Starlink ভারতে ইন্টারনেট সেবা চালু করার অনুমতির আশয়পত্র পেয়েছে, তবে সেবা শুরু করার আগে কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে।
প্রযুক্তি: এলন মাস্কের কোম্পানি Starlink ভারতে তার উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা চালু করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কাছাকাছি চলে এসেছে। ভারত সরকার Starlink কে LOI (Letter of Intent) অর্থাৎ ‘আশয়পত্র’ জারি করেছে। এই পত্রের অর্থ হল Starlink এখন ভারতে ইন্টারনেট সেবা চালু করার নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। তবে এর জন্য কোম্পানিকে কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে চলতে হবে, যার মধ্যে ডেটা সুরক্ষা এবং আইনি তদারকি অন্তর্ভুক্ত।
Starlink কি এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
Starlink, এলন মাস্কের কোম্পানি SpaceX এর একটি ইন্টারনেট সেবা, যা উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করে। এই ছোট ছোট উপগ্রহ পৃথিবীর চারপাশে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় ঘুরতে থাকে এবং মাটিতে স্থাপিত ডিভাইস (যাকে ডিশ বলা হয়) এর সাথে যুক্ত হয়ে ইন্টারনেট সিগন্যাল প্রেরণ করে।
Starlink এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি চালানোর জন্য তার, টাওয়ার বা ব্রডব্যান্ড সংযোগের প্রয়োজন হয় না। তাই এটি এমন এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ফাইবার ব্রডব্যান্ড পৌঁছানো কঠিন — যেমন পাহাড়ি গ্রাম, বনভূমি, মরুভূমি বা সীমান্তবর্তী এলাকা।
এই সেবা হাই-স্পিড ইন্টারনেট সরবরাহ করে, যার ফলে আপনি সহজেই ভিডিও কল, অনলাইন ক্লাস, মুভি স্ট্রিমিং এবং অফিসের কাজ করতে পারেন। Starlink এর লক্ষ্য হল বিশ্বের প্রতিটি কোণে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পৌঁছানো।
ভারতে Starlink এর প্রবেশ কেন বিশেষ?
ভারতে আজও অনেক গ্রাম এবং দূরবর্তী এলাকা রয়েছে যেখানে ভালো ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। এমনকি ছোট ছোট শহরেও নেটওয়ার্কের সমস্যা সাধারণ ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে Starlink এর মতো কোম্পানি একটি নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে। এই কোম্পানি ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য কোনও টাওয়ার বা ফাইবার কেবলের উপর নির্ভর করে না। এর পরিবর্তে এটি সরাসরি উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করে, যার ফলে দেশের যেকোনো কোণে হাই-স্পিড ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে। এটি বিশেষ করে এমন এলাকার জন্য উপকারী যেখানে এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট হয় পৌঁছেইনি অথবা খুব ধীরগতির।
Starlink এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি জটিল অবকাঠামো ছাড়াই কাজ করতে পারে। অর্থাৎ যেখানে মোবাইল টাওয়ার বা কেবল বিছানো কঠিন, সেখানেও এটি সহজেই ইন্টারনেট সেবা শুরু করতে পারে। এতে ভারতের ডিজিটাল মিশনকেও শক্তি মিলবে এবং শিশুদের অনলাইন পড়াশোনা, কৃষকদের আবহাওয়া এবং বাজারের তথ্য এবং ছোট ব্যবসায়ীদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার সম্ভব হবে। यही কারণে ভারতে Starlink এর প্রবেশকে অত্যন্ত বিশেষ এবং প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে।
কি Starlink ভারতে পূর্ণ অনুমোদন পেয়েছে?
Starlink এখনও পর্যন্ত ভারত সরকারের কাছ থেকে পূর্ণ অনুমোদন পায়নি, তবে এটি LOI অর্থাৎ "Letter of Intent" অবশ্যই পেয়েছে। এর অর্থ হল সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা কোম্পানিকে ভারতে উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা চালু করার অনুমতি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এর জন্য Starlink কে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
এছাড়াও, Starlink কে ভারতে কাজ শুরু করার জন্য GMPCS (Global Mobile Personal Communication by Satellite) লাইসেন্স নেওয়া প্রয়োজন। এটি একটি বিশেষ ধরণের লাইসেন্স যা উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলিকে দেওয়া হয়। আশা করা হচ্ছে এই লাইসেন্সটিও কোম্পানি খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবে।
ভারতে Starlink কে কোন কোন শর্ত মেনে চলতে হবে?
ভারত সরকার Starlink কে অনেক সুরক্ষা এবং তদারকি সম্পর্কিত শর্ত জানিয়েছে।
- ডেটা ভারতেই সংরক্ষণ করতে হবে: Starlink কে নিশ্চিত করতে হবে যে ভারতের ব্যবহারকারীদের সমস্ত ডেটা দেশের ভিতরেই সংরক্ষণ করা হবে। এর অর্থ হল ব্যবহারকারীদের তথ্য যেমন ব্রাউজিং ইতিহাস, অবস্থান বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত ডেটা দেশের বাইরে যাবে না।
- সরকারি আদেশে ওয়েবসাইট ব্লক করতে হবে: যদি ভারত সরকার কোনও ওয়েবসাইট ব্লক করার আদেশ দেয়, তবে Starlink কে তা অবিলম্বে ব্লক করতে হবে। এছাড়াও, যদি কোনও তদন্ত সংস্থাকে কোনও সন্দেহজনক ব্যক্তি বা কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রয়োজন হয়, তবে কোম্পানিকে তাও দিতে হবে।
- সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি: Starlink কে ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে 50 কিলোমিটারের ব্যাসার্ধকে বিশেষ তদারকি অঞ্চল হিসেবে রাখতে হবে। এর অর্থ হল সেই এলাকায় নেটওয়ার্কের তদারকি এবং সুরক্ষা আরও শক্তিশালী হবে।
- ভুল ব্যবহারে নেটওয়ার্ক বন্ধ করা যেতে পারে: যদি কোনও ব্যবহারকারী Starlink ইন্টারনেটের ভুল ব্যবহার করে, অথবা যেখানে সেবা দেওয়া নিষিদ্ধ সেখানে এর ব্যবহার করে, তবে সরকার তার জন্য ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করতে পারে।
- রিয়েল-টাইম অবস্থান শেয়ার করতে হবে: প্রয়োজন হলে Starlink কে তার ব্যবহারকারী টার্মিনাল অর্থাৎ ইন্টারনেট ডিভাইসের অবস্থান সরকার বা সুরক্ষা সংস্থার সাথে ভাগ করে নিতে হবে।
- প্রতিটি ডিভাইসের বৈধ নিবন্ধন প্রয়োজন: ভারতে Starlink এর ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীর টার্মিনাল (ডিশ) কে কোম্পানির সাথে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক হবে। কোনও বিদেশী ডিভাইস যা নিবন্ধিত নয়, সেটি ভারতে নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস করতে পারবে না।
কোন কোন কোম্পানি পূর্বেই অনুমোদন পেয়েছে?
ভারত সরকার এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি কোম্পানিকে GMPCS লাইসেন্স দিয়েছে — Airtel এর OneWeb এবং Jio Satellite কে। এই দুটি কোম্পানিই ভারতে উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের পূর্ণ অনুমতি পেয়েছে। Starlink এবং Amazon এর মতো বড় টেক কোম্পানি এখনও পর্যন্ত এই অনুমোদনের অপেক্ষা করছিল। এখন Starlink LOI (Letter of Intent) পেয়েছে, যার ফলে এই আশা বেড়েছে যে এটিও শীঘ্রই GMPCS লাইসেন্স পাবে এবং ভারতে তার সেবা শুরু করতে পারবে।
সরকার এবং কোম্পানির মধ্যে আলোচনা
Elon Musk এর কোম্পানি Starlink ভারতে ইন্টারনেট সেবা চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর জন্য তাদের দল ভারত সরকারের অনেক বড় কর্মকর্তার সাথে দেখা করেছে। সম্প্রতি Starlink এবং SpaceX এর কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সাথে দেখা করেছেন, যেখানে এই প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত সম্ভাবনা এবং নিয়মাবলী নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এর আগে Elon Musk এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকটি এই ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয় যে ভারত সরকারও এই প্রকল্প নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই বৈঠকগুলি থেকে স্পষ্ট যে উভয় পক্ষই উপগ্রহ ইন্টারনেট সেবা ভারতে দ্রুত চালু করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।
Starlink এর ভারতে প্রবেশের ফলে কোটি কোটি মানুষ উন্নত ইন্টারনেট সেবা পেতে পারে। বিশেষ করে এমন এলাকায় যেখানে এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট একটি স্বপ্ন, সেখানে এই প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটাতে পারে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তবে ভারতের প্রতিটি কোণে হাই-স্পিড ইন্টারনেট খুব শীঘ্রই বাস্তব হতে পারে।