দিল্লি-এনসিআর-এর জন্য সুসংবাদ: দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে’র টানেল চালু

দিল্লি-এনসিআর-এর জন্য সুসংবাদ: দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে’র টানেল চালু
সর্বশেষ আপডেট: 2 দিন আগে

দিল্লি-এনসিআর-এর মানুষদের জন্য সুসংবাদ। এখন ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (IGI Airport) পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় ও ঝামেলা দুটোই কমে গেছে।

দিল্লি-এনসিআর-এর যাত্রীদের জন্য একটি বড় সুসংবাদ এসেছে। এখন ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (IGI Airport) -এ পৌঁছানো শুধুমাত্র সহজ হয়েছে তাই নয়, যানজটের ঝামেলা থেকেও মুক্তি মিলবে। দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মিত দুটি অত্যাধুনিক টানেল আজ থেকে ২৪ ঘন্টা খোলা হয়েছে, যার ফলে মানেসর, গুরুগ্রাম এবং অন্যান্য এলাকা থেকে দিল্লি বিমানবন্দর পর্যন্ত যাত্রা মাত্র ৩৫ মিনিটে সম্পন্ন করা যাবে।

যেখানে আগে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে দুই ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগত, সেখানে এখন যাত্রীরা যানজটে আটকে পড়ার ঝামেলা থেকেও মুক্তি পাবে। এই সুবিধা বিশেষ করে সেইসব যাত্রীদের জন্য বরদান হিসেবে প্রমাণিত হবে যারা সময়সীমা মেনে ফ্লাইট ধরতে বের হয়।

যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান

দিল্লি-জয়পুর হাইওয়েতে, বিশেষ করে গুরুগ্রামের দিকে প্রতিদিন ভয়াবহ যানজটের অবস্থা বিরাজ করে। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ যানবাহন চলাচল করে। সবচেয়ে বড় সমস্যা সরহৌল বর্ডার এবং রজৌকরি ফ্লাইওভারে দেখা যায়, যেখানে গুরুগ্রামের দিকে ২৪ লেইনের রাস্তা দিল্লি সীমান্তে প্রবেশ করার সাথে সাথে মাত্র চার লেইনে পরিণত হয়। এই পরিবর্তনের কারণে সারা যানজটের অবস্থা তৈরি হয়।

এখন যখন দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে'র দুটি টানেল চালু করা হয়েছে, তখন এটি যানজটের সমস্যা অনেকটা কমিয়ে আনবে। এছাড়াও, এটি আশা করা হচ্ছে যে এতে NH-48 এবং মহিপালপুরের মতো ব্যস্ত এলাকা থেকে যানবাহনের চাপ কমে যাবে।

টানেলের দৈর্ঘ্য এবং বৈশিষ্ট্য

এই নতুন সুবিধায় দুটি প্রধান টানেল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  • প্রথম টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.২৫ কিলোমিটার, যা দ্বারকার যশোভূমি কনভেনশন সেন্টার পর্যন্ত যায়।
  • দ্বিতীয় টানেল ২.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা সরাসরি টার্মিনাল ৩ (T3) পর্যন্ত পৌঁছায়।

এতে ৪.৫ মিটার উঁচু যানবাহন পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। উভয় টানেলে যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং নজরদারির জন্য আধুনিক ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • চব্বিশ ঘন্টা সিসিটিভি নজরদারি
  • কন্ট্রোল রুম
  • জরুরী প্রস্থান (ইমারজেন্সি এক্সিট)
  • ভেন্টিলেশন এবং অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা
  • মৌসুমি বৃষ্টিপাত মোকাবেলা করার জন্য বিশেষ ক্যাচ ড্রেন সিস্টেম

ক্যাচ ড্রেন এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ভারী বৃষ্টিপাতের সময়ও পানি টানেলে প্রবেশ করতে না পারে। তবে এর আসল পরীক্ষা হবে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময়।

দিল্লি-এনসিআর-এর জন্য বৃহৎ সংযোগ

এই টানেল চালু হওয়ার ফলে শুধুমাত্র IGI বিমানবন্দরই নয়, দিল্লি, গুরুগ্রাম, মানেসর, দ্বারকা, বসন্ত কুঞ্জ, ফরিদাবাদ এবং নয়ডার মতো এলাকার মধ্যেও যোগাযোগ উন্নত হবে। এছাড়াও এই সংযোগ পানিপথ, সোনিপত এবং চণ্ডীগড়ের মতো উত্তর ভারতের অন্যান্য প্রধান শহর পর্যন্ত মাল এবং যাত্রী পরিবহনের গতিও বাড়াবে।

বিশেষ করে মানেসর এবং গুরুগ্রামের মতো শিল্প এলাকা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দ্রুত এবং যানজটমুক্ত পৌঁছানো এখন রপ্তানিকারক, কর্পোরেট যাত্রী এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক হবে। এই সংযোগ দিল্লি-এনসিআরকে একটি সমন্বিত পরিবহন নেটওয়ার্কের দিকে নিয়ে যাবে।

যাত্রী ও পরিবহনকারীদের সুবিধা

যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনকারী এবং ক্যাব চালকদের জন্যও এই সুবিধা অত্যন্ত লাভজনক। আগে ক্যাব চালকদের বিমানবন্দরে পৌঁছাতে NH-48-এর সাহায্য নিতে হত, যা প্রায়শই যানজটে ভরা থাকত। এখন তারা দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে কম সময়ে যানজট ছাড়াই যাত্রীদের বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে পারবে। এতে শুধুমাত্র সময়ের সাশ্রয়ই হবে না, বরং জ্বালানী এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কমবে।

আর্থিক কর্মকাণ্ডেও উন্নতি আসবে

টানেল চালু হওয়ার ফলে শুধুমাত্র ভ্রমণ নয়, দিল্লি-এনসিআর-এর আর্থিক কর্মকাণ্ডেও গতি আসবে। উন্নত সড়ক যোগাযোগের প্রভাব লজিস্টিকস, পর্যটন, হোটেল শিল্প এবং ই-কমার্সের মতো সেবাগুলিতেও পড়বে। এয়ার কার্গো সংক্রান্ত মালবাহী যানবাহন এখন সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সুবিধা পাবে।

নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা

টানেলের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি টানেলে প্রতি ১০০ মিটার দূরত্বে জরুরী প্রস্থান তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও বায়ুচলাচল এবং অগ্নি নিরাপত্তার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। কোন যানবাহন যদি মাঝপথে নষ্ট হয় বা দুর্ঘটনা ঘটে, তবে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে নজরদারি করা হবে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া

টানেল চালু হওয়ার প্রথম দিনেই সাধারণ যাত্রী এবং ক্যাব চালকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। একজন ক্যাব চালক জানিয়েছেন যে আগে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগত, কিন্তু এখন তারা ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটে সহজেই সেখানে পৌঁছাতে পারে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই উদ্যোগের প্রশংসা করে দিল্লির যানজট সমস্যার সমাধানের দিকে এটিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।

পরিকল্পনা

এই টানেল নির্মাণের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র বিমানবন্দর সংযোগ নয়, বরং পুরো এনসিআর অঞ্চলকে একটি সুগম এবং যানজটমুক্ত ট্রাফিক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করা। সরকারের পরিকল্পনা হল আগামী দিনগুলিতে এই এক্সপ্রেসওয়েটিকে মেট্রো করিডোর এবং বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (BRTS) -এর সাথেও যুক্ত করা, যাতে এটি সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য উপযুক্ত এবং সুবিধাজনক হতে পারে।

Leave a comment