বিজেপি নেতা অমিত মালব্য রাহুল গান্ধীকে আধুনিক মীর জাফর বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টিকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং পাকিস্তানের ভাষা ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছেন।
রাহুল গান্ধী: ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে রাজনৈতিক বাকবিতণ্ডা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। এবার বিষয়টি কেবল জাতীয় সুরক্ষা নিয়ে নয়, বিরোধী ও সরকারি দলের মধ্যে একটি বড় আদর্শিক লড়াইয়ের রূপ নিয়েছে। বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়ে তাকে “আধুনিক মীর জাফর” বলে অভিহিত করেছেন।
কী ঘটেছে?
সম্প্রতি পাহলগাঁওয়ে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত একটি বৃহৎ সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যার নাম ‘অপারেশন সিন্দুর’। এই অভিযানটি পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে)-তে অবস্থিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল। সরকার ও সেনাবাহিনী এটিকে একটি সফল অভিযান বলে দাবি করেছে।
কিন্তু কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন—
- পাকিস্তানকে আগে থেকেই হামলার খবর কেন দেওয়া হয়েছিল?
- ভারত কতগুলি বিমান হারিয়েছে?
- অভিযান থেকে কী লাভ হয়েছে?
রাহুল গান্ধী বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের কাছে উত্তর চেয়েছেন এবং বলেছেন যে, নীরব থাকা একটি বড় ভুল। তিনি এটিকে “একটি ভুল নয়, বরং অপরাধ” বলে অভিহিত করেছেন।
বিজেপির পাল্টা আক্রমণ: ‘রাহুল পাকিস্তানের ভাষা বলছেন’
রাহুল গান্ধীর এই প্রশ্নগুলিতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিজেপি আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ রাহুলের উপর আক্রমণ চালিয়েছেন। তিনি একটি ছবি শেয়ার করেছেন যেখানে অর্ধেক রাহুল গান্ধীর এবং অর্ধেক পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের মুখ দেখানো হয়েছে।
মালব্য লিখেছেন, “রাহুল গান্ধী ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সাফল্যে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর পরিবর্তে বারবার জিজ্ঞাসা করছেন যে আমরা কতগুলি বিমান হারিয়েছি। কি তাকে এর বিনিময়ে ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’ পাওয়া উচিত?”
‘আধুনিক মীর জাফর’ বলে তুলনা কেন?
অমিত মালব্য বলেছেন যে, রাহুল গান্ধী ঠিক সেইভাবে আচরণ করছেন যেমনটি ইতিহাসে মীর জাফর করেছিলেন। মীর জাফর বঙ্গের নবাব সিরাজুদ্দৌলার সেনাপতি ছিলেন, যিনি প্লাসির যুদ্ধে ইংরেজদের সাহায্য করে ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।
মালব্যের দাবি, রাহুল গান্ধীও দেশের ভেতর থেকে পাকিস্তানের ভাষা বলছেন এবং এ কারণেই তাকে “আধুনিক যুগের মীর জাফর” বলা হচ্ছে।
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ
রাহুল গান্ধী বিদেশমন্ত্রীর উপর সরাসরি অভিযোগ এনে বলেছেন যে, জয়শঙ্কর সর্বজনীনভাবে স্বীকার করেছেন যে, অভিযানের আগে পাকিস্তানকে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছিল। রাহুল জিজ্ঞাসা করেছেন, এর অনুমতি কে দিয়েছিল? আমরা কতগুলি বিমান হারিয়েছি? দেশের সত্য জানার অধিকার আছে।
তার দাবি, এটি কেবলমাত্র কৌশলগত ভুল নয়, বরং একটি সিকিউরিটি ব্রীচ, যার দায়িত্ব নির্ধারণ করা উচিত।
সেনা ও সরকারের ব্যাখ্যা
ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ার মার্শাল এ.কে. ভরতী এ ব্যাপারে জবাব দিয়ে বলেছেন যে, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ক্ষতি একটি স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, আমরা কি আমাদের মিশন সম্পন্ন করেছি? এবং এর উত্তর হল “হ্যাঁ।”
তিনি বলেছেন, আমাদের সকল পাইলট নিরাপদে ফিরে এসেছেন। শত্রুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু অভিযান এখনও চলছে, তাই আরও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া দেশের সুরক্ষার জন্য ঠিক হবে না।
বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করও বলেছেন যে, পাকিস্তানকে কেবল এতটুকু বলা হয়েছিল যে আমরা সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করছি, সামরিক স্থাপনা নয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সংঘাত এড়ানো।
