আজকের যুগে মানুষ দ্রুত ও নিয়মিত আয়ের উৎস খুঁজে চলে, তাই বিনিয়োগকে একটি স্থায়ী আয়ের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ডিভিডেন্ড স্টকস: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের একটি বড় সুবিধা হল নিয়মিত আয়ের সুযোগ, তাও শেয়ার বিক্রি না করে। এর জন্য প্রয়োজন এমন স্টক চিহ্নিত করা যারা প্রতি বছর বা বারবার তাদের মুনাফা থেকে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দেয়। ডিভিডেন্ড হল এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা ট্রেডিং ছাড়াই স্থায়ী আয় পেতে পারেন। আসুন জেনে নেই সেই পাঁচটি কোম্পানির কথা যারা গত কয়েক বছরে নিয়মিত ডিভিডেন্ড দিয়ে বিনিয়োগকারীদের পকেট ভরিয়েছে এবং যাদের ভবিষ্যতের আয়ের শক্তিশালী উৎস হিসেবে দেখা যেতে পারে।
তাপরিয়া টুলস: মুনাফা ও ডিভিডেন্ডে অসাধারণ স্থিরতা
তাপরিয়া টুলস ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের একটি পরিচিত কোম্পানি, যারা উচ্চমানের শিল্প সরঞ্জাম তৈরি করে। এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড হিসেবে চমৎকার লাভ দিয়েছে।
২০২৪ সালে কোম্পানিটি তিনবার ডিভিডেন্ড দিয়েছে - ফেব্রুয়ারিতে ২০ টাকা, জুলাইতে ২০ টাকা এবং নভেম্বরে ২৫ টাকা প্রতি শেয়ার। এছাড়াও জানুয়ারী ২০২৩ সালে ৭৭.৫ টাকার অসাধারণ ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে তাপরিয়া টুলসের শেয়ার প্রায় ২০.৯৫ টাকায় ট্রেড করছে। এই হিসেবে ডিভিডেন্ড ফিল্ড বেশ উচ্চ। যারা দীর্ঘমেয়াদী আয়ের কথা ভাবছেন, তাদের জন্য এটি একটি শক্তিশালী বিকল্প হতে পারে।
কোল ইন্ডিয়া: সরকারি আস্থার শক্তিশালী বিকল্প
কোল ইন্ডিয়া দেশের সবচেয়ে বড় কয়লা খননকারী কোম্পানি এবং এটি সরকারের অধীনস্থ একটি সর্বজনীন খাতের প্রতিষ্ঠান। এটি গত কয়েক বছরে অসাধারণ ডিভিডেন্ড প্রদানের ধারা অব্যাহত রেখেছে।
২০২৪-২৫ সালে এই কোম্পানিটি চারবার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে - জানুয়ারিতে ৫.৬ টাকা, নভেম্বরে ১৫.৭৫ টাকা, আগস্টে ৫ টাকা এবং ফেব্রুয়ারিতে ৫.২৫ টাকা প্রতি শেয়ার। অর্থাৎ এক বছরে মোট ৩১.৬ টাকা প্রতি শেয়ার।
বর্তমানে এর শেয়ার প্রায় ৩৯১.২০ টাকায় ট্রেড করছে। এমন পরিস্থিতিতে এর ডিভিডেন্ড ফিল্ড প্রায় ৮% হয় যা যেকোনো সরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এটি তাদের জন্য আদর্শ যারা কম ঝুঁকি এবং নিয়মিত আয় চায়।
অবিরামি ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস: ছোট বিনিয়োগে বড় লাভ
অবিরামি ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস একটি ছোট কিন্তু প্রভাবশালী ফাইন্যান্স কোম্পানি। এটি বিনিয়োগ ও ঋণ সেবা প্রদান করে এবং ডিভিডেন্ড প্রদানের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই।
আগস্ট ২০২৪ সালে কোম্পানিটি ২.৫ টাকা এবং সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে ২ টাকা প্রতি শেয়ার ডিভিডেন্ড দিয়েছে। বর্তমানে এই কোম্পানির শেয়ার প্রায় ৪৯ টাকায় উপলব্ধ।
ডিভিডেন্ড ফিল্ডের কথা বললে এটি প্রায় ৯% এর কাছাকাছি, যা একটি ছোট ফাইন্যান্স কোম্পানির ক্ষেত্রে অত্যন্ত লাভজনক। এই স্টক তাদের জন্য যারা সীমিত বিনিয়োগেও ভালো ও নিয়মিত রিটার্ন চায়।
ভিএসটি ইন্ডাস্ট্রিজ: তামাক ব্যবসায় বিনিয়োগের শক্তিশালী সুযোগ
ভিএসটি ইন্ডাস্ট্রিজ তামাক শিল্পের একটি প্রাচীন ও বিশ্বস্ত কোম্পানি। এই কোম্পানি প্রচুর পরিমাণে ডিভিডেন্ড দেওয়ার জন্য বিখ্যাত।
২০২৪ সালের জুন মাসে কোম্পানিটি ১৫০ টাকা প্রতি শেয়ার ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। এর আগে আগস্ট ২০২৩ সালেও ১৫০ টাকা ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়েছিল। এতটুকুই নয়, সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে কোম্পানিটি ১০:১ অনুপাতে বোনাস শেয়ারও জারি করেছিল।
বর্তমানে এর শেয়ার প্রায় ২৮৫.৫৫ টাকায় ট্রেড করছে। অর্থাৎ ডিভিডেন্ড ফিল্ড প্রায় ১০৫% হয়ে যায়, যা বাজারে অত্যন্ত বিরল। এই স্টক ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য সোনার খনি থেকে কম নয়।
ডিভিডেন্ড ফিল্ড বোঝা কেন জরুরি
ডিভিডেন্ড ফিল্ড বলে দেয় যে কোনও কোম্পানির প্রদত্ত ডিভিডেন্ড তার বর্তমান মূল্যের তুলনায় কত। এটি বিনিয়োগকারীদের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে তাদের বিনিয়োগিত অর্থে বার্ষিক কত আয় হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও স্টকের মূল্য ১০০ টাকা হয় এবং সেটি বছরে ১০ টাকা ডিভিডেন্ড দেয়, তাহলে ডিভিডেন্ড ফিল্ড ১০% হবে।
ডিভিডেন্ড ফিল্ড থেকে বিনিয়োগকারীরা অনুমান করতে পারেন যে কোম্পানিটি মুনাফা অর্জন করছে কি না, এবং সেই মুনাফা বিনিয়োগকারীদের সাথে কতটা উদারতার সাথে ভাগ করে নিচ্ছে।