জোধপুরে ১০ কিলোগ্রাম ওজনের বিরল টিউমার অপসারণ: চিকিৎসকদের অবাক

জোধপুরে ১০ কিলোগ্রাম ওজনের বিরল টিউমার অপসারণ: চিকিৎসকদের অবাক
সর্বশেষ আপডেট: 13-06-2025

রাজস্থানের জোধপুর শহরে চিকিৎসকরা এমন একটি বিরল টিউমার অপারেশন করে বের করেছেন, যা দেখে নিজেরাই অবাক হয়েছেন। ৪২ বছর বয়সী এক মহিলার পেটে এই টিউমার গত দুই বছর ধরে বেড়ে উঠছিল, কিন্তু লক্ষণগুলি সাধারণ বলে মনে হওয়ায় এর সনাক্তকরণ সম্ভব হচ্ছিল না। পরীক্ষায় দেখা গেছে এটি একটি বিরল প্যারোভেরিয়ান টিউমার, যা পৃথিবীতে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র একজনের হয়।

মহিলা সামান্য ব্যথা অনুভব করছিলেন, কিন্তু ভেতরে ‘বিশাল বিপদ’ বেড়ে উঠছিল

জোধপুরের বাসিন্দা রীনা চৌধুরী (নাম পরিবর্তিত), গত কয়েক মাস ধরে হালকা পেটের ব্যথা ও ফুলে যাওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন। প্রাথমিক পরীক্ষায় এটিকে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বলে মনে করা হয়েছিল, কিন্তু ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া এবং পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠার পর তিনি জোধপুরের মথুরাদাস মাথুর হাসপাতালের চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করেন। চিকিৎসকরা যখন আল্ট্রাসাউন্ড ও সিটি স্ক্যান করেন, তখন তাদের হতবাক করে দেয়—মহিলার পেটে ১০ কিলোগ্রামের বেশি ওজনের একটি টিউমার ছিল, যা অনেক অঙ্গে চাপ প্রয়োগ করছিল। তাত্ক্ষণিক অপারেশনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

রোগের নাম শুনে পরিজনরা হতবাক

এই টিউমার প্যারোভেরিয়ান সেরোসিস্টাডেনোমা নামক বিরল শ্রেণীভুক্ত। এটি ডিম্বাশয়ের কাছাকাছি উপ-কলা থেকে উৎপন্ন হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো লক্ষণ ছাড়াই বৃদ্ধি পায়। এই রোগ সম্পর্কে তথ্য দিতে গিয়ে ডাঃ নীলেশ মাথুর জানান, এই কেসকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলা যেতে পারে। এই টিউমার ধীরে ধীরে মহিলার অন্যান্য অঙ্গ যেমন কিডনি, অন্ত্র এবং লিভারকে চাপ দিচ্ছিল, কিন্তু সৌভাগ্যবশত এটি ক্যান্সার ছিল না।

৪ ঘন্টা ধরে চলে অপারেশন, ৭ জন চিকিৎসকের দল অসাধারণ কাজ করেছে

এই জটিল অপারেশনের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয়। অপারেশন চার ঘন্টা ধরে চলে, যাতে টিউমার সফলভাবে বের করা হয়। অপারেশনের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় যাতে মহিলার প্রজনন অঙ্গ এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ গঠন নিরাপদ থাকে। অপারেশনের পর রোগীকে ২৪ ঘন্টা আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। চিকিৎসকদের মতে, মহিলার আর কোনো ঝুঁকি নেই এবং ১৫ দিনের মধ্যে তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।

সময়মতো পরীক্ষা না হলে অবস্থা আরও জটিল হতে পারত

চিকিৎসকরা এও সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যদি মহিলা আরও কিছু সময় চিকিৎসায় বিলম্ব করতেন, তাহলে এই টিউমার ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারত অথবা আশেপাশের অঙ্গগুলিকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারত। এই কেসটি কেবলমাত্র চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিক থেকে চ্যালেঞ্জিং ছিল না, বরং এটি সাধারণ মানুষের জন্য একটি সতর্কতামূলক বার্তাও, যে শরীরে অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এই অপারেশন জোধপুরের চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি নতুন পরিচয় দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক দলকে সম্মানিত করার ঘোষণা দিয়েছে। মেডিকেল ছাত্রদের জন্য এই কেসটি একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে এবং এটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করার প্রস্তুতিও চলছে।

Leave a comment