পতঞ্জলি: একটি FMCG কোম্পানি থেকে আত্মনির্ভর ভারতের অগ্রদূত

পতঞ্জলি: একটি FMCG কোম্পানি থেকে আত্মনির্ভর ভারতের অগ্রদূত
সর্বশেষ আপডেট: 17-06-2025

আয়ুর্বেদিক ও হার্বাল পণ্যের জন্য বিখ্যাত পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ এখন শুধুমাত্র একটি FMCG (ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস) কোম্পানি হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই।

দেশে স্বদেশী আন্দোলন এবং আত্মনির্ভর ভারতের भावনাকে সুদৃঢ় করার কাজে নিয়োজিত পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ এখন আর শুধুমাত্র একটি FMCG ব্র্যান্ড নয়, বরং এটি একটি বহুমুখী সংস্থায় পরিণত হয়েছে। আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক পণ্যের সাথে যাত্রা শুরু করে পতঞ্জলি আজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জৈব কৃষি ও আর্থিক সেবা—এইসব ক্ষেত্রেও নিজের শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি করেছে। এটি শুধু ব্যবসার সম্প্রসারণ নয়, বরং একটি দর্শনিক আন্দোলন, যার উদ্দেশ্য ভারতীয় জীবনধারাকে পুনরুজ্জীবিত করা।

সস্তা ও রাসায়নিক-মুক্ত পণ্যের সাথে শুরু

ভারতীয় বাজারে বিদেশি কোম্পানির পণ্যের আধিপত্যের সময় পতঞ্জলির ভিত্তি স্থাপিত হয়। সেই সময় পতঞ্জলি তাদের রাসায়নিক-মুক্ত ও সস্তা পণ্য দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শুরু হয় ঘি, মধু, চ্যবনপ্রাশ, টুথপেস্ট, সাবান ও শ্যাম্পু—এই ধরণের দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্য দিয়ে, যা ভারতীয় আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হত।

এই পণ্যগুলি শুধুমাত্র মানুষের অর্থনৈতিক বোঝা কমিয়েছে তাই নয়, তাদের ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথেও যুক্ত করেছে। এই কারণেই কিছু বছরের মধ্যে পতঞ্জলি হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, কোলগেট ও ডাবরের মতো বৃহৎ ব্র্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন পরিচয়

 

পতঞ্জলি শিক্ষাকে শুধুমাত্র পাঠ্যক্রমে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং ভারতীয় সংস্কৃতি, যোগ, আয়ুর্বেদ ও নৈতিক মূল্যবোধকে শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। হরিদ্বারস্থিত পতঞ্জলি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আচার্যকুলম স্কুলগুলির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠান আধুনিক শিক্ষা ও ভারতীয় ঐতিহ্যের এক অসাধারণ মেলবন্ধন উপস্থাপন করছে।

এখানে ছাত্রছাত্রীরা শুধুমাত্র বিজ্ঞান, গণিত ও প্রযুক্তিই পড়ে না, বরং তাদের জীবনমূল্যবোধ, যোগ ও স্বদেশী চিন্তাধারার শিক্ষাও দেওয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি গুরু-শিষ্য পরম্পরাকেও বজায় রাখা হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবায় বর্ধিত অবদান

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পতঞ্জলির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কোম্পানির মতে, তাদের দেশজুড়ে ৩৪ টি ওয়েলনেস সেন্টার রয়েছে, যেখানে যোগ, আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসার মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এই সেন্টারগুলি গ্রামীণ ও দূরবর্তী এলাকায়ও সক্রিয়, যেখানে সাধারণত আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা সীমিত।

এই ওয়েলনেস সেন্টারগুলিতে বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হয়। এছাড়াও পতঞ্জলি যোগপীঠের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষকে যোগ শিক্ষক ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যার ফলে একটি নতুন স্বাস্থ্য বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপিত হচ্ছে।

জৈব কৃষিকে নতুন দিকনির্দেশনা

কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করার দিকে পতঞ্জলির বায়ো রিসার্চ ইন্সটিটিউট (PBRI) অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের জৈব কৃষির জন্য প্রশিক্ষণ, বীজ, সার এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য দেওয়া হয়।

পতঞ্জলি মনে করে যে দেশের কৃষি অর্থনীতি তখনই শক্তিশালী হতে পারে যখন কৃষকরা রাসায়নিকমুক্ত কৃষি গ্রহণ করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করবে। এই সাথে কোম্পানি কৃষকদের কাছ থেকে জৈব পণ্য কিনে তাদের বাজার সরবরাহের কাজও করছে, যার ফলে তাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আর্থিক সেবায়ও পদক্ষেপ

ব্যবসার সম্প্রসারণের দিকে পতঞ্জলি আর্থিক সেবায়ও নিজের উপস্থিতি তৈরি করেছে। ম্যাগমা জেনারেল ইন্সুরেন্সের মতো কোম্পানিতে অংশীদারিত্ব কিনে পতঞ্জলি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা একটি সম্পূর্ণ ভারতীয় ব্যবসায়িক ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে চায়। এর পিছনে উদ্দেশ্য হলো যাতে গ্রাহকরা শুধুমাত্র দেশীয় পণ্যই না পায়, বরং তারা বীমা ও বিনিয়োগের মতো সেবাও স্বদেশী বিকল্পের মাধ্যমে পেতে পারে।

আত্মনির্ভর ভারতের দিকে অগ্রসর

পতঞ্জলি দাবি করে যে তাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র লাভ করা নয়, বরং ভারতকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা। এর জন্য কোম্পানি ছোট ও মাঝারি শিল্পের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যার ফলে কুটির শিল্পের উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়াও লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়ে কোম্পানি সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়েও অবদান রাখছে।

পতঞ্জলির প্রতিষ্ঠাতা বাবা রামদেব ও আচার্য বলকৃষ্ণ বারবার বলেছেন যে তাদের স্বপ্ন এমন একটি ভারত গঠন করা যা প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বদেশী বিকল্পের উপর নির্ভরশীল হবে।

আধুনিক প্রযুক্তি ও শক্তিশালী বিতরণ নেটওয়ার্ক

একসময় পতঞ্জলিকে শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী দোকানে সীমাবদ্ধ মনে করা হত। কিন্তু এখন কোম্পানি তাদের বিতরণ নেটওয়ার্ককে আধুনিকায়ন করেছে। পতঞ্জলির পণ্য এখন অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, Jiomart-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও পাওয়া যায়। এছাড়াও দেশজুড়ে হাজার হাজার পতঞ্জলি আরোগ্য কেন্দ্র ও দোকান চালু আছে, যা গ্রাহকদের সরাসরি পণ্য সরবরাহ করে।

Leave a comment