২০২৫ সালের আপরা একাদশী: পূজা বিধি, ভোগ ও গুরুত্ব

২০২৫ সালের আপরা একাদশী: পূজা বিধি, ভোগ ও গুরুত্ব
সর্বশেষ আপডেট: 19-05-2025

২০২৫ সালের আপরা একাদশীর পবিত্র দিবস ২৩শে মে, শুক্রবার, গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পালিত হবে। এই একাদশী জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি, যা ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা হয়েছে। বিশ্বাস করা হয় এই দিনে রাখা ব্রত ও ভগবান বিষ্ণুর পূজা জীবনের সকল প্রকার বাধা দূর করে এবং ভক্তদের সাফল্য, সমৃদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নয়ন দান করে।

আপরা একাদশীর দিন করা ভোগ, বিশেষ করে ভগবান বিষ্ণুকে অর্পিত ভোগ, তাঁর কৃপা লাভের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই বছরও এই পবিত্র তিথির ব্রত ও পূজা বিধি বিশেষ মুহূর্তে সম্পন্ন করা হবে।

আপরা একাদশীর ধর্মীয় গুরুত্ব ও ব্রতবিধি

হিন্দু ধর্মে একাদশী তিথিগুলি পবিত্র বলে মনে করা হয়, যা ভগবান বিষ্ণুর আরাধনার বিশেষ উপলক্ষ্য। আপরা একাদশী নামটি সংস্কৃতের দুটি শব্দ ‘আপরা’ (অর্থাৎ ‘বিরোধী’ বা ‘দুষ্ট’) থেকে নেওয়া হয়েছে, কারণ এই দিন ব্রতের দ্বারা পাপের ধ্বংস হয় এবং ভক্ত পবিত্রতার পথে অগ্রসর হন। এই একাদশী ব্রত পালন করলে ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় মানুষের জীবনে আসা কষ্ট, রোগ-ব্যাধি ও নেতিবাচক প্রভাব দূর হয়।

আপরা একাদশী ব্রত জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে রাখা হয় এবং এর পরান দ্বাদশী তিথির দিন করা হয়। ২০২৫ সালে আপরা একাদশী ২৩শে মে হবে, যখন পরান ২৪শে মে সকাল ৬:০১ টা থেকে ৮:৩৯ টা পর্যন্ত শুভ মুহূর্তে করা হবে। এই সময়ে পরান করলে ব্রতী অপার পুণ্য লাভ করে।

ব্রতের দিন ভক্ত নিরজলা বা নির্জল উপবাস পালন করেন, যাতে জল গ্রহণ করা হয় না। তদুপরি, সারাদিন ভগবান বিষ্ণুর পূজা, ব্রতকথা শ্রবণ, তুলসী গাছের সেবা, ধ্যান ও জপ করা হয়। এই দিন সকল প্রকার লোভ, ক্রোধ, মোহ ও অন্যান্য সাংসারিক বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্মিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হয়।

ভগবান বিষ্ণুকে অর্পণ করুন এই দুটি বিশেষ ভোগ

আপরা একাদশীর দিন ভগবান বিষ্ণুকে ভোগ অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে এই দিন দুই প্রকার ভোগের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, যা ভগবান বিষ্ণুকে অত্যন্ত প্রিয়। এই ভোগগুলি কেবল তাঁর কৃপা লাভের জন্যই নয়, ব্রতকে সফল করার জন্যও প্রয়োজনীয়।

১. আম দিয়ে তৈরি হালুয়া (Mango Halwa)

আমকে ভগবান বিষ্ণুর প্রিয় ফল বলে মনে করা হয়। আমের রং হলুদ, যা বিষ্ণুজির বস্ত্র এবং তাঁর দিব্যতার প্রতিনিধিত্ব করে। অতএব, এই দিন আম দিয়ে তৈরি হালুয়া ভগবান বিষ্ণুকে অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ ও ফলপ্রসূ বলে মনে করা হয়। আম হালুয়া স্বাদে মধুর এবং এটি প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করাও মানুষের মধ্যে সৌভাগ্য ও খুশি ছড়ানোর একটি শুভ উপায় বলে মনে করা হয়।

আম হালুয়া তৈরিতে আমের রস, সুজি, ঘি, চিনি এবং শুকনো মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এই ভোগ এতটাই প্রিয় যে ভগবান বিষ্ণুর পূজার সময় একে প্রধান স্থান দেওয়া হয়। এছাড়াও, আম হালুয়া খেলে মন প্রফুল্ল হয় এবং ভক্তের মনোবল বৃদ্ধি পায়।

২. কেশরের খির (Kesar Kheer)

কেশরের খিরও আপরা একাদশীর দিন ভগবান বিষ্ণুর জন্য অর্পিত করা শ্রেষ্ঠ ভোগগুলির মধ্যে একটি। কেশরের সোনালী রঙ এবং এর সুগন্ধ ভগবান বিষ্ণুকে অত্যন্ত প্রিয়। এই খির দুধ, চাল, চিনি এবং কেশরের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করা হয়, যা কেবল স্বাদে মনোমুগ্ধকর নয়, এর আধ্যাত্মিক গুরুত্বও রয়েছে।

কেশরের খির অর্পণ করলে ভগবান বিষ্ণুর কৃপা আরও বৃদ্ধি পায় এবং ভক্তের জীবনে সুখ-শান্তি, ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধি আসে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কেশরের ঘ্রাণে পরিবেশ পবিত্র হয় এবং পূজার শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

তুলসী পাতার পূজায় বিশেষ স্থান

একাদশী ব্রতে তুলসীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তুলসী পাতা ভগবান বিষ্ণুকে অত্যন্ত প্রিয় এবং তাঁর ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। আপরা একাদশীর দিন তুলসী পাতা ভোগে অন্তর্ভুক্ত করা পূজার অনিবার্য অঙ্গ। তুলসী পাতা দিয়ে ভগবান বিষ্ণুকে অর্পিত ভোগ অধিক ফলপ্রসূ হয় এবং ভক্ত বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করে।

কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একাদশীর দিন তুলসী পাতা তোলা নিষিদ্ধ। এমন মনে করা হয় এই দিন তুলসীকে ক্ষতি করা ভগবান বিষ্ণুকে কষ্ট দেয়। অতএব, ভক্ত একাদশীর একদিন আগে তুলসী পাতা তুলে নিরাপদ স্থানে রেখে দেন যাতে পূজায় তা ব্যবহার করা যায়।

আপরা একাদশী পূজার সম্পূর্ণ বিধি

সকালে স্নান করে ভক্ত শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে পূজাস্থল পরিষ্কার করেন। পূজার জন্য একটি পরিষ্কার স্থানে আসন বিছিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি বা ছবি স্থাপন করেন। পূজার শুরু হয় দীপ প্রজ্জ্বলন, পঞ্চামৃত দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর অভিষেক এবং তুলসী গাছের সেবা দিয়ে।

এরপর ভগবান বিষ্ণুকে আম হালুয়া, কেশরের খির, তুলসী পাতাসহ অন্যান্য প্রসাদ অর্পণ করা হয়। এই সময় বিষ্ণুসহস্রনাম, নারায়ণ স্তুতি এবং একাদশী ব্রতকথা পাঠ করা হয়। ভক্ত মন, বচন ও কর্মে সম্পূর্ণ সমর্পণের ভাব নিয়ে ভগবানের আরাধনা করেন।

পূজার শেষে ভক্ত ভগবানের কাছে স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি, আধ্যাত্মিক উন্নয়ন এবং জীবনের সকল বাধা থেকে মুক্তির প্রার্থনা করেন। ব্রত পালন সম্পূর্ণ নিয়ম অনুসারে করা অত্যন্ত জরুরি যাতে ব্রতী পূর্ণ লাভ পায়।

আপরা একাদশী ব্রতের লাভ

  • পাপের ধ্বংস: এই ব্রত পালন করলে পূর্বজন্মের পাপ ও বর্তমান জীবনের পাপ থেকে মুক্তি মেলে।
  • সঙ্কটের অন্ত: জীবনের সঙ্কট, অর্থনৈতিক তাঙ্গি, রোগ ও পারিবারিক কলহ দূর হয়।
  • ধর্মীয় পুণ্য: আপরা একাদশীর ব্রত থেকে পুণ্য লাভ হয় যা আত্মার শুদ্ধিকরণে সাহায্য করে।
  • সাফল্য ও সমৃদ্ধি: ভগবান বিষ্ণুর অসীম কৃপায় সকল কাজ সফল হয় এবং ঘরে সমৃদ্ধি আসে।
  • আধ্যাত্মিক উন্নয়ন: এই ব্রতের মাধ্যমে ভক্তের মন ও আত্মা ভগবানের নিকট হয়, যার ফলে আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও শান্তি লাভ হয়।

২০২৫ সালের আপরা একাদশীর এই পবিত্র উপলক্ষ্য ভগবান বিষ্ণুর অসীম কৃপা লাভের সুবর্ণ সুযোগ। এই দিন ব্রত রাখা ভক্ত জীবনের সকল দুঃখ থেকে মুক্তি পেয়ে খুশি ও সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে পারেন। ভগবান বিষ্ণুকে আম হালুয়া ও কেশরের খির অর্পণ করার সাথে সাথে তুলসী পাতার পূজা অবশ্যই করুন, যাতে পূজা সম্পূর্ণ ফলপ্রসূ হয়। এছাড়াও, পরানের শুভ মুহূর্তের পালন করে ব্রত সম্পূর্ণ করুন।

Leave a comment