২০২৫ সালের বৈশাখী পর্ব উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যপ্রদেশের আনন্দপুর ধাম আশ্রম পরিদর্শন এই আশ্রমকে আবারও জাতীয় সংবাদ শিরোনামে এনেছে। যদিও এটি প্রথমবার নয় যখন আনন্দপুর ধাম দেশজুড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতি এর গুরুত্বকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
আনন্দপুর ধাম আশ্রম: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মধ্যপ্রদেশের অশোকনগর জেলার বিখ্যাত আনন্দপুর ধামে বৈশাখী পর্ব পালন করতে আসবেন। এই ধাম পরমহংস অদ্বৈত মতের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র, যেখানে প্রধানমন্ত্রী সন্ত মহাত্মা শব্দ প্রেমানন্দ জি এবং অন্যান্য সন্তদের সাথে দেখা করবেন। এই সময় তিনি আশ্রম কর্তৃক পরিচালিত সেবা প্রকল্পগুলির তথ্যও নেবেন, যার মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক উন্নয়ন সংক্রান্ত অনেক কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বৈশাখী মেলায় প্রায় ২০ হাজার ভক্তের যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে।
আনন্দপুর ধাম কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং এটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের সমন্বয়, যা মধ্যপ্রদেশের অশোকনগর জেলার ঈশাগড়ের কাছে অবস্থিত। এই বিশাল আশ্রমের ভিত্তি প্রায় ৯৫ বছর আগে স্থাপিত হয়েছিল, এবং আজ এটি ১৫০০ বিঘা জমিতে বিস্তৃত একটি আত্মনির্ভর আধ্যাত্মিক নগরীতে পরিণত হয়েছে।
১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠা, এখন আধ্যাত্মিক মডেল শহর
গুরু স্বরূপ আনন্দ মহারাজ কর্তৃক ১৯৩০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত এই আশ্রম প্রাথমিকভাবে ছিল একটি ছোট্ট দোকান মাত্র। ধীরে ধীরে এটি একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যা পরমহংস অদ্বৈত মতের মূল্যবোধ এবং শিক্ষার প্রতীক। বর্তমানে এই স্থান পরমহংস অদ্বৈতানন্দ জি মহারাজের সমাধিস্থলী এবং বিশ্বজুড়ে তাঁর অনুসারীদের জন্য তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভ্রমণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
প্রধানমন্ত্রীর ভ্রমণের জন্য আশ্রমে অস্থায়ীভাবে চারটি হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং প্যাড তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোর করা হয়েছে, এবং এই অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে রাখা হয়েছে, যাতে কোন জনসভা বা সাধারণ সাক্ষাৎ অন্তর্ভুক্ত নয়। আশ্রমের ভিতরে পাঁচটি প্রধান গুরুদের মন্দির রয়েছে, যা চারদিকে সুন্দর সরোবর দিয়ে ঘেরা। এই মন্দিরগুলিতে আসা ভক্তদের আশ্রম কর্তৃপক্ষ বিশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা করে দর্শন করানোর ব্যবস্থা করে। এই ব্যবস্থাটি কেবলমাত্র সংগঠিত নয়, তীর্থযাত্রাকে আরও সহজ এবং শান্ত করে তোলে।
নিজস্ব ফায়ার ব্রিগেড এবং ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবস্থা
আশ্রমের আত্মনির্ভরতা এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। এখানে নিজস্ব ফায়ার ব্রিগেড, তিনটি ব্যক্তিগত বাসস্ট্যান্ড, যানবাহন মেরামত কর্মশালা, সিসিটিভি নজরদারি এবং প্রশস্ত পরিষ্কার সড়ক রয়েছে। এখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কোনও আধুনিক টাউনশিপের চেয়ে কম নয়। ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আনন্দপুর ধাম ট্রাস্ট’ এই আশ্রমের সম্পত্তি এবং সামাজিক কাজের তত্ত্বাবধান করে। ট্রাস্টের অধীনে স্কুল এবং হাসপাতালও পরিচালিত হয়, যা কেবলমাত্র স্থানীয় গ্রামবাসীদের জন্য নয়, বরং একটি আদর্শ মডেল হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
কৃষিকাজ এবং সেবার সমন্বয়
আশ্রমের নিজস্ব চাষযোগ্য জমি রয়েছে, যেখানে জৈব কৃষিকাজ করা হয়। এছাড়াও ১৩০০-এর বেশি সাধু-সাধ্বীর স্থায়ী বাসস্থান রয়েছে। এটি কেবলমাত্র ধর্মীয় দিক থেকে নয়, বরং সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও একটি সক্রিয় প্রতিষ্ঠান। বৈশাখী পর্ব উপলক্ষে এই আশ্রমে আয়োজিত মেলায় প্রায় ২০,০০০ ভক্ত যোগদান করছেন। এই আয়োজন কেবলমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি বৃহৎ সাংস্কৃতিক সমাবেশের রূপও নিয়েছে।