সামাজিক মাধ্যমে আয়ের উপর নতুন কর বিধি: আপনার যা জানা দরকার

সামাজিক মাধ্যমে আয়ের উপর নতুন কর বিধি: আপনার যা জানা দরকার
সর্বশেষ আপডেট: 17 ঘণ্টা আগে

বর্তমানে ভারতে সামাজিক মাধ্যম প্রভাবশালীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ইনস্টাগ্রাম রিলস, ইউটিউব ভিডিও এবং ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আজ হাজার হাজার মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছেন। আপনি যদি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম থেকে আয় করেন, তবে এই খবর আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে ইনস্টাগ্রাম রিলস, ইউটিউব ভিডিও এবং ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে উপার্জন করা মানুষের সংখ্যা ভারতে দ্রুত বাড়ছে। সামাজিক মাধ্যম এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি বড় পেশাদারী বিকল্প হয়ে উঠেছে। তবে রিলস তৈরি করে বা ব্র্যান্ড ডিল থেকে আয় করলে, আপনাকে মনে রাখতে হবে যে সরকার সামাজিক মাধ্যম প্রভাবশালীদের উপর আয়কর সংক্রান্ত বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। যদি আপনি এই আয়ের সঠিক হিসাব আয়কর রিটার্নে (ITR) না দেন, তাহলে বড় অঙ্কের জরিমানা এবং আইনি পদক্ষেপের সম্মুখীন হতে পারেন।

কোন কোন প্রভাবশালী করের আওতায় পড়েন

যারা ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, ফেসবুক বা অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে আয় করেন, তা রিলসের মাধ্যমে হোক বা ব্র্যান্ড প্রচার, অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক বা ইউটিউব অ্যাডসেন্স থেকে হোক, সকলেরই কর দিতে হয়। এমনকি যদি আপনাকে কোনো উপহার, গ্যাজেট বা হোটেলে থাকার মতো সুবিধা পাওয়া যায়, তবে সেটিও আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং ITR-এ তার মূল্য উল্লেখ করতে হবে।

50 হাজার রুপি থেকে বেশি আয় হলে হিসাব দিতে হবে

যদি আপনার সামাজিক মাধ্যম থেকে বছরে 50,000 রুপি বা তার বেশি আয় হয়, তাহলে এটিকে ‘পেশাদারী বা ব্যবসায়িক আয়’ হিসেবে আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। কর বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সীমা অতিক্রম করলেই নিবন্ধন এবং কর দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এর মধ্যে নগদ টাকা, উপহার, ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিনামূল্যে ভ্রমণ বা ভাউচার – সবকিছু অন্তর্ভুক্ত।

আয়ের তথ্য লুকানোর চেষ্টা করলে নোটিশ আসতে পারে

কর বিভাগ এই বছর ডিজিটাল উপার্জনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের উপর নজর রাখছে। যারা সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ রুপি উপার্জন করেছেন কিন্তু রিটার্ন দাখিল করেননি বা সম্পূর্ণ তথ্য দেননি, তাদের নোটিশ পাঠানো হতে পারে। এছাড়া, কর ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেলে 200 শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হতে পারে।

কোন কোন ট্যাক্স নিয়ম প্রভাবশালীদের প্রযোজ্য

কর বিভাগ সামাজিক মাধ্যম কন্টেন্ট নির্মাতাদের স্ব-কর্মসংস্থানকারী বা ব্যবসায়িক পেশাদার হিসেবে গণ্য করে। এই কারণে নিম্নলিখিত ট্যাক্স নিয়মগুলি প্রযোজ্য:

  • ধারা 44ADA বা 44AB: একজন পেশাজীবীর ক্ষেত্রে 50 লক্ষ রুপি পর্যন্ত মোট আয়ের উপর সরলীকৃত নিয়ম অনুযায়ী 50% লাভ হিসেবে গণ্য করে কর আরোপ করা যেতে পারে।
  • ধারা 194R: যদি কোনো ব্র্যান্ড বা কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো প্রভাবশালীর কাছে 20,000 রুপি বা তার বেশি মূল্যমানের উপহার দেওয়া হয়, তাহলে কোম্পানিকে 10% TDS (ট্রেজারি ডিডুকশন) কাটতে হবে।
  • ধারা 194J: পেশাদারী সেবার বিপরীতে অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে 10% TDS কাটা হয়। যেমন - ব্র্যান্ড ডিল, প্রচার ফি ইত্যাদি।
  • GST-এর दायিত্ব: যদি আপনার বার্ষিক আয় 20 লক্ষ রুপি থেকে বেশি হয়, তাহলে আপনাকে GST নিবন্ধন করতে হবে এবং প্রতিটি সেবার উপর 18% GST চার্জ করতে হবে।

ITR ফাইল করার সুবিধা

  • আইনি সুরক্ষা: সময় মতো এবং সঠিকভাবে রিটার্ন দাখিল করলে কর বিভাগের নোটিশ থেকে বাঁচা যায়।
  • ঋণ পেতে সুবিধা: ITR দাখিল করলে আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল হয়, যা হোম লোন, কার লোন ইত্যাদি সহজে পেতে সাহায্য করে।
  • বিদেশ ভ্রমণ সহজ: ভিসা আবেদনের সময় পূর্ববর্তী ITR-এর একটি কপি চাওয়া হতে পারে।
  • আর্থিক স্বচ্ছতা: একটি সুসংগঠিত আর্থিক রেকর্ড ভবিষ্যতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং ব্যবসায় সাহায্য করে।

কীভাবে ট্যাক্স হিসাব করবেন

সামাজিক মাধ্যম থেকে আয় করলে প্রতিটি ধরনের আয়ের হিসাব রাখা জরুরি, যেমন - ব্র্যান্ড ডিল থেকে পাওয়া টাকা, অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কের মাধ্যমে কমিশন, ইউটিউব থেকে বিজ্ঞাপনের আয়, বিনামূল্যে ভ্রমণ বা গ্যাজেট, এবং স্পন্সরড পোস্টও।

আপনি আপনার খরচ যেমন - ইন্টারনেট, ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, সম্পাদনা সফটওয়্যার ইত্যাদির হিসাবও ‘ব্যবসায়িক খরচ’ হিসেবে কমাতে পারেন। ট্যাক্স সেই অবশিষ্ট লাভের উপর দিতে হয়।

নতুন এবং পুরনো ট্যাক্স নিয়ম: কোনটি বেছে নেবেন

প্রভাবশালীদের জন্য দুটি ট্যাক্স বিকল্প রয়েছে:

  • পুরনো ট্যাক্স নিয়ম: যেখানে বিভিন্ন ছাড় এবং কর্তনের সুবিধা নেওয়া যেতে পারে, যেমন ধারা 80C, 80D ইত্যাদি।
  • নতুন ট্যাক্স নিয়ম: যেখানে করের হার কম, কিন্তু কোনো ছাড় পাওয়া যায় না।

আপনার আয়, খরচ এবং বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে একজন কর পরামর্শকের সঙ্গে পরামর্শ করে সঠিক বিকল্পটি বেছে নেওয়া উচিত।

creciente conciencia, creciente responsabilidad

সরকার এবং আয়কর বিভাগ এখন ডিজিটাল পেশাদারদের কাছ থেকেও স্বচ্ছতার আশা করছে। ডিজিটাল উপার্জনের সুযোগ যত বেড়েছে, সেই অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করাও জরুরি। তাই আপনি যদি একজন ইউটিউবার, ইনস্টাগ্রামার, ফেসবুক ক্রিয়েটর বা ব্লগার হন এবং এই মাধ্যম থেকে আয় করেন, তাহলে ট্যাক্স নিয়মকানুন মেনে চলা আপনার এবং আপনার ব্র্যান্ডের সুনামের জন্য অপরিহার্য।

Leave a comment