নয়াদিল্লি: বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) ‘সাবধান অপ্টিমিজম’ (cautious optimism) প্রকাশ করেছে। ২০২৫ সালের মে মাসের আরবিআই বুলেটিনে বলা হয়েছে, ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে টিকে আছে এবং এ বছর জাপানকে পিছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে।
আরবিআই তাদের ‘State of the Economy’ প্রবন্ধে লিখেছে, "মূল্যস্ফীতির চাপ অনেকটা কমে গেছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের মধ্যে এটি লক্ষ্য অনুযায়ী স্থির হয়ে যাবে। উৎকৃষ্ট রবি ফসল এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা গ্রামীণ চাহিদাকে শক্তিশালী করবে এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।"
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা
আরবিআই বলেছে, ভারতের অর্থনীতি মুদ্রানীতি, আর্থিক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দ্বারা সুরক্ষিত। নীতি নির্ধারণে স্বচ্ছতা, স্পষ্টতা এবং ধারাবাহিকতা ভারতকে বিনিয়োগ ও উন্নয়নের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলছে।
বুলেটিনে এটাও বলা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক পুনর্গঠন এবং শিল্পনীতিতে পরিবর্তনের মধ্যে ভারত একটি "সংযোগকারী দেশ" (connector country) হিসেবে উঠে আসছে, বিশেষ করে প্রযুক্তি, ডিজিটাল সেবা এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো ক্ষেত্রে। যুক্তরাজ্যের সাথে সম্প্রতি সম্পন্ন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) এই দিকে একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ফলে বাজারে অস্থিরতা
তবে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্ধিত উত্তেজনার কারণে কিছু সময়ের জন্য আর্থিক বাজারে প্রচণ্ড অস্থিরতা দেখা গেছে। India VIX দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু উত্তেজনার হ্রাস এবং দেশীয় মূল্যস্ফীতির নমনীয়তার ফলে পরিস্থিতিতে উন্নতি হয়েছে।
আরবিআইয়ের মতে, "স্থানীয় আর্থিক বাজারে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে, যার কৃতিত্ব ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার হ্রাস, বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়িক পরিস্থিতিতে উন্নতি এবং দেশীয় মুদ্রাস্ফীতির নমনীয়তায়।"
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন
একটি আকর্ষণীয় পরিবর্তন হলো, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (DIIs) মালিকানা এখন Nifty-500 কোম্পানিগুলিতে বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের (FPIs) চেয়ে বেশি হয়েছে। এটি ইঙ্গিত করে যে ভারতীয় শেয়ার বাজারে একটি গঠনগত পরিবর্তন ঘটছে, যেখানে মিউচুয়াল ফান্ড এবং বীমা কোম্পানীর মতো DII বিনিয়োগকারীরা বাজারকে আরও স্থিতিশীল করে তুলছে।
আরবিআই এটাও জানিয়েছে যে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নেওয়া নীতিগত পদক্ষেপের ফলে তরলতার অবস্থায় উন্নতি হয়েছে এবং আর্থিক বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে।
এই সমস্ত সূচক দেখে স্পষ্ট যে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ভারত কেবল নিজেকে স্থির রাখছে তাই নয়, নতুন সুযোগগুলি কাজে লাগানোর জন্যও প্রস্তুত। শক্তিশালী ম্যাক্রোইকোনমিক ভিত্তি, স্থায়ী নীতি কাঠামো এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ভারতকে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের একটি প্রধান ইঞ্জিন হিসেবে তুলে ধরেছে।