খণ্ডোয়ায় ধর্ষণের শিকার মহিলার পরিবারের সঙ্গে মন্ত্রী বিজয় শাহের দেখা করার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এর ফলে পরিবারের ব্যক্তিগত জীবনের লঙ্ঘন হয়েছে এবং মন্ত্রীকে আবারও সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
MP News: মধ্যপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী বিজয় শাহ আবারও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। খণ্ডোয়া জেলার আদিবাসী-প্রধান এলাকা খালোয়ায় একটি দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের নয় দিন পরে বিজয় শাহ যখন পীড়িতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন সেখানকার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ভাইরাল ছবিগুলিতে পীড়িতার পরিবারের সদস্যদের মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, যার ফলে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের গুরুতর লঙ্ঘন হয়েছে। এখন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী বিজয় শাহ সর্বক্ষেত্রে সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন।
ছবির কারণে সৃষ্ট বিতর্ক
জানা গেছে, বিজয় শাহ যখন খালোয়ার মৃতার বাড়িতে যান, তখন সেখানে উপস্থিত স্থানীয় কর্মী ও কিছু মানুষ সেই দেখার সময় ছবি তুলে। পরে সেই ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়। এই ছবিগুলিতে পীড়িতার পরিবারের সদস্যদের মুখ সম্পূর্ণ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এটি একটি সংবেদনশীল বিষয় হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের পরিচয় প্রকাশ করা মিডিয়া নীতি এবং মানবাধিকারের বিরুদ্ধে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক সামাজিক সংগঠন এবং কর্মী এটিকে একটি অসতর্ক পদক্ষেপ বলেছেন।
গুরুতর বিষয়: মানবাধিকার ও ব্যক্তিগত জীবনের লঙ্ঘন
এই ঘটনাটি কেবল একটি রাজনৈতিক ভুল নয়, বরং একটি বড় সাংবিধানিক সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। যৌন হিংসার শিকার বা তার পরিবারের সদস্যদের পরিচয় সর্বজনীন করা আইন ও মানবাধিকার উভয়েরই লঙ্ঘন। মন্ত্রী নিজে ছবি না তুলেও, তাঁর দলবল এবং উপস্থিত মানুষদের এই ধরনের ঘটনার প্রতি সংবেদনশীলতা বজায় রাখা উচিত ছিল।
বিজয় শাহের পুরোনো বিতর্কও আলোচনায়
এই প্রথম নয় যখন বিজয় শাহ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি তিনি ভারতীয় সেনার একজন উচ্চপদস্থ মহিলা কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। তিনি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তাকে "সন্ত্রাসবাদীদের বোন" বলেছিলেন। কর্নেল কুরেশি যখন অপারেশন সিন্দুর সম্পর্কে মিডিয়াকে তথ্য দিচ্ছিলেন, তখনই এই মন্তব্য করা হয়।
সোফিয়া কুরেশি মন্তব্য মামলা: ন্যায়পালিকা কঠোর হয়েছে
বিজয় শাহের এই বক্তব্যের উপর সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্ট উভয়ই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নোটিশ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। আদালত এটিকে গুরুতর অপরাধ বলে মনে করে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয়। মন্ত্রী জনসম্মুখে ক্ষমা চাওয়ার পরও আদালত তাঁর ক্ষমা প্রত্যাখ্যান করে। এই মন্তব্যকে দেশের সেনা এবং মহিলা কর্মকর্তাদের অপমান বলে অভিহিত করা হয় এবং এটিকে অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে মনে করা হয়।
রাজনৈতিক প্রভাব ও আইনের ভারসাম্য
বিরোধী দল এবং সামাজিক সংগঠনের অভিযোগ, বিজয় শাহের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁরা দাবি করেছেন যে, মন্ত্রীর জাতীয় ভোটব্যাংক এবং রাজনৈতিক প্রভাব তাঁকে রক্ষার অবস্থানে রেখেছে। যদিও সরকার একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে এবং সুপ্রিম কোর্টে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তবুও সমালোচকদের মতে, আইনি প্রক্রিয়া যতক্ষণ না সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা
কর্নেল কুরেশি বিতর্কের মামলায় বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বিজয় শাহকে গ্রেফতার থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা দিয়েছে। আদালত বর্তমানে তাকে গ্রেফতার থেকে সুরক্ষা দিয়েছে, তবে মামলা এখনও আইনি প্রক্রিয়ায় আছে এবং চূড়ান্ত রায় আসা বাকি।