ফোনপে'র আসন্ন আইপিও: ১.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব

ফোনপে'র আসন্ন আইপিও: ১.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব
সর্বশেষ আপডেট: 2 দিন আগে

দেশের অগ্রণী ফিনটেক কোম্পানি ফোনপে তাদের অধীর আকাঙ্ক্ষার আইপিও (IPO) প্রক্রিয়া দ্রুততর করেছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা প্রদানকারী এই কোম্পানি শীঘ্রই বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি (SEBI) এর কাছে প্রাথমিক নথি, অর্থাৎ ড্রাফ্ট রেড হেরিং প্রসপেক্টাস (DRHP) দাখিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী কোম্পানি ফোনপে এখন শেয়ার বাজারে পা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমেরিকান রিটেল জায়ান্ট ওয়ালমার্টের সমর্থনে পরিচালিত এই ফিনটেক কোম্পানি শীঘ্রই তাদের আর্ন্তিক জনসাধারণের প্রস্তাব, অর্থাৎ আইপিও আনতে চলেছে। সূত্র মতে, কোম্পানি ২০২৫ সালের আগস্টের প্রথম দিকে বাজার নিয়ন্ত্রক ভারতীয় প্রতিভূতি ও বিনিময় বোর্ড (সেবি) এর কাছে ড্রাফ্ট রেড হেরিং প্রসপেক্টাস (DRHP) দাখিল করতে পারে।

এই আইপিও প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১২,৫০০ কোটি টাকা) হবে, যার ফলে কোম্পানির বাজার মূল্য প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। এই প্রস্তাব ভারতীয় স্টার্টআপ সেক্টরে ২০২৫ সালের সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় আইপিওগুলির মধ্যে একটি হতে পারে।

প্রধান বিনিয়োগ ব্যাংকারদের সাথে যোগাযোগ

ফোনপে তাদের আইপিও সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য দেশ এবং বিশ্বের কিছু সবচেয়ে নামীদামী বিনিয়োগ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কোটাক মহিন্দ্র ক্যাপিটাল কোম্পানি, জেপি মরগ্যান চেস অ্যান্ড কোম্পানি, সিটিগ্রুপ ইঙ্ক এবং মরগ্যান স্ট্যানলির মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংকগুলিকে কোম্পানির আইপিও প্রক্রিয়ার প্রধান পরামর্শদাতা এবং আন্ডাররাইটার হিসাবে নিয়োগ করা হবে।

যদিও সূত্রের দাবি, পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন এখনও সম্ভব, কারণ কোম্পানি বিভিন্ন বিকল্পের উপর বিবেচনা করছে। বাজারের পরিস্থিতি এবং মূল্যায়নের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কোম্পানির কর্মকর্তা এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

ফোনপের এ পর্যন্ত যাত্রা

২০১৫ সালে ফোনপে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আজ এটি ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ডিজিটাল পেমেন্ট কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। কোম্পানির দাবি, তাদের ৬১ কোটিরও বেশি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে ছোট শহর এবং গ্রামীণ এলাকায়।

কোম্পানির মতে, প্রতিদিন তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৩৪ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়। ২০২৩ সালে ফোনপে রিবিট ক্যাপিটাল, টাইগার গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট এবং টিভিএস ক্যাপিটাল ফান্ডস থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছিল, যার পর কোম্পানির মূল্য ১২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।

ভারতে UPI-এর সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফর্ম

UPI অর্থাৎ ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস আজ ভারতে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রধান মাধ্যম হিসেবে পরিণত হয়েছে, এবং ফোনপে এই ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়। ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI)-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতে মোট UPI লেনদেনের প্রায় ৫০% শুধুমাত্র ফোনপের।

গুগল পে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, অন্যদিকে পেটিএম তৃতীয় স্থানে। গুগল পে এবং ফোনপে একত্রে মোট UPI লেনদেনের প্রায় ৮০% বাজার শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করে। এই অবস্থা ফোনপেকে ডিজিটাল আর্থিক সেবা খাতে অপরাজেয় করে তুলেছে।

আইপিও আনার উদ্দেশ্য

ফোনপে দ্বারা আইপিও আনার অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানির সম্প্রসারণ পরিকল্পনার জন্য তহবিল সংগ্রহ, নতুন পণ্য এবং সেবা চালু করা, প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ এবং সম্ভাব্য অধিগ্রহণ অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, এই আইপিও কোম্পানিকে জনসাধারণের বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করার সুযোগ দেবে এবং দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের এক্সিট বা আংশিক লাভ বুক করার সুযোগও দেবে।

এই পদক্ষেপ ফোনপেকে স্বচ্ছতা, আস্থা এবং ব্র্যান্ড মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ দেবে, যার ফলে দেশে আর্থিক সেবা খাতে আরও দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান স্থাপন করতে পারবে।

স্টার্টআপ সেক্টরের জন্য একটি বড় ইঙ্গিত

ফোনপের এই পদক্ষেপ ভারতীয় স্টার্টআপ সেক্টরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। গত কয়েক বছরে যেখানে কিছু বড় টেক কোম্পানির আইপিও মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল, সেখানে এখন বাজার ধীরে ধীরে স্থির হচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে।

ফোনপের সফল আইপিও অন্যান্য ইউনিকর্ন এবং গ্রোথ স্টেজ স্টার্টআপকেও উৎসাহিত করবে যাতে তারা জনসাধারণের বাজারে যায়। এর ফলে ভারতের মূলধন বাজারে বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগকারীরা নতুন টেক কোম্পানিতে অংশীদারিত্ব নেওয়ার সুযোগ পাবে।

ওয়ালমার্টের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি

ফোনপেতে আমেরিকান রিটেল জায়ান্ট ওয়ালমার্টের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। এই আইপিও-র মাধ্যমে ওয়ালমার্টেরও ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ালমার্ট ২০০৮ সালে ফ্লিপকার্ট অধিগ্রহণের সময় ফোনপেতেও অংশীদারিত্ব অর্জন করেছিল, এবং তার পর থেকে কোম্পানি ফোনপেকে স্বাধীন ব্র্যান্ড হিসাবে আলাদা করেছে।

এখন ওয়ালমার্টের কৌশল হল ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটাল পেমেন্ট বাজারে তার আধিপত্য বজায় রাখা এবং একই সাথে বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন দেওয়া।

পরিকল্পনা এবং সম্প্রসারণ

ফোনপে শুধুমাত্র UPI-তে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না। কোম্পানি বীমা, মিউচুয়াল ফান্ড, ডিজিটাল গোল্ড, ক্রেডিট স্কোর চেক, বিল পেমেন্ট, ট্যাক্স পেমেন্ট এবং মাইক্রো-ক্রেডিট যেসব সেবায় তীব্র গতিতে বিস্তৃত হচ্ছে। এছাড়াও, কোম্পানি ভারতের ছোট ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল পেমেন্টের মূলধারায় আনার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা করছে।

ফোনপে সম্প্রতি তাদের NBFC (গ্যার-ব্যাংকিং আর্থিক কোম্পানি) ইউনিটকেও শক্তিশালী করার ইঙ্গিত দিয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে ডিজিটাল ঋণ এবং গ্রাহক ক্রেডিটের মতো ক্ষেত্রেও তারা প্রবেশ করতে পারে।

Leave a comment