ভারত সরকার পাকিস্তানের বাস্তবতা উন্মোচনের জন্য সাতটি প্রতিনিধি দল গঠন করেছে, যাতে ৫১ জন সাংসদ ও প্রাক্তন মন্ত্রী রয়েছেন। কিন্তু তালিকায় কাশ্মীরী পণ্ডিত প্রতিনিধি না থাকায় কংগ্রেস নেতারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
নয়াদিল্লি: ভারত সরকার সম্প্রতি পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ ও তার সত্যতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল গঠন করেছে। এই প্রতিনিধি দলগুলিতে মোট ৫১ জন সাংসদ, প্রাক্তন মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আটজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তবে, এই তালিকায় কাশ্মীরী পণ্ডিত সম্প্রদায়ের কোনও প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত না করায় কংগ্রেসের অনেক নেতা আপত্তি জানিয়েছেন। বিশেষ করে কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ বিবেক তন্খা এই বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।
অপারেশন সিন্দুর এবং ভারত-পাকিস্তানের সত্যতা
প্রথমে এটা জানা জরুরি যে ভারত সরকার কেন এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পালগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারতীয় সেনা অপারেশন সিন্দুরের আওতায় পাকিস্তান ও দখলকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। এই সামরিক অভিযানে একশোর বেশি সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে। এই অভিযানের পর বিশ্ব দেখেছে কিভাবে পাকিস্তানের সেনা প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদীদের জানাজায় অংশগ্রহণ করেছে, যার ফলে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকারী মনোভাবের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিন্দা হয়েছে।
ভারত সরকার এই পরিস্থিতিটি স্পষ্টভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায় যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ সমর্থনের সত্যতা বুঝতে পারে। এই উদ্দেশ্যে সরকার সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল গঠন করেছে।
সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল: তালিকা ও প্রতিক্রিয়া
সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৫১ জন সাংসদ এবং প্রাক্তন মন্ত্রীকে এই প্রতিনিধি দলগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আটজন কর্মকর্তাও এই মিশনের অংশ। এই পদক্ষেপটিকে দেশের কূটনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার ফলে ভারতের পক্ষ শক্তিশালী হবে।
কিন্তু এই প্রতিনিধি দলের তালিকায় কোনও কাশ্মীরী পণ্ডিত প্রতিনিধির নাম নেই। এই বিষয়টি কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং রাজ্যসভা সাংসদ বিবেক তন্খার কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই তালিকার সমালোচনা করে বলেছেন যে কাশ্মীরী পণ্ডিত সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, "কাশ্মীরী পণ্ডিতরা একটা ভুলে যাওয়া প্রজাতির মতো দেখাচ্ছে।"
বিবেক তন্খার প্রতিবাদ ও রাহুল গান্ধীর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন
বিবেক তন্খা এও অভিযোগ করেছেন যে সরকার সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল গঠনে কেবলমাত্র তাদের পছন্দের নেতাদেরই স্থান দিয়েছে। তিনি বলেছেন যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়ে কাজ করার জন্য গঠিত প্রতিনিধি দলে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের না থাকা খুবই দুঃখজনক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর সেই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের কোনো নাম নেই।
তন্খা টুইটারে লিখেছেন, "বিশ্বের রাজধানীগুলিতে ৭টি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর ধারণা ভালো, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি সরকারের পছন্দের তালিকা ছাড়া আর কিছু নয়।"
প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত কংগ্রেস ও AIMIM-এর জ্যেষ্ঠ নেতা
ভারত সরকারের এই তালিকায় কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর এবং AIMIM প্রধান অসদুদ্দিন ওয়াইসির মতো নামও রয়েছে। এই দুই নেতাকেই প্রধানমন্ত্রী মোদী সরকারের সমালোচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবুও সরকার তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি দলে স্থান দিয়েছে, যা একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক সংকেত হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। এটা দেখায় যে সরকার কাশ্মীর ও সন্ত্রাসবাদ মতো জাতীয় বিষয়গুলিতে সকল দলের সহযোগিতা নিতে চায়।
কাশ্মীরী পণ্ডিত সম্প্রদায় জম্মু ও কাশ্মীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যারা দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদ ও সংঘর্ষের শিকার হয়ে আসছে। ১৯৯০-এর দশকে কাশ্মীরী পণ্ডিতদের বিতাড়নের পর থেকেই এই সম্প্রদায় আজও তাদের নিরাপত্তা, সম্মান ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।