এবং অনেকে আহত হয়েছিল। এই হামলা ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই হামলার পর পাকিস্তানের সাথে যুক্ত শিল্পীদের কাজের বিরোধিতা তীব্র হয়ে উঠে। এরপর, ‘আবির গুলাল’ এর প্রযোজক ও বিতরণকারীদের সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় এবং ছবিটির মুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
চলচ্চিত্র ‘আবির গুলাল’ নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্ত
পালঘাম জঙ্গি হামলার পর, ভারতে ‘আবির গুলাল’ ছবির মুক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি তীব্র হয়ে উঠে। ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প ও বিনোদন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত শিল্পীদের উপস্থিতি নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রতিবাদ চলছিল, বিশেষ করে উড়ি হামলার পরে যখন ভারত সরকার পাকিস্তানি শিল্পীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ২২ এপ্রিল ছবিটি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা ভারতে মুক্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে যে, অনেক সিনেমা হল এই ছবিটি মুক্তি দেওয়া থেকে বিরত ছিল, এবং বিভিন্ন বিনোদন সংস্থা এই ছবিটি বয়কটের দাবি জানিয়েছিল।
ছবির গান ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে
ছবির নির্মাতারা ইতোমধ্যে তাদের ছবির দুটি গান ‘খুদায়া ইশক’ এবং ‘ইংরেজি রংরসিয়া’ মুক্তি দিয়েছিল। এই দুটি গান ইউটিউবে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল, কিন্তু এখন এই গানগুলি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ‘এ রিচার লেন্স এন্টারটেইনমেন্ট’, যা ছবির প্রোডাকশন হাউস হিসেবে কাজ করছে, তাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে এই গানগুলি সরিয়ে ফেলেছে। এছাড়াও, সারেগামার ইউটিউব হ্যান্ডেল থেকেও গানগুলি সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যা ছবির অফিসিয়াল সঙ্গীত অধিকারের রক্ষাকারী ছিল।
এই সিদ্ধান্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেক ইউজার এটাকে পালঘাম জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সহযোগিতার সমালোচনা হিসেবে দেখেছে। এই সময় নির্মাতা ও শিল্পীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি, যা আরও একটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে যে, তাদের এই সিদ্ধান্তের তথ্য ছিল না নাকি তারা এই বিষয়ে নীরবতা পালন করছে।
ফওয়াদ খান এবং ভানী কাপুরের বক্তব্য
ফওয়াদ খান, যিনি ‘আবির গুলাল’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, পালঘাম জঙ্গি হামলায় গভীর শোক প্রকাশ করেছিলেন। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছিলেন যে এই হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং এই ভয়াবহ ঘটনার শিকার পরিবারের সাথে তাঁর সমবেদনা ও প্রার্থনা রইল।
ভানী কাপুরও এই হামলার নিন্দা করেছিলেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগঘন বার্তা লিখেছিলেন। ভানী বলেছিলেন যে, যখন তিনি পালঘামে হামলার খবর শুনেছিলেন, তখন তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর পক্ষে শব্দে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করা খুব কঠিন হচ্ছিল। তিনি শিকার পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও প্রার্থনা জানিয়েছিলেন।
FWICE এবং मनसेর প্রতিবাদ
‘আবির গুলাল’ বয়কটের দাবীর মধ্যে, ফেডারেশন অফ ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ (FWICE) পাকিস্তানি শিল্পীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের তাদের পুরানো নির্দেশাবলী পুনরায় জোর দিয়েছে। FWICE ভারতীয় চলচ্চিত্র ও বিনোদন শিল্পকে পাকিস্তানি শিল্পী, গায়ক ও প্রযুক্তিবিদদের সাথে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানিয়েছে। এই সংগঠন আগেও পাকিস্তানের সাথে যুক্ত ছবি ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে।
মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (मनसे)ও ‘আবির গুলাল’ ভারতে মুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছে। দলের নেতারা বলেছেন যে, পাকিস্তান ক্রমাগত জঙ্গিবাদের সমর্থন করে, এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে পাকিস্তানি শিল্পীদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া তাদের অর্থনৈতিক লাভ বৃদ্ধির সমতুল্য। मनसेর প্রতিবাদের পর ছবির মুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
‘আবির গুলাল’ এর নির্মাতা ও শিল্পী
‘আবির গুলাল’ চলচ্চিত্রটি ইন্ডিয়ান স্টোরিজ প্রোডাকশন, এ রিচার লেন্স এবং আরজয় পিকচার্সের প্রযোজনায় নির্মিত। ছবিটির পরিচালনা করেছেন আরতি এস বাগড়ি, এবং এতে ফওয়াদ খান ও ভানী কাপুর ছাড়াও লিসা হেডেন, রিদ্ধি ডোগরা, ফারিদা জালাল, সোনি রাজদান এবং পরমীত সেঠিও মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
ছবিটির সঙ্গীত বিশাল শেখর এবং শ্রেয়া ঘোষালের অবদানে সমৃদ্ধ, কিন্তু এখন ছবির গান ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলার কারণে এর প্রচার ও দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কমে গেছে।
পাকিস্তান ও ভারতের সম্পর্কের প্রভাব
এই সম্পূর্ণ বিতর্ক শুধুমাত্র একটি ছবি বয়কট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি পাকিস্তান ও ভারতের সম্পর্কে উত্তেজনার ফল। উড়ি হামলার পর থেকেই ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে পাকিস্তানি শিল্পীদের প্রবেশ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। এই ঘটনা দেখিয়েছে কিভাবে একটি জঙ্গি হামলাও সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
আবির গুলাল ছবির সাথে যা ঘটেছে তা প্রমাণ করে যে, চলচ্চিত্র শিল্পে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা এখন শুধুমাত্র একটি শিল্প হিসেবে নয়, বরং একটি রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে পরিণত হয়েছে।