আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: ২৬৫ জনের বেশি প্রাণহানি

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: ২৬৫ জনের বেশি প্রাণহানি
সর্বশেষ আপডেট: 14-06-2025

আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় ২৬৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে এবং ৮টি সংস্থার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানির শিকার পরিবারগুলির সাথে দেখা করেছেন।

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: ২ জুন দুপুরে আহমেদাবাদে একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা সমগ্র দেশকে কাঁপিয়ে তুলেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে কেন্দ্র সরকার ৮টি সংস্থার একটি উচ্চ-স্তরের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা

গত তিন দশকের মধ্যে এটি ভারতের সবচেয়ে গুরুতর বিমান দুর্ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই বিজে মেডিকেল কলেজের মেসে পড়ে যায়। দুর্ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রীসহ মেসে থাকা এমবিবিএস ছাত্র ও কর্মীদেরও প্রাণহানি ঘটে। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে মৃতের সংখ্যা ২৬৫ থেকে ২৭০-এর মধ্যে হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্ঘটনার পরের দিনই দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানির শিকার পরিবারগুলির সাথে দেখা করে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এ সময় তিনি গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানীর পরিবারের সদস্যদের সাথেও দেখা করেন, যাদের পরিবার এই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশ শনাক্তকরণ

দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে অনেক লাশ শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। মৃতদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে যাতে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা যায়। বিজে মেডিকেল কলেজের সিভিল হাসপাতালে ডিএনএ সংগ্রহের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। পাইলট সভরওয়ালের বাবা সহ অনেক পরিবারের সদস্য ইতোমধ্যে নমুনা দিয়েছেন।

ব্ল্যাক বক্স থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে

দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার জন্য ব্ল্যাক বক্সের খোঁজ চালানো হচ্ছিল। উদ্ধার ও রেসকিউ দল বিজে মেডিকেল কলেজের ছাদ থেকে এই বক্সটি উদ্ধার করে। এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) এটিকে তৎক্ষণাৎ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে। ব্ল্যাক বক্স থেকে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডিং এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে, যা দুর্ঘটনার কারণ স্পষ্ট করতে পারে।

৮টি সংস্থার তদন্ত কমিটি

কেন্দ্র সরকার এই ঘটনার গভীর তদন্তের জন্য ৮টি সংস্থার একটি কমিটি গঠন করেছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়েছে:

  • ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)
  • অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড (এটিএস)
  • গুজরাট পুলিশ
  • এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)
  • ডিরেক্টোরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)
  • যুক্তরাজ্যের এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্রাঞ্চ (ইউকে-এএআইবি)
  • যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি)
  • ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)

এই সকল সংস্থাকে দুর্ঘটনার প্রযুক্তিগত, মানবিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকগুলি তদন্ত করতে হবে।

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানগুলির তদন্তের নির্দেশ

এই দুর্ঘটনার পর ডিজিসিএ এয়ার ইন্ডিয়ার বহরে থাকা সকল ৩৪টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং ৭টি বোয়িং ৭৮৭-৯ রয়েছে। এই তদন্তের উদ্দেশ্য সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলি সময়মতো ধরা এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের দুর্ঘটনা রোধ করা।

এখনও অনেকেই নিখোঁজ

বিজে মেডিকেল কলেজের ডীন ডাক্তার মিনাক্ষী পারিখের মতে, দুর্ঘটনার পর ৬-৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে হোস্টেলের ছাত্র, মেস কর্মী ও অন্যান্য কর্মী রয়েছেন। মেসে রান্না কর던 ঠাকুর রবির মা ও দুই বছরের মেয়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতাল সহ অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে লাশ শনাক্তকরণের জন্য মানুষের ভিড় জমায়েত হয়েছে। সর্বত্র কান্নাকাটির শব্দ। চিকিৎসক, নার্সিং কর্মী ও প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে, কিন্তু লাশের অবস্থার কারণে প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

Leave a comment