তেলঙ্গানার পর কংগ্রেস এবার কর্ণাটকেও SC সংরক্ষণের তিনটি শ্রেণীতে বিভক্তির মডেল বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে।
জাতিগত জনগণনা: রাজনীতিতে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর জন্য গৃহীত পদক্ষেপ অনেকবার সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। এবার আলোচনার বিষয় হলো, অনুসূচিত জাতির সংরক্ষণে শ্রেণীবিন্যাসের প্রশ্ন। পূর্বে বসপা প্রধান মায়াবতীর বিরোধিতার পর কেন্দ্র সরকার পিছিয়ে গেলেও, এবার কংগ্রেস একই বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকায় দেখা দিচ্ছে।
তেলঙ্গানা এবং কর্ণাটকে সংরক্ষণের শ্রেণীবিন্যাসের সূচনা
তেলঙ্গানার কংগ্রেস সরকার অনুসূচিত জাতির সংরক্ষণকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সফলভাবে বাস্তবায়িতও হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রেভন্ত রেড্ডির নেতৃত্বে তেলঙ্গানা সরকার এই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করেছে।
তেলঙ্গানায় SC সংরক্ষণকে তিন ভাগে বিভক্ত করার পর কংগ্রেস কর্ণাটকেও একই পদক্ষেপ নিয়েছে। কর্ণাটকে ১৭ মে পর্যন্ত একটি জরিপ চলছে, যেখানে অনুসূচিত জাতির ১০১টি উপজাতির সনাক্তকরণ করা হবে। এরপর রাজ্য সরকার SC সংরক্ষণে শ্রেণীবিন্যাসের সিদ্ধান্ত নেবে।
কর্ণাটকে সংরক্ষণের শ্রেণীবিন্যাস এবং জরিপ
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারমৈয়া এই প্রক্রিয়াটি শুরু করেছেন এবং এর অধীনে রাজ্য সরকার ন্যায়াধীশ নাগমোহন দাস কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে জরিপ শুরু করেছে। তাঁর বক্তব্য, এই জরিপের উদ্দেশ্য হলো অনুসূচিত জাতির বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে অভিজ্ঞতামূলক তথ্য তৈরি করা। এতে সংরক্ষণের সুফলের সঠিক বন্টন নিশ্চিত করা হবে। এই সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের পর নেওয়া হয়েছে, যা রাজ্যগুলিকে SC-ST সংরক্ষণে উপ-শ্রেণীবিন্যাস করার অধিকার দিয়েছে।
তেলঙ্গানায় ইতিমধ্যেই কোটার মধ্যে কোটা প্রযোজ্য
তেলঙ্গানায় এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। এখানকার সরকার ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে SC সংরক্ষণকে তিন ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। SC-এর ৫৯টি উপজাতিকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। এই গ্রুপ অনুযায়ী, সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া ১৫টি উপজাতিকে ১% সংরক্ষণ, মধ্যবর্তী ১৮টি উপজাতিকে ৯% সংরক্ষণ এবং উন্নত অবস্থানের ২৬টি উপজাতিকে ৫% সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
মায়াবতীর বিরোধিতা এবং কংগ্রেসের কৌশল
বসপা প্রধান মায়াবতী ২০২৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে এটিকে দলিত সম্প্রদায়ের ঐক্য ভঙ্গের চেষ্টা বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই পদক্ষেপ অনুসূচিত জাতির মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করবে এবং এর ফলে কিছু উপজাতি উপকৃত হবে, অন্যরা পিছিয়ে পড়বে। তবে, কংগ্রেস এখন একই বিষয়টিকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করার জন্য অগ্রণী ভূমিকায় অবস্থান করছে। তেলঙ্গানায় এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর, কংগ্রেস এখন কর্ণাটকেও এটি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মায়াবতীর নীরবতা এবং উত্তরপ্রদেশে সংরক্ষণ
যদিও মায়াবতী এখন নীরব। পূর্বে যখন এই বিষয়টি উঠে এসেছিল, তখন মায়াবতী তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন, কিন্তু এখন কর্ণাটক এবং তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের পদক্ষেপের পর তাঁর কোনও বক্তব্য আসেনি। এর পিছনে অনেক রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে দলিত সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভাজনের কথা চলে আসছে। উত্তরপ্রদেশে অনুসূচিত জাতিকে ২০% সংরক্ষণ দেওয়া হয় এবং এখানে যাটব সম্প্রদায় সর্বাধিক উপকৃত হয়, অন্য জাতিগুলো তেমন উপকৃত হয় না। এই বিষয়টি বসপার জন্য সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ যাটব সম্প্রদায় বসপার ঐতিহ্যবাহী ভোটার।
রাজনীতি এবং সংরক্ষণের ভবিষ্যৎ
সুপ্রিম কোর্টের রায় রাজ্যগুলিকে SC-ST শ্রেণীতে উপ-শ্রেণীবিন্যাস করার অধিকার দেয়, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত অনেক সময় রাজনীতির জন্য সংবেদনশীল হতে পারে। রাজ্যগুলিতে যখন সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন জাতির মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়, তখন তা রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানো সহজ হয়ে ওঠে।