বকরিদে নিজের ‘কুরবানি’ দিয়ে চমক ও শোকের সংমিশ্রণ

বকরিদে নিজের ‘কুরবানি’ দিয়ে চমক ও শোকের সংমিশ্রণ
সর্বশেষ আপডেট: 08-06-2025

দেওরিয়া জেলার গৌরীবাজার থানা এলাকার উধোপুর গ্রামে বকরিদ উপলক্ষে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সমগ্র এলাকাকে তীব্রভাবে আন্দোলিত করেছে। এখানে এক বৃদ্ধ ব্যক্তি বকরিদের নামাজ আদায় করার পর নিজেরই কোরবানি দিয়েছেন।

দেওরিয়া: উত্তর প্রদেশের দেওরিয়া জেলার গৌরীবাজার থানা এলাকার উধোপুর গ্রামে বকরিদের দিন একটি চমকপ্রদ ও আবেগঘন ঘটনা সামনে এসেছে। একজন ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ বকরিদের উপলক্ষে, যখন মানুষ ছাগলের কোরবানি দিচ্ছিল, নিজের জীবন দিয়ে ‘নিজের কোরবানি’ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই বিরল ও হৃদয়বিদারক ঘটনা শুধুমাত্র গ্রামবাসীদেরই নয়, সমগ্র এলাকায় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

গ্রাম উধোপুরের বাসিন্দা ইশ মোহাম্মদ পুত্র স্ব. মোহাম্মদ বর্ষাতী আনসারী, যিনি সর্বদা ধার্মিক প্রকৃতির ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন, প্রতি বছর বকরিদের আগে আম্বেডকরনগরের কিছোছা শরীফে অবস্থিত বিখ্যাত দরগাহ সুলতান সৈয়দ মকদুম আশরাফ শাহ মাজারে যাত্রা করতেন। এ বছরও তিনি শুক্রবার দুপুরে দরগাহ থেকে ফিরে এসেছিলেন এবং পরের দিন, শনিবার বকরিদের দিন সকালের নামাজ আদায় করেছিলেন। কিন্তু তারপর যা ঘটেছে, তা সকলকে অবাক করে দিয়েছে।

একা পর্দায় নিজের 'কোরবানি'

নামাজ পড়ার পর ইশ মোহাম্মদ তার বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন এবং প্রতিদিনের মতো তার ছোট ঘরে বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন। প্রায় এক ঘন্টা পর তার ঘর থেকে কাতরার শব্দ আসতে শুরু করে। যখন তার স্ত্রী হাজরা খাতুন ভিতরে গেছেন, তখন তিনি দেখেছেন ইশ মোহাম্মদের গলা থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে। তার হাতে ছিল সেই ছুরি, যার দ্বারা ছাগল হালাল করা হয়। এই দৃশ্য দেখে স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং চিৎকার শুরু হয়।

গ্রামবাসীরা অবিলম্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেয়। গুরুতর অবস্থায় ইশ মোহাম্মদকে প্রথমে দেওরিয়া মেডিকেল কলেজ এবং পরে গোরখপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

চমকপ্রদ আত্মহত্যার চিঠি

এই দুঃখজনক ঘটনার প্রকৃত কারণ তখন সামনে আসে যখন পুলিশ ইশ মোহাম্মদের লেখা একটি চিঠি পায়। চিঠিতে তিনি লিখেছেন: মানুষ ছাগলকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করে, এবং তারপর কোরবানির জন্য হালাল করে। সেও একটা প্রাণী। কোরবানি করা উচিত কিন্তু আমি আজ নিজের কোরবানি আল্লাহর রাসুলের নামে করছি। আমার মাটি শান্তিতে দাও, ঘাবড়িও না। কেউ আমাকে হত্যা করছে না।

এই চিঠি থেকে স্পষ্ট হয় যে ইশ মোহাম্মদ এই পদক্ষেপ ধর্মীয় আস্থা ও গভীর ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ফলে নিয়েছিলেন। পুলিশ এটিকে ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসে প্রেরিত আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে, কিন্তু গ্রামবাসীরা এটিকে তার ‘অত্যধিক ভক্তি’র চরম রূপ হিসেবে বিবেচনা করছেন।

পরিবারে শোক

ইশ মোহাম্মদ তার পিছনে স্ত্রী হাজরা খাতুন ছাড়াও তিন ছেলে আহমদ আনসারী, মোহাম্মদ ফয়সাল ও তাজ মোহাম্মদ এবং বউদের রেখে গেছেন। তাদের পরিবার জানিয়েছে যে, তিনি শান্ত স্বভাবের এবং অত্যন্ত ধার্মিক প্রকৃতির ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রায়শই একান্তে ইবাদত করতেন এবং কোনও প্রাণীকে ক্ষতি করার থেকে বিরত থাকতেন। এই অনুভূতিই সম্ভবত তাকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বাধ্য করেছিল।

গৌরীবাজার থানার অধ্যক্ষ নন্দা প্রসাদ জানিয়েছেন, ঘটনার গভীর তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে যে, ইশ মোহাম্মদ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি তার পরিবারকে আগেই চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছিলেন। পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষ্য গ্রহণ করছে।

Leave a comment