ভারত এবং ফ্রান্স একটি ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার অধীনে ভারত ফ্রান্স থেকে ২৬টি রাফেল-এম যুদ্ধবিমান পাবে। এই চুক্তি ভারতের নৌ শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে এবং এর সমুদ্রবন্দর নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করে। এই চুক্তির মোট মূল্য প্রায় ৬৩,০০০ কোটি টাকা (প্রায় ৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
নয়াদিল্লি: পুলওয়ামা হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে ভারতকে তার প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে, যাকে ঐতিহাসিক রাফেল-এম চুক্তি বলা হচ্ছে। এই চুক্তির অধীনে, ভারত ২৬টি রাফেল-এম নৌ যুদ্ধবিমান কিনবে, যার মধ্যে ২২টি এক আসনবিশিষ্ট এবং ৪টি দুই আসনবিশিষ্ট বিমান রয়েছে।
ভারত ও ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রতিরক্ষা কেনাকাটা চুক্তি, যার মোট খরচ প্রায় ৬৩,০০০ কোটি টাকা। পাকিস্তানের সাথে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই পদক্ষেপ ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরশীলতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে।
রাফেল-এম যুদ্ধবিমান: একটি শক্তিশালী সংযোজন
রাফেল-এম জেটগুলি ভারতীয় নৌবাহিনীর নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য ফ্রান্স কর্তৃক কাস্টমাইজ করা হবে। এই বিমানগুলি প্রধানত ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ INS বিক্রান্তে স্থাপন করা হবে। বিমানটিতে জাহাজবিরোধী আঘাত, পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন এবং ১০ ঘন্টা পর্যন্ত উড়ান স্থায়িত্বের মতো ক্ষমতা রয়েছে। এটি যেকোনো সংঘাতের পরিস্থিতিতে ভারতের শক্তি প্রদর্শন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
রাফেল-এম-এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চমানের উড়ান কার্যক্ষমতা এবং উন্নত অস্ত্রাগার। এই বহরে দুই আসনবিশিষ্ট এবং ২২টি এক আসনবিশিষ্ট বিমান রয়েছে, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য অত্যন্ত উপকারী।
চুক্তির তাৎপর্য
এই চুক্তি দুটি দেশের মধ্যে শক্তিশালী সামরিক এবং কৌশলগত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে। ভারত ও ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের দ্বারা স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ফরাসি প্রতিরক্ষা সংস্থা ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন ভারতীয় স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বিমানগুলি তৈরি করবে। এই চুক্তি ভারতীয় নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে যা সমুদ্রবন্দর পরিবেশে যেকোনো সামরিক অভিযান সফলভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম।
ডেলিভারি সময়সূচী
চুক্তি অনুযায়ী, রাফেল-এম বিমানের ডেলিভারি ২০২৮-২৯ সালে শুরু হওয়ার আশা করা হচ্ছে এবং ২০৩১-৩২ সালের মধ্যে সমস্ত বিমান ভারতে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ডেলিভারি ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৃদ্ধি হবে, যা এর সামরিক শক্তিকে বাড়াবে এবং সমুদ্রবন্দর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে।
রাফেল বনাম রাফেল-এম
ভারত এবং ফ্রান্স পূর্বে ২০১৬ সালে ৩৬টি রাফেল জেটের জন্য একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছিল, যার মূল্য ৫৮,০০০ কোটি টাকা (প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ২০২২ সালের মধ্যে ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছিল এবং এই বিমানগুলি বর্তমানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর আম্বালা এবং হাশিমারা বিমান ঘাঁটিতে স্থাপন করা হয়েছে।
তবে, রাফেল-এম বিমানগুলি স্ট্যান্ডার্ড রাফেল জেটগুলির চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত এবং শক্তিশালী, বিশেষ করে নৌ অভিযানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।