কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন ডিজিটাল উদ্যোগ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৫ সালের ৬ই জুন সরকার ‘উম্মীদ’ নামক একটি বিশেষ পোর্টাল চালু করবে।
নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট ওয়াকফ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করার পর কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সূত্র মতে, সরকার ৬ই জুন ‘উম্মীদ’ নামক একটি বিশেষ পোর্টাল চালু করতে যাচ্ছে। ওয়াকফ আইনের আওতায় এখন থেকে এই পোর্টালে ওয়াকফ সম্পত্তির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হবে।
‘উম্মীদ’ পোর্টালের উদ্দেশ্য ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা এবং তাদের পরিচালনাকে আরও কার্যকর করা। এই ডিজিটাল উদ্যোগের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণ আরও সংগঠিত এবং সুশৃঙ্খলভাবে সম্ভব হবে।
কী ‘উম্মীদ’ পোর্টাল?
‘উম্মীদ’ এর পুরো নাম হল: Unified Waqf Management, Empowerment, Efficiency, and Development। অর্থাৎ এটি একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হবে, যা ওয়াকফ সম্পত্তির সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, সবলীকরণ, দক্ষতা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। এই পোর্টাল সমস্ত ওয়াকফ বোর্ডকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে সম্পত্তির নিবন্ধন, ব্যবস্থাপনা এবং নজরদারি সম্ভব করে তুলবে।
নিবন্ধন এখন বাধ্যতামূলক
বর্তমান ওয়াকফ আইন অনুসারে, দেশের সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তিকে সংশ্লিষ্ট রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে পোর্টালে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক হবে। প্রতিটি মুতওয়াল্লিকে (সম্পত্তি ব্যবস্থাপক) নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের অধীনস্থ সম্পত্তির সম্পূর্ণ তথ্য এই পোর্টালে লিপিবদ্ধ আছে। এর অন্তর্গত সম্পত্তির বিবরণ, ভৌগোলিক তথ্য (Geo-tagging), মালিকানা দলিল এবং বার্ষিক হিসাব অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সরকার এটাও স্পষ্ট করেছে যে, নারীদের নামে নিবন্ধিত সম্পত্তি বা যেখানে নারীরা উত্তরাধিকারী, সেগুলোকে ওয়াকফ সম্পত্তি ঘোষণা করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত নারীদের সম্পত্তি সংক্রান্ত সুরক্ষাকে শক্তিশালী করে এবং ওয়াকফের নামে কারও ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি রোধ করে।
Geo-tagging এবং স্বচ্ছতা
‘উম্মীদ’ পোর্টালের আওতায় প্রতিটি ওয়াকফ সম্পত্তিকে জিও-ট্যাগ করা হবে, অর্থাৎ এর সঠিক ভৌগোলিক অবস্থান লিপিবদ্ধ করা হবে। এর ফলে দ্বিগুণ নিবন্ধন, জালিয়াতি বা দখলদারিত্বের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সমস্ত তথ্য জনসাধারণের পোর্টালে উপলব্ধ থাকবে যাতে নাগরিক, গবেষক এবং কর্মকর্তারা তা ব্যবহার করতে পারেন।
সূত্র মতে, ওয়াকফ সম্পত্তির মালিক বা ব্যবস্থাপকদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য ব্যবহার করা হবে। এতে পোর্টালে আপলোডকৃত তথ্যের সত্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং ভুল তথ্যের সম্ভাবনা কমে যাবে।
যদি নিবন্ধন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না হয়?
সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তি ৬ মাসের মধ্যে পোর্টালে নিবন্ধন করতে হবে। যদি কোনও মুতওয়াল্লি প্রযুক্তিগত কারণে বা অন্যান্য যুক্তিসঙ্গত কারণে এই সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন করতে না পারে, তাহলে তাকে ১ থেকে ২ মাস অতিরিক্ত সময় দেওয়া যেতে পারে। তবে, এই সময়সীমা শেষ হওয়ার পর নিবন্ধন ছাড়া সম্পত্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, ওয়াকফ আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অনেক আবেদন लंबित ছিল। সুপ্রিম কোর্ট ওয়াকফ আইনে স্থগিতাদেশ জারি করায় এই মামলার শুনানি অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, যা সরকারকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এখন সরকার এই পুরো ব্যবস্থাকে ডিজিটাল এবং স্বচ্ছ করার দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে।