রাষ্ট্রীয় উপমুখ্যমন্ত্রী দিয়া কুমারী সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, হালদিঘাটি যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত যে শিলালিপি আগে সেখানে লাগানো ছিল, তাতে ভুল তথ্য দেখানো হয়েছিল।
জয়পুর: রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং সাবেক সাংসদ দিয়া কুমারী হালদিঘাটি যুদ্ধকে কেন্দ্র করে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে ইতিহাসের বিতর্ককে আবারও জোরদার করেছেন। জয়পুরে অনুষ্ঠিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি জানান যে, হালদিঘাটি যুদ্ধক্ষেত্রে লাগানো শিলালিপিতে মহারাণা প্রতাপকে পরাজিত বলে উল্লেখ করা হয়েছিল, যা তিনি তার সংসদীয় কর্মজীবনের সময় পরিবর্তন করেছেন। এখন সেখানে লাগানো নতুন শিলালিপিতে প্রতাপের বিজয়ের উল্লেখ রয়েছে।
পুরানো শিলালিপিতে আকবরের বিজয়ের উল্লেখ
দিয়া কুমারী বলেন, হালদিঘাটি যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মনে একটা ভুল ধারণা বিরাজ করছে। হালদিঘাটিতে ASI (ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্ভে) -এর শিলালিপিতে এ কথা উল্লেখ ছিল যে, এই যুদ্ধে আকবরের বিজয় হয়েছিল এবং মহারাণা প্রতাপ পরাজিত হয়েছিলেন। এটা ছিল একটি ঐতিহাসিক অন্যায়, যা পরিবর্তন করা আমার জন্য গর্বের বিষয় ছিল, তিনি বলেন।
তিনি জানান যে, এই পরিবর্তন ২০২১ সালে সম্ভব হয়েছিল, যখন তিনি রাজসমন্দ থেকে সাংসদ ছিলেন। "আমি এই ঐতিহাসিক ভুল সংশোধন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। অর্জুন রাম মেঘওয়াল তখন সংস্কৃতিমন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁর সহযোগিতায় আমরা এই পরিবর্তন সম্ভব করে তুলতে পেরেছি," তিনি বলেন।
ইতিহাসের সত্যকে এখন সামনে আনা প্রয়োজন
দিয়া কুমারী এই বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন যে, এখন সময় এসেছে জনতাকে সঠিক ইতিহাস জানানোর। তিনি বলেন, মানুষ প্রায়ই হালদিঘাটি যুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথা বলে। কেউ এটাকে পরাজয় মনে করে, কেউ আবার ড্র। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে যে, মহারাণা প্রতাপ শুধু যুদ্ধ নয়, সংগ্রাম এবং স্বাতন্ত্র্যের প্রতীক ছিলেন। তিনি মুঘলদের अधीनতা গ্রহণ করেননি এবং বহু বছর ধরে স্বাধীনতার লড়াই করেছিলেন। তাঁর এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইতিহাসের অনেক ঘটনাকে নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে।
হালদিঘাটি যুদ্ধ: পরাজয় নাকি বিজয়?
১৫৭৬ সালে সংঘটিত হালদিঘাটি যুদ্ধ ভারতীয় ইতিহাসের একটি নির্ণায়ক যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত। এটি মহারাণা প্রতাপ এবং মুঘল সেনাপতি রাজা মানসিংহের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক দলিলপত্রে এই যুদ্ধকে নির্ণায়ক বলে উল্লেখ করা হয়নি, যদিও মুঘলরা যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ পেয়েছিল। কিন্তু মহারাণা প্রতাপের সেনা পিছনে সরে গিয়ে আবার সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী বছরগুলিতে তারা মেওয়ারের বেশিরভাগ অংশে পুনরায় দখল করে নেয়।
ইতিহাসবিদদের মতামত এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিভক্ত। কেউ কেউ এটাকে মুঘলদের আংশিক বিজয় মনে করেন, আবার অনেক ইতিহাসবিদ এটাকে প্রতাপের নৈতিক বিজয় বলে মনে করেন।
দিয়া কুমারীর এই বক্তব্য শুধুমাত্র ইতিহাসকে নিয়ে নতুন আলোচনার সূচনা করে না, এটি বিজেপির সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং ঐতিহাসিক পুনর্লেখন রণনীতির অংশ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এই পদক্ষেপ এইসব প্রচেষ্টার একটি অংশ, যার অন্তর্গত ঐতিহাসিক তথ্যের পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং অনেক পুরানো বিবরণকে 'সংশোধন' করার দিকে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।