শেয়ার বাজার সম্ভাবনা ও ঝুঁকির এক মঞ্চ, যেখানে বড় বড় বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণীও অনেক সময় ভুল প্রমাণিত হয়, যখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের সামান্য বুদ্ধি ও ধৈর্য্যের বলে ভালো লাভ করতে পারেন।
নয়াদিল্লি: শেয়ার বাজারে যখনই নির্ভরযোগ্য ও দৃঢ় রিটার্ন প্রদানকারী শেয়ারের কথা আসে, তখন কিছু নাম বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশেষ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এই রকমই একটি নাম হল এসজেএস এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড। গত দুই বছরে এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের অসাধারণ রিটার্ন দিয়েছে এবং এখন আবারও এই শেয়ার দ্রুত গতিতে উন্নতির দিকে এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
মাত্র দুই বছরে ১২০ শতাংশের লাফ
যদি আমরা গত দুই বছরের কথা বলি, তাহলে এসজেএস এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১২০ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। অর্থাৎ, যদি কোনও বিনিয়োগকারী দুই বছর আগে এই কোম্পানিতে এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে থাকতেন, তাহলে আজ তার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকার কাছাকাছি হত। এইভাবে, এই শেয়ার নিজের দমে মাল্টিব্যাগার প্রমাণিত হয়েছে।
গত এক মাসে দৃশ্যমান শক্তি
সম্প্রতিও এই শেয়ার তার পারফরম্যান্স দিয়ে বাজারকে চমকে দিয়েছে। গত এক মাসের কথা বলা যাক, এই সময়ের মধ্যে এই শেয়ারের দামে প্রায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এই বৃদ্ধি কোম্পানির শক্তিশালী আর্থিক অবস্থা, কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং সম্ভাব্য সম্প্রসারণ পরিকল্পনার ফল বলে মনে করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের বৃদ্ধির দিকে বাজারের দৃষ্টি
আর্থিক বিশেষজ্ঞ ও ব্রোকারেজ হাউসগুলি মনে করে যে এসজেএস এন্টারপ্রাইজেসের ভবিষ্যতেও চমৎকার বৃদ্ধির সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০২৪-২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত কোম্পানির আয় বার্ষিক গড়ে ১৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও, কোম্পানির লাভ প্রায় ২০.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, যা কোনও বিনিয়োগকারীর জন্য অত্যন্ত উৎসাহজনক লক্ষণ।
ব্রোকারেজ ফার্ম এলারার মতামত
ব্রোকারেজ ফার্ম এলারা সিকিউরিটিজ এসজেএস-এর প্রতি তাদের আস্থা প্রকাশ করে এটিকে 'বাই' রেটিং দিয়েছে। ফার্মের মতে, কোম্পানির কৌশলগত অধিগ্রহণ নীতি এবং শক্তিশালী বাজার দখলের কারণে এই শেয়ার দীর্ঘমেয়াদী ভালো রিটার্ন দিতে থাকবে। এলারা এর জন্য টার্গেট প্রাইস ১৭১০ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা বর্তমান মূল্য থেকে অনেক বেশি।
ডিজিটাল ও অটো সেক্টরে কোম্পানির ক্রমবর্ধমান দখল
এসজেএস এন্টারপ্রাইজেস মূলত ডেকাল, ক্রোম এবং অপটিক্যাল ইন্টারফেস এর মতো পণ্য তৈরি করে, যা মূলত অটোমোবাইল, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স এবং অ্যাপ্লায়েন্সেস সেক্টরে ব্যবহৃত হয়। এই ক্ষেত্রগুলিতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে কোম্পানি ক্রমাগত নতুন অর্ডার পাচ্ছে। এটাই কারণ যে আগামী বছরগুলিতে কোম্পানির বাজার ভাগ এবং লাভ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ কৌশল
কোম্পানি তার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির দিকেও দ্রুত কাজ করছে। জানা গেছে, ২০২৬ সালের অর্থবর্ষে কোম্পানি প্রায় ১৬০ কোটি টাকা মূলধন বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এই বিনিয়োগের উদ্দেশ্য হল নতুন উৎপাদন ইউনিট স্থাপন এবং বর্তমান অবকাঠামো উন্নত করা। এর ফলে কোম্পানির প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
আর্থিক সূচক থেকে দৃশ্যমান শক্তি
যদি আমরা এসজেএস-এর ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিসের কথা বলি, তাহলে ব্রোকারেজ হাউসের অনুমান অনুযায়ী, ২০২৮ সালের অর্থবর্ষের মধ্যে কোম্পানির রিটার্ন অন ক্যাপিটাল এমপ্লয়েড (ROCE) ২৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এছাড়াও, রিটার্ন অন ইকুইটি (ROE) ১৯.৪ শতাংশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তথ্যগুলি কোম্পানির উন্নত ব্যবস্থাপনা, আয়-সঞ্চালন এবং লাভ অর্জনের ক্ষমতাকে দেখায়।
ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ
শেয়ার বাজারে অনেক সময় ছোট বিনিয়োগকারীরা নিজেদেরকে অস্বস্তিকর মনে করেন যে কোথায় বিনিয়োগ করবেন এবং কোন কোম্পানির উপর আস্থা রাখবেন। এসজেএস এন্টারপ্রাইজেসের মতো শেয়ার এই ধরণের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি চমৎকার উদাহরণ হতে পারে। এই শেয়ার একদিকে স্থায়িত্বের অনুভূতি দেয়, অন্যদিকে মাল্টিব্যাগার হওয়ার ক্ষমতাও রাখে।
বিনিয়োগের আগে এই বিষয়গুলির দিকে নজর দিন
যদিও এসজেএস-এর বৃদ্ধি এবং পারফরম্যান্স দেখে এতে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা হওয়া স্বাভাবিক, তবে বিনিয়োগকারীদের মনে রাখতে হবে যে শেয়ার বাজারে উত্থান-পতন চলতে থাকে। তাই কোনও শেয়ারে বিনিয়োগ করার আগে তার সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি। বিনিয়োগ করার সময় আপনার আর্থিক পরামর্শদাতার মতামত অবশ্যই নিন এবং পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য বজায় রাখুন।