ইস্তানবুলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা: যুদ্ধবিরতির কোনো ইঙ্গিত নেই

ইস্তানবুলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা: যুদ্ধবিরতির কোনো ইঙ্গিত নেই
সর্বশেষ আপডেট: 03-06-2025

সোমবার তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের মধ্যে নতুন এক দফা সরাসরি শান্তি আলোচনা শেষ হয়েছে। প্রায় এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই বৈঠকের বিষয়ে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং রুশ সরকারি গণমাধ্যম তথ্য প্রকাশ করেছে।

ইস্তানবুল: তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুল-এ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনার দ্বিতীয় দফা শেষ হয়েছে। এই দফার আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল যুদ্ধবন্দিদের বিনিময় এবং জোরপূর্বক নির্বাসিত শিশুদের প্রত্যাবর্তন। উভয় পক্ষের প্রতিনিধি দল শহরের সিরাগান প্যালেসে একত্রিত হয়েছিল, যেখানে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আলোচনার সভাপতিত্ব করেছিলেন। আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী নিয়ে সম্মতি তৈরি করা, কিন্তু এই দফাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট সমাধান দিতে পারেনি।

ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তম উমেরভ, অন্যদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ভ্লাদিমির মেদেনস্কি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে এই আলোচনার সময় উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সম্মতি তৈরি হয়নি, যা যুদ্ধ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে তুলছে।

যুদ্ধের প্রজ্বলিত অবস্থা অব্যাহত

তুরস্কে আলোচনার সময়ও ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সামরিক সীমান্তে উভয় পক্ষ থেকে আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ চলেছে। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র একটি স্কুলের কাছে পড়েছে। এতে জনসাধারণের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই আক্রমণ নিরীহ মানুষকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা দাবি করেছে যে রবিবার একটি ড্রোন আক্রমণে রাশিয়ার প্রায় ৪০টির বেশি বিমান ধ্বংস হয়েছে। রাশিয়াও জবাবী ব্যবস্থা হিসেবে ইউক্রেনের ১৬২টি ড্রোন ধ্বংস করার দাবি করেছে। উভয় পক্ষের মধ্যে এই ড্রোন যুদ্ধ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলছে।

পুতিনের জন্য বিপদের ইঙ্গিত

রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থা এই যুদ্ধে ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ইউক্রেন কর্তৃক রাশিয়ার ভেতরে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটিতে ক্রমাগত ড্রোন আক্রমণ পুতিনের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। যে স্থানগুলি আগে অত্যন্ত নিরাপদ বলে মনে করা হত, সেগুলি এখন ইউক্রেনীয় আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে যুদ্ধ যত বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে, রাশিয়া তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং আলোচনা প্রতিনিধি মেদেনস্কির জন্যও এটি চ্যালেঞ্জিং সময়, কারণ তিনি সরকারের কৌশলকে দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন, কিন্তু অভ্যন্তরীণ ত্রুটি এবং ক্রমবর্ধমান ক্ষতি তার জন্য সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে।

আমেরিকার ব্যর্থ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

আমেরিকা অনেক চেষ্টা করেছে যাতে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করে এবং যুদ্ধ শেষ হয়, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ সফল হয়নি। আমেরিকার প্রচেষ্টা এই যুদ্ধকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই তাদের সামরিক ও কৌশলগত শক্তি বাড়িয়ে যুদ্ধকে দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

ইস্তানবুল আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে শান্তির পথ এখনও অনেক দূরে। যুদ্ধবন্দিদের বিনিময় নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে গভীর মতবিরোধ রয়েছে। রাশিয়া তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে, এবং ইউক্রেনও আন্তর্জাতিক সমর্থনের সাথে তাদের যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছে। পুতিনের সমস্যা বাড়ছে এবং তিনি এখন পিছিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।

Leave a comment