ট্যাটু ও হেপাটাইটিস সি-র ঝুঁকি: সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ট্যাটু ও হেপাটাইটিস সি-র ঝুঁকি: সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সর্বশেষ আপডেট: 29-04-2025

ট্যাটু করানোর ফলে হেপাটাইটিস সি-র ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি সুই বা যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এটি লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলি অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।

আজকাল ট্যাটু করানো একটি ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, ট্যাটু করানোর সময় যদি সঠিক সতর্কতা অবলম্বন না করা হয় তাহলে আপনি হেপাটাইটিস সি (Hepatitis C) যে রকম গুরুতর সংক্রমণের শিকার হতে পারেন? প্রকৃতপক্ষে, ট্যাটু করানোর সময় ত্বকের অভ্যন্তরীণ স্তরে (Dermis Layer) स्याही ইনজেক্ট করা হয়। যদি সুই বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি পরিষ্কার না হয় বা পুনরায় ব্যবহার করা হয়, তাহলে সংক্রমিত রক্তের মাধ্যমে বিপজ্জনক রোগ ছড়াতে পারে।

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (HCV) কি?

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (HCV) এমন একটি ভাইরাস যা মানুষের রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়ায় এবং সরাসরি লিভার (যকৃত) -কে প্রভাবিত করে। যখন এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে, তখন ধীরে ধীরে লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে। যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয় তাহলে এই রোগ লিভার সিরোসিস (লিভারে ঘা তৈরি), লিভার ক্যান্সার এবং এমনকি লিভার ফেইলিওর যে রকম গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস সাধারণত তখন ছড়ায় যখন কেউ সংক্রমিত রক্তের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। ট্যাটু করানোর সময় ব্যবহৃত সুই, ইঙ্ক বা যন্ত্রপাতি যদি সঠিকভাবে পরিষ্কার বা স্যানিটাইজ না করা হয়, তাহলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই ট্যাটু করানোর সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

শুধুমাত্র ট্যাটু করানোর ফলেই কি হেপাটাইটিস সি হয়?

শুধুমাত্র ট্যাটু করানোর ফলেই হেপাটাইটিস সি হয় না। এই ভাইরাস আরও অনেক উপায়ে ছড়াতে পারে। যদি আপনি অন্য কারও ব্যবহৃত রেজার বা টুথব্রাশ ব্যবহার করেন, তাহলেও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও, যদি সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক করা হয়, তাহলেও হেপাটাইটিস সি ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে, যদিও এই পদ্ধতিতে সংক্রমণের ঝুঁকি কম।

ট্যাটু করানোর সময় ঝুঁকি বেশি হয় কারণ এই প্রক্রিয়ায় সুইয়ের মাধ্যমে ত্বকের ভিতরে স्याही ঢোকানো হয়। যদি ব্যবহৃত সুই বা যন্ত্রপাতি পরিষ্কার না থাকে বা আগে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির উপর ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই ট্যাটু করানোর সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তার দিকে পুরোপুরি নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

হেপাটাইটিস সি-র ঝুঁকির কারণগুলি কি?

হেপাটাইটিস সি একটি গুরুতর ভাইরাল সংক্রমণ, যা তখন ছড়ায় যখন কোনও সুস্থ ব্যক্তির রক্ত সরাসরি কোনও সংক্রমিত রক্তের সাথে যোগাযোগ করে। এর ছড়িয়ে পড়ার অনেক প্রধান কারণ রয়েছে:

  1. ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবন: যখন লোকেরা মাদকাসক্তির জন্য সুই এবং সিরিঞ্জ পরস্পরের সাথে ভাগ করে নেয়, তখন ভাইরাস সহজেই একজন ব্যক্তি থেকে অন্য জনে ছড়াতে পারে। এটি হেপাটাইটিস সি ছড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ।
  2. অনিরাপদ ট্যাটু এবং পিয়ার্সিং: যদি ট্যাটু বা পিয়ার্সিং করানোর সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর না দেওয়া হয়, যেমন, গাণ্ডু সুই ব্যবহার করা হয়, তাহলেও এর ফলে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।
  3. রক্ত সঞ্চালন (ব্লাড ট্রান্সফিউশন): ১৯৯২ সালের আগে রক্তের পরীক্ষা করা হতো না। সেই সময় সংক্রমিত রক্ত সঞ্চালনের ফলে অনেক লোক হেপাটাইটিস সি দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিল। আজকাল রক্ত সঞ্চালনের আগে কঠোর পরীক্ষা করা হয়।
  4. হেমোডায়ালাইসিস: যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস করছে, তাদের মধ্যেও হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় এবং যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

ট্যাটু করানোর সময় এই জরুরি বিষয়গুলির দিকে নজর রাখুন

আজকাল ট্যাটু করানো একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে, কিন্তু ট্যাটু করানোর সময় কিছু বিশেষ বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া জরুরি যাতে আপনি নিরাপদ থাকেন এবং কোনও সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকেন।

  • লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্যাটু আর্টিস্টের কাছ থেকে ট্যাটু করান: ট্যাটু করানোর আগে সবসময় লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞ ট্যাটু আর্টিস্টের কাছ থেকেই ট্যাটু করান। এই ধরণের আর্টিস্ট জানে ট্যাটু তৈরির ক্ষেত্রে কোন সতর্কতাগুলি জরুরি এবং এটি আপনার ঝুঁকি কমিয়ে দেবে।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন: ট্যাটু করানোর আগে নিশ্চিত হোন যে ট্যাটু তৈরির স্থান পুরোপুরি পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ। সকল যন্ত্রপাতি, যেমন সুই, রঞ্জক এবং মেশিন, স্টেরিলাইজ করা হয়েছে। এটি সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে।
  • নতুন এবং নিরাপদ সুই ব্যবহার করুন: ট্যাটু করানোর সময় নতুন সুই এবং নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন। সুইগুলি বারবার ব্যবহার করলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, তাই এটি জরুরি যে আর্টিস্ট সিল করা প্যাকেজ থেকেই সুই বের করেছে।
  • ট্যাটু করানোর পর যত্ন নেওয়া জরুরি: ট্যাটু করানোর পর তার যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ট্যাটু স্থানে কোনও ধরণের চুলকানি বা শোথ থেকে বাঁচার জন্য ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সঠিকভাবে সারার জন্য ছেড়ে দিন। এছাড়াও, ট্যাটুতে প্যাচ অতি শীঘ্র খুলবেন না, যাতে তার সুরক্ষা বজায় থাকে।
  • সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন: যদি ট্যাটু করানোর পর আপনার শোথ, ব্যথা বা পুঁজ যে রকম কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। এটি না করলে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

হেপাটাইটিস সি-র লক্ষণ

হেপাটাইটিস সি (HCV) সংক্রমণ প্রথমদিকে লক্ষণহীন থাকতে পারে, যার ফলে এটিকে শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। তবে, কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি এই রোগের ধারণা পেতে পারেন:

  • থকান এবং দুর্বলতা – অতিরিক্ত থকান অনুভব করা।
  • পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা – শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা।
  • পেটে ব্যথা এবং বমি বমি ভাব – পেটে অস্বস্তি এবং বমি করার ইচ্ছা।
  • ভোক কমে যাওয়া – খাবারের প্রতি ইচ্ছা কমে যাওয়া।
  • গাঢ় রঙের প্রস্রাব – প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হওয়া।
  • জ্বর – হালকা জ্বর আসা।
  • ত্বক এবং চোখের হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস) – ত্বক এবং চোখে হলুদাভাব দেখা দেওয়া, যাকে জন্ডিস বলা হয়।

কখন চিকিৎসকের সাথে দেখা করা উচিত?

যদি আপনি সম্প্রতি ট্যাটু করিয়ে থাকেন এবং আপনার থকান, পেটে ব্যথা, জ্বর বা ত্বকে হলুদাভাব যে রকম লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। HCV পরীক্ষা করান, যাতে সংক্রমণের সময়মতো জানা যায় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে গুরুতর সমস্যা থেকে বাঁচা যায়।

Leave a comment