অযোধ্যায় শ্রীরাম জন্মভূমিতে দ্বিতীয় প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা

অযোধ্যায় শ্রীরাম জন্মভূমিতে দ্বিতীয় প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা
সর্বশেষ আপডেট: 03-06-2025

৩ জুন সকাল ৬:৩০ টা থেকে শ্রীরাম জন্মভূমিতে দ্বিতীয় প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়েছে। এই বিশেষ অনুষ্ঠান ৩ জুন থেকে ৫ জুন পর্যন্ত চলবে। এই সময়কালে রাম জন্মভূমি মন্দিরের প্রথম তলায় অবস্থিত রাম দরবার সহ মোট আটটি মন্দিরে দেব বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

অযোধ্যার প্রাণ প্রতিষ্ঠা: অযোধ্যা আবারও আস্থা, সংস্কৃতি ও ভক্তির ঐতিহাসিক সংগমের সাক্ষী হচ্ছে। ২২ জানুয়ারি ২০২৪-তে শিশু রূপে প্রতিষ্ঠিত রামললার পর এখন ৩ জুন ২০২৫ থেকে ভগবান শ্রীরামকে "রাজা রাম" রূপে প্রথম তলায় প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই অনুষ্ঠান কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ, যা ভারতের আত্মার সাথে গভীরভাবে জড়িত।

তিন দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান ৩ জুন থেকে শুরু হয়ে ৫ জুন, গঙ্গা দশমীর পবিত্র উৎসব পর্যন্ত চলবে। শ্রীরাম জন্মভূমির প্রথম তলায় নির্মিত দরবারে রাজা রামের সাথে মা সীতা, অনুজ লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন এবং সেবক হনুমানেরও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এই দরবার মন্দির পরিষদের প্রধান আকর্ষণ হবে, যেখানে আগত ভক্তগণ প্রভু শ্রীরামের রাজকীয় রূপের দর্শন করতে পারবেন।

পরকোটায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দেবালয় ও দেব বিগ্রহ

রাম মন্দিরের চারপাশে নির্মিত পরকোটায়ও ছয়টি সহায়ক মন্দিরে দেবতাদের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে।

  • ঈশান কোণে শিবলিঙ্গ
  • অগ্নি কোণে শ্রীগণেশ
  • দক্ষিণে হনুমান
  • নৈঋত্য কোণে সূর্য দেব
  • বায়ব্য কোণে ভগবতী মা
  • উত্তরে মা অন্নপূর্ণা

এছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে শেশাবতারেরও প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এই সমস্ত মন্দির সম্পূর্ণ মন্দির পরিষদকে একটি ঐশ্বরিক শক্তি দিয়ে পরিপূর্ণ করছে।

রাজা রামের দরবারের বৈশিষ্ট্য

রাম মন্দিরের প্রথম তলায় নির্মিত দরবারে এখন ভগবান শ্রীরামের রাজকীয় রূপের দর্শন করা যাবে। ৩৮০ ফুট দৈর্ঘ্য, ২৫০ ফুট প্রস্থ এবং ১৬১ ফুট উচ্চতার এই মন্দির সম্পূর্ণরূপে নাগর শৈলীতে নির্মিত, যা ভারতীয় স্থাপত্যকলার অসাধারণ এক ঝলক উপস্থাপন করে। ৩৯২ খাম্বা এবং ৪৪টি দরজা সম্বলিত এই মন্দির সাজসজ্জা, শিল্পকলা এবং আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ।

অযোধ্যায় উৎসবের পরিবেশ

অযোধ্যার গলি থেকে মন্দির পরিষদ পর্যন্ত বর্ণাঢ্য সাজসজ্জা এবং ঐশ্বরিক আলোর ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে আছে। সরযূ তীরে থেকে বের হওয়া কলশ যাত্রা, ভজন-কীর্তন, বেদ পাঠ এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমগ্র নগরকে এক অলৌকিক পরিবেশে রঙিন করে তুলছে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত ভক্তগণ দর্শনের জন্য ভিড় করছেন, এবং সমগ্র নগরে জয় শ্রীরামের গগনবিদারী ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

এইবার অযোধ্যার পণ্ডিতগণ মুহূর্ত নির্বাচন করেছেন

২২ জানুয়ারির প্রথম প্রাণ প্রতিষ্ঠায় যেখানে কাশীর পণ্ডিতগণ মুহূর্ত নির্ধারণ করেছিলেন, সেখানে এইবার অযোধ্যার খ্যাতনামা পণ্ডিতগণ — পণ্ডিত প্রদীপ শর্মা, রাকেশ তিওয়ারী এবং রঘুনাথ দাস শাস্ত্রী এই শুভক্ষণ নির্ধারণ করেছেন। ৫ জুন গঙ্গা দশমীর দিন অভিজিত মুহূর্তে (সকাল ১১:২৫ থেকে ১১:৪০ পর্যন্ত) রাজা রামের প্রতিষ্ঠা করা হবে।

চন্দৌলীর বিদ্বান পণ্ডিত জয়প্রকাশ তিওয়ারীর নেতৃত্বে ১০১ জন বৈদিক আচার্য একযোগে আটটি মন্দিরে দেব বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করছেন। এই অনুষ্ঠান শাস্ত্রসম্মত, বর্ণাঢ্য এবং অতুলনীয় বৈদিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে।

পুনরায় যজ্ঞমান হলেন ডঃ অনিল মিশ্র

২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথম প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে প্রধান যজ্ঞমান হওয়া শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের সদস্য ডঃ অনিল মিশ্র আবারও এই সৌভাগ্য লাভ করেছেন। তিনি সপত্নীক এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে পুনরায় যজ্ঞমান হয়েছেন, যা একটি ধর্মীয় ও সামাজিক সম্মানের বিষয়। সুরক্ষার কড়া ব্যবস্থা এসএসপি ডঃ গৌরব গ্রোভার জানিয়েছেন অযোধ্যায় সুরক্ষার জন্য কড়া ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রতিটি প্রধান স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং সিসিটিভি, ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে, যাতে কোন ভক্তই অসুবিধার সম্মুখীন না হন।

Leave a comment