গুজরাটের আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে বৃহস্পতিবার একটি বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, যখন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171 টেক অফ করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়।
আহমেদাবাদ: বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় সমগ্র দেশ কেঁপে উঠেছে। আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171 উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ২৫৪ জনের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, যাদের মধ্যে ১২ জন ক্রু সদস্য এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনায় গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানিরও থাকার খবর পাওয়া গেছে।
এই দুর্ঘটনাটি আবারও এ ব্যাপারে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে যে, এ ধরনের বিমানের দাম কত, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে করা হয় এবং কোন এয়ারলাইন্সের বহরে এসব বিমান রয়েছে।
বোয়িং 787-8 ড্রিমলাইনার: এক নজর
বিধ্বস্ত বিমানটি বোয়িং কোম্পানির তৈরি 787-8 ড্রিমলাইনার ছিল। এই বিমানটি দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইটের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান এয়ারলাইন্সগুলি এর নির্ভরযোগ্যতার কারণে এটিকে অগ্রাধিকার দেয়। এটি একটি ডাবল-ক্লাস বিমান যাতে বিজনেস এবং ইকোনমি ক্লাস থাকে।
এই বিমানের দাম কত?
বোয়িং ড্রিমলাইনারের দাম বিমানের সংস্করণ এবং কাস্টমাইজেশনের উপর নির্ভর করে, তবে একটি সাধারণ 787-8 ড্রিমলাইনারের আনুমানিক দাম প্রায় ২৪৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২০৭০ কোটি টাকা)। এয়ার ইন্ডিয়ার যে ড্রিমলাইনার বিমান রয়েছে, তার অনেকগুলি ২০১২ সাল থেকে পরিষেবা দিচ্ছে এবং বিধ্বস্ত বিমানটিও প্রায় ১২ বছর পুরানো বলে জানা গেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া এবং ড্রিমলাইনারের যাত্রা
এয়ার ইন্ডিয়া ২০১২ সালে বোয়িং 787-8 ড্রিমলাইনারকে তাদের বহরে যোগ করে। এর পর থেকেই এই বিমানটি এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে একটি মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে। এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে বর্তমানে ২৫টিরও বেশি ড্রিমলাইনার রয়েছে যা ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার বড় শহরগুলিতে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এই বিমানে সাধারণত ২৪৮ জন যাত্রীর বসার ব্যবস্থা থাকে, যাতে প্রায় ১৮টি বিজনেস ক্লাস এবং বাকিগুলি ইকোনমি ক্লাসের আসন থাকে। পাশাপাশি, এয়ার ইন্ডিয়া এতে প্রিমিয়াম ইকোনোমির ব্যবস্থাও চালু করেছে।
দুর্ঘটনার আগে কী ঘটেছিল?
Flightradar24 এর মতো ট্র্যাকিং পোর্টাল অনুযায়ী, ফ্লাইট AI-171 বিকেল ১:৩৮ টায় আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছিল। টেক-অফ করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে Mayday! Mayday! Mayday! কল করেছিলেন, যা একটি গুরুতর জরুরী অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।
বিমানে কত জ্বালানী ছিল?
এই বিমানটিকে লন্ডনে পৌঁছাতে প্রায় ১০ ঘন্টা সময় লাগে। এই ক্ষেত্রে, এটি প্রায় ১২,০০০ লিটার বিমান জ্বালানীর প্রয়োজন। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নিয়ম অনুযায়ী, বিমানে দুই ঘন্টার অতিরিক্ত জ্বালানীও থাকে। যেহেতু এই দুর্ঘটনাটি উড্ডয়নের প্রাথমিক সময়ে ঘটেছে, তাই এয়ারক্রাফ্টে প্রায় সম্পূর্ণ জ্বালানী ছিল, যা দুর্ঘটনাকে আরও গুরুতর করে তুলতে পারে।
কোন এয়ারলাইন্সের কাছে এই বিমান রয়েছে?
বোয়িং 787-8 ড্রিমলাইনার একটি গ্লোবাল এয়ারক্রাফ্ট। ৬০টিরও বেশি এয়ারলাইন্স এটিকে তাদের বহরে যোগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউরোপ এবং আমেরিকার প্রধান রুটে
- এতিহাদ এয়ারওয়েজ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আমেরিকা/ইউরোপ
- কাতার এয়ারওয়েজ, এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার জন্য
- জাপান এয়ারলাইন্স (JAL), টোকিও থেকে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে
- এয়ার কানাডা, এয়ার ফ্রান্স, লুফথানসা, চায়না সাউদার্ন এবং ইউএস ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ইত্যাদি।
বিমানের বিশেষত্ব কী?
বোয়িং 787 ড্রিমলাইনার বিশেষ করে দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রাকে আরামদায়ক করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
- উচ্চ উচ্চতায় কম কেবিন প্রেশারের ফলে যাত্রীদের কম ক্লান্তি হয়।
- বড় উইন্ডো প্যানেল যাতে ইলেকট্রনিক ডিমিংয়ের সুবিধা রয়েছে।
- হালকা ওজনের বডি যা জ্বালানী খরচ কমায়।
- এডভান্স ইঞ্জিন প্রযুক্তি যা শব্দ এবং কম্পন কমায়।
দুর্ঘটনার প্রভাব এবং টাটা গ্রুপের প্রতিক্রিয়া
এয়ার ইন্ডিয়া এখন টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন। দুর্ঘটনার পরপরই টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগঘন পোস্ট করে এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা এই দুর্ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের সাথে আমাদের সম্পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে।
সুরক্ষা মান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন
এই দুর্ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন টাটা গ্রুপ কর্তৃক অধিগ্রহণের পর এয়ার ইন্ডিয়াকে পুনর্গঠন এবং পরিষেবার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই দুর্ঘটনাটি আবারও ভারতে বিমান চলাচলের সুরক্ষা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
DGCA (ডাইরেক্টোরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন) এবং অন্যান্য তদন্ত সংস্থা এখন তদন্ত করছে যে বিমানে কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল নাকি এটি মানবিক ভুলের ফল। বোয়িং কোম্পানিও বলেছে যে তারা তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে।
ভবিষ্যতে কী পরিবর্তন হবে?
- প্রযুক্তিগত পরিদর্শনে কঠোরতা: DGCA এখন সমস্ত ড্রিমলাইনার বিমানের অতিরিক্ত পরীক্ষা করতে পারে।
- পাইলট প্রশিক্ষণে মনোযোগ: ক্র্যাশ কল থেকে স্পষ্ট যে পাইলট প্রতিটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিলেন, তবে সংকট মোকাবেলা করার প্রস্তুতি এবং গভীরভাবে পরীক্ষা করা হবে।
- উদ্ধার পরিকল্পনার পর্যালোচনা: দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানের গতি এবং দক্ষতা নিয়েও নজরদারি বাড়বে।