ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের সিইও সুমন্ত কাঠপালিয়ার পদত্যাগের পর ব্যাংকের শেয়ারের দামে পতন দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের নতুন নেতৃত্বের দিকে নজর রাখা উচিত।
ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের শেয়ারের দামে সম্প্রতি তীব্র পতন লক্ষ্য করা গেছে, এবং এই পতন ব্যাংকের সিইও সুমন্ত কাঠপালিয়ার পদত্যাগের পরই ঘটেছে। ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ব্যাংকের শেয়ার বাজারে ৩.১% কমে ৮১১.২০ টাকায় খোলে। এদিনের শুরুতে ব্যাংকের শেয়ারের দাম ছিল ৮৩৭.৩০ টাকা, কিন্তু সিইও-র পদত্যাগের পর দামে তীব্র পতন দেখা দেয়। এই অবস্থা ব্যাংকের শেয়ারে ইতিমধ্যেই বিনিয়োগকারী অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
এই পতনের কারণ কি?
ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের সিইও সুমন্ত কাঠপালিয়ার পদত্যাগের কারণ হিসেবে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে ধরা হচ্ছে, যেখানে ব্যাংকের ডেরিভেটিভ পোর্টফোলিওতে বিসংগতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের পর ব্যাংকের অনিয়মের কথা প্রকাশ পেয়েছে, যার ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়েছে। তদুপরি, ব্যাংকের ডেপুটি সিইও অরুণ খুরানারও পদত্যাগের খবর প্রকাশ পেয়েছে, যিনি অ্যাকাউন্টিংয়ে ত্রুটি পেয়েছিলেন। এই পদত্যাগ এবং ত্রুটিগুলির ফলে ব্যাংকের অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের কারণ কি?
এছাড়াও, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, যেখানে পাকিস্তানের মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন যে ভারত আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। এই অভিযোগ আন্তর্জাতিক বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের উপর প্রভাব ফেলেছে। এর আগেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে অনেক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, যার ফলে বাণিজ্যিক অস্থিরতা বেড়েছে।
ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের আর্থিক ফলাফল কেমন?
ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের আর্থিক ফলাফলও বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ব্যাংক ১০ই মার্চ ২০২৫ তারিখে ঘোষণা করেছিল যে তাদের ডেরিভেটিভ পোর্টফোলিওতে কিছু বিসংগতি পেয়েছে। ফলে ব্যাংকের মোট নেটওয়ার্থের উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিবেদনের মতে, মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ব্যাংক প্রায় ১,৯৬০ কোটি টাকা লোকসান গ্রাস করতে পারে। এই লোকসান বিশেষ করে ব্যাংকের ডেরিভেটিভ পোর্টফোলিওতে ত্রুটির কারণে হয়েছে, যা পরবর্তীতে একটি স্বাধীন পেশাদার সংস্থা গ্রান্ট থর্নটন উন্মোচন করেছে।
শেয়ার বাজারে পতন এবং ব্যাংকের অবস্থা
ব্যাংকের জন্য এটি কঠিন সময়, কারণ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা এবং নেতৃত্ব উভয়ই সমস্যার সম্মুখীন। সিইও-র পদত্যাগের পর, ব্যাংকের মধ্যে অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে যে, কোনও কোম্পানির নেতৃত্বে পরিবর্তন হলে, তার প্রভাব শেয়ারের দামের উপর পড়ে।
ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের শেয়ারের দামের অবস্থা: বিনিয়োগকারীরা কি করবেন?
ইন্ডাসইন্ড ব্যাংকের শেয়ারের দামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পতন বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ৩০শে এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ব্যাংকের শেয়ার বাজারে ৩.১% কমে ৮১১.২০ টাকায় খোলে। গত কয়েক মাসের কথা বললে, ব্যাংকের শেয়ারের দাম এই বছর প্রায় ১৫% কমেছে, আর গত এক বছরে ৪৬% কমেছে। তবে গত এক মাসে শেয়ারের দামে ২৫% বৃদ্ধি দেখা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকের আর্থিক সমস্যা এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর নিকট ভবিষ্যতে নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন হতে পারে। তবে এই সমস্যাগুলি ইতিমধ্যেই শেয়ারের দামে দেখা গেছে। এর অর্থ হল, ব্যাংকের বর্তমান সমস্যাগুলি বাজার ইতিমধ্যেই তার দামে সন্নিবেশ করে ফেলেছে, এবং দীর্ঘমেয়াদে এই পরিবর্তনটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ হবে না।
বিশ্লেষকদের মতামত: বিনিয়োগকারীরা কি করবেন?
মাস্টার ক্যাপিটাল সার্ভিসেসের এভিপি (রিসার্চ অ্যান্ড এডভাইজরি) বিষ্ণু কান্ত উপাধ্যায়ের মতে, ব্যাংকের সিইও সুমন্ত কাঠপালিয়ার পদত্যাগ এবং ব্যাংকের আর্থিক সমস্যার ফলে স্বল্পমেয়াদে শেয়ারের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ বাজার ইতিমধ্যেই এই সমস্যাগুলি সন্নিবেশ করে ফেলেছে। উপাধ্যায় বলছেন, বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের নতুন নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা এবং স্থায়িত্বের দিকে নজর রাখা উচিত।
প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অবস্থা কেমন?
প্রযুক্তিগতভাবে, যদি শেয়ার ৭৭০ টাকার গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেল ভেঙে যায়, তাহলে এটি নিম্নমুখী ৭১২ টাকা এবং তারপর ৬৪০ টাকা পর্যন্ত যেতে পারে। অন্যদিকে, উপরের দিকে, ৯২০-৯৪০ টাকার স্তরে শেয়ারের প্রতিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে।