আয়কর রিফান্ড: দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার নতুন ব্যবস্থা

আয়কর রিফান্ড: দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার নতুন ব্যবস্থা
সর্বশেষ আপডেট: 21-06-2025

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার পর করদাতাদের আর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে না রিফান্ডের জন্য। সরকারের পরিকল্পনা হলো রিফান্ড প্রক্রিয়াকে আগের চেয়ে আরও দ্রুত ও দক্ষ করে তোলা, যাতে করদাতারা সময়মতো তাদের টাকা ফেরত পেতে পারেন।

Income Tax Refunds: আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন এমন লক্ষ লক্ষ করদাতার জন্য বড় সুসংবাদ এলো। এবার তাদের ট্যাক্স রিফান্ডের জন্য সপ্তাহ বা মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে না। সরকার ট্যাক্স রিফান্ড প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও স্বচ্ছ করার জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে। এই নতুন ব্যবস্থার অধীনে প্যান ও ব্যাংক একাউন্টের যাচাই রিয়েল টাইমে করা হবে, যার ফলে রিফান্ড সরাসরি ও নিরাপদে একাউন্টে পাঠানো যাবে।

এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া অর্থাৎ NPCI, যারা সম্প্রতি প্যান-ব্যাংক লিঙ্কিংয়ের জন্য একটি নতুন API সুবিধা চালু করেছে। এই সুবিধার মাধ্যমে এখন প্যান নম্বর ও ব্যাংক একাউন্টের বিবরণের যাচাই তৎক্ষণাৎ করা যাবে। এই পদক্ষেপ কেবল করদাতাদের জন্যই নয়, সরকারের ই-গভর্ন্যান্স ও ডিজিটালাইজেশনের দিকেও একটি বড় ধাপ।

নতুন ব্যবস্থা কী এবং কীভাবে কাজ করে

NPCI কর্তৃক প্রকাশিত নতুন API ব্যবস্থা আয়কর পোর্টাল এবং ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সিস্টেমকে সরাসরি সংযুক্ত করে। API অর্থাৎ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস একটি সফটওয়্যার সেতু হিসেবে কাজ করে, যা দুটি ডিজিটাল ব্যবস্থাকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে ডেটার নিরাপদ আদান-প্রদানের সুবিধা দেয়।

এই API-এর মাধ্যমে আয়কর বিভাগ এখন করদাতাদের প্যান নম্বর, ব্যাংক একাউন্টের স্ট্যাটাস এবং একাউন্টধারীর নামের যাচাই ব্যাংকের ডাটাবেস থেকে তৎক্ষণাৎ করতে পারবে। আগে এই প্রক্রিয়া ম্যানুয়াল ছিল এবং অনেক সময় লাগত। কিন্তু এখন এই কাজ মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

রিফান্ড প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের প্রভাব

এখন পর্যন্ত করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার পর রিফান্ড পেতে অনেক সময় ১০ থেকে ১৫ কার্যদিবস বা তার বেশি সময় লেগে যেত। অনেক ক্ষেত্রে রিফান্ডে দেরির প্রধান কারণ ছিল ব্যাংক একাউন্ট যাচাইয়ে ত্রুটি বা তথ্যের অসঙ্গতি।

নতুন API সুবিধা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে। যাচাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ও রিয়েল টাইম হয়ে যাবে, যার ফলে ভুলের সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে এবং রিফান্ড সময়মতো পাওয়া যাবে।

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনা

সরকারের লক্ষ্য কেবল রিফান্ড প্রক্রিয়াকে দ্রুত করা নয়, বরং সমগ্র ট্যাক্স প্রশাসনকে স্বচ্ছ ও ডিজিটাল করে তোলা। এর অধীনে সরকার চায় প্যান, আধার এবং ব্যাংক একাউন্ট তিনটিই একে অপরের সাথে যুক্ত থাকুক যাতে করদাতার পরিচয়, ব্যাংকের বিস্তারিত এবং রিটার্ন প্রসেসিংয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য না থাকে।

NPCI কর্তৃক প্রকাশিত সার্কুলারে স্পষ্ট করা হয়েছে যে এই API বিশেষ করে সরকারি বিভাগগুলির জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য হল সরকারি সুযোগ-সুবিধা, ভর্তুকি এবং রিফান্ড সরাসরি উপকারভোগীদের একাউন্টে স্থানান্তর করা।

ব্যাংকগুলিকে করতে হবে সিস্টেম আপডেট

নতুন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য সকল ব্যাংককে তাদের IT সিস্টেম আপডেট করা বাধ্যতামূলক হবে। NPCI সকল ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে যে তারা এই ব্যবস্থাটিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করবে এবং তাদের কোর ব্যাংকিং সিস্টেমকে API-র সাথে সংযুক্ত করবে।

তবে, এই প্রক্রিয়া প্রযুক্তিগতভাবে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সাইবার সিকিউরিটি, ডেটা গোপনীয়তা এবং সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ইত্যাদি বিষয়গুলিতে বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন হবে। তবুও এটিকে দীর্ঘমেয়াদী এবং অত্যন্ত উপকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

প্যান ও আধার নিয়ে নতুন গাইডলাইন

এই নতুন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো যে এখন নতুন প্যান কার্ডের জন্য আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড (CBDT) স্পষ্ট করেছে যে ১ জুলাই ২০২৫ থেকে প্যানের জন্য আবেদন করার জন্য আধার নম্বর প্রয়োজন হবে।

এছাড়াও, যাদের আগে থেকেই প্যান ও আধার উভয়ই আছে, তাদের এগুলো লিঙ্ক করানো বাধ্যতামূলক হবে। সরকার এর জন্য শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ নির্ধারণ করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি এই লিঙ্কিং না করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্যান নম্বর নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হবে।

আইনজ্ঞদের মতামত

আইনি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ উৎকর্ষ ভট্টাচার্য বলেন, NPCI-এর নতুন ব্যবস্থা করদাতাদের ডেটার প্রামাণিকতা বাড়াবে এবং জালিয়াতির সম্ভাবনা কমাবে। পাশাপাশি, এটি নিশ্চিত করা যাবে যে রিফান্ড শুধুমাত্র সেই একাউন্টগুলিতে যাবে যা সঠিক এবং প্যানের সাথে সংযুক্ত।

তিনি এটাও মনে করেন যে সরকার কর্তৃক ডিজিটালাইজেশনকে উৎসাহিত করার ফলে কেবল ই-ফাইলিংয়ের অভিজ্ঞতা উন্নত হবে না, বরং সিস্টেমে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতাও বৃদ্ধি পাবে।

করদাতারা কী সুবিধা পাবেন

  • দ্রুত রিফান্ড পাওয়া যাবে: রিয়েল টাইম যাচাইয়ের ফলে রিফান্ড প্রক্রিয়া দ্রুত হয়ে যাবে।
  • ভুলের সম্ভাবনা কম: স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার ফলে ডেটায় মানব ত্রুটি হবে না।
  • সরাসরি একাউন্টে স্থানান্তর: প্যান ও ব্যাংক একাউন্ট লিঙ্ক থাকার ফলে সরকার সরাসরি রিফান্ড পাঠাতে পারবে।
  • জাল একাউন্টে নিয়ন্ত্রণ: সিস্টেম কেবলমাত্র সেই একাউন্টগুলিকে মেনে নেবে যা যাচাইকৃত।
  • প্রক্রিয়া স্বচ্ছ: পুরো প্রক্রিয়া পোর্টালে ট্র্যাক করা যাবে, যার ফলে বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

Leave a comment