ভারতের বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি সম্প্রতি মুম্বইয়ের ইন্সটিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি (ICT) কে ১৫১ কোটি টাকার বিপুল দান করেছেন। এই দান তিনি তার গুরু অধ্যাপক মনমোহন শর্মার স্মৃতির উদ্দেশ্যে করেছেন, যাঁর ব্যক্তিত্ব ও চিন্তাধারার তার জীবনে গভীর প্রভাব পড়েছিল।
ব্যবসা: দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি মুম্বইয়ের ইন্সটিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি (ICT) কে ১৫১ কোটি টাকার দান করেছেন। এই দান তিনি অধ্যাপক মনমোহন শর্মাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে করেছেন, যাঁর পরামর্শ আম্বানির কর্মজীবনে দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। এই উপলক্ষে তিনি আরও ব্যাখ্যা করেছেন কেন IIT-বোম্বে-র পরিবর্তে ICT-কে তিনি বেছে নিয়েছিলেন।
ICT ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দান
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারমান মুকেশ আম্বানি মুম্বইয়ের ইন্সটিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি (ICT) কে ১৫১ কোটি টাকা দান করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটি এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সাহায্য। এই ঘোষণা তিনি অনিতা পাটিল কর্তৃক রচিত 'দ্য ডিভাইন সায়েন্টিস্ট' নামক বইয়ের মুক্তি উপলক্ষে করেছেন। এই বইটি ভারতের বিখ্যাত রসায়ন প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ এবং পদ্মভূষণ প্রাপ্ত অধ্যাপক মনমোহন শর্মার জীবনী।
‘গুরুদক্ষিণা’ হিসেবে দান
মুকেশ আম্বানি এই উপলক্ষে অধ্যাপক মনমোহন শর্মাকে তার ‘জাতীয় গুরু’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন ICT কে এই দান তাঁরই অনুরোধে করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, অধ্যাপক শর্মার আগ্রহ তার কাছে কোন আদেশের চেয়ে কম ছিল না। তিনি বলেছেন, 'মুকেশ, তোমার ICT-র জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ করতে হবে।' আজ আমি এই ঘোষণা করে অত্যন্ত গর্বিত যে এই অবদান তাঁর সম্মানে।
তিনি ICT কে ‘একটি পবিত্র মন্দির’ বলে অভিহিত করে এটিকে তার শিক্ষার ভিত্তি বলে উল্লেখ করেছেন। আম্বানি ICT-র প্রাক্তন ছাত্র, যখন এই প্রতিষ্ঠান UDCT (University Department of Chemical Technology) নামে পরিচিত ছিল।
IIT-বোম্বে কেন বেছে নেওয়া হয়নি?
মুকেশ আম্বানি এই অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে বলেছেন যে তিনি IIT-বোম্বে-র মতো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে UDCT বেছে নিয়েছিলেন। এর কারণ ছিল অধ্যাপক মনমোহন শর্মার শিক্ষা পদ্ধতি এবং অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তিত্ব।
তিনি বলেছেন, অধ্যাপক শর্মার প্রথম বক্তৃতা শুনে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি একজন সাধারণ শিক্ষক নন, বরং একজন ‘আলকেমিস্ট’। তিনি ধাতু নয়, বরং মনকে রূপান্তরিত করেন। আম্বানি আরও বলেছেন যে শর্মার বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি কৌতূহলকে জ্ঞানে, জ্ঞানকে ব্যবসায়িক মূল্যে এবং এই মূল্যকে স্থায়ী বুদ্ধিমত্তায় রূপান্তরিত করার অনন্য ক্ষমতা রাখতেন।
ICT-র পটভূমি এবং অবদান
ICT, যা আগে UDCT নামে পরিচিত ছিল, ১৯৩৩ সালে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০৮ সালে এটিকে ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং নাম পরিবর্তন করে ICT রাখা হয়। এই প্রতিষ্ঠান ভারতে রসায়ন প্রকৌশল এবং ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রণী বলে মনে করা হয়। এখান থেকে অনেক বিজ্ঞানী, শিল্পপতি এবং শিক্ষাবিদ বেরিয়েছেন যারা দেশের শিল্প উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
অধ্যাপক মনমোহন শর্মার অবদান
অধ্যাপক শর্মাকে ভারতের অন্যতম সম্মানিত রসায়ন প্রকৌশলীদের মধ্যে গণ্য করা হয়। তিনি পদ্মভূষণ সহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছেন। তার শিক্ষা পদ্ধতি এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের রাসায়নিক শিল্পকে শুধুমাত্র একাডেমিকভাবে নয়, শিল্পগতভাবেও শক্তিশালী করেছে। আম্বানি তাকে ‘জাতীয় গুরু’ বলে সম্মানিত করেছেন এবং বলেছেন ICT-তে তার প্রভাব স্থায়ী থাকবে।