স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু

🎧 Listen in Audio
0:00

এলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা Starlink আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে সেবা শুরু করেছে। এই সেবা বিশেষ করে সেসব এলাকার জন্য, যেখানে ঐতিহ্যগত ইন্টারনেট সংযোগ কঠিন অথবা দুর্বল। Starlink তার উপগ্রহ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং অসীম ইন্টারনেটের সুবিধা প্রদান করে। যদিও এর দাম বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত ইন্টারনেট প্রদানকারীদের তুলনায় অনেক বেশি, তবে এর গতি এবং ডেটা ক্যাপ ছাড়া সুবিধা এটিকে অনন্য করে তোলে।

Starlink-এর উদ্বোধন এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশে Starlink ইন্টারনেট সেবার উদ্বোধন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, এই উদ্বোধন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৯০ দিনের উন্নয়ন লক্ষ্যের অংশ। তিনি জানিয়েছেন যে, Starlink-এর সেবা দেশে ডিজিটাল সংযোগকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, বিশেষ করে দূরবর্তী এলাকায় যেখানে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌঁছানো কঠিন ছিল। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, এই সেবা ঐতিহ্যগত ইন্টারনেটের তুলনায় ব্যয়বহুল, কিন্তু এটি প্রিমিয়াম ব্যবহারকারীদের উন্নত গতি এবং নির্ভরযোগ্য সংযোগের বিকল্প দেয়, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও শক্তিশালী করবে।

Starlink প্ল্যান এবং দাম

Starlink বাংলাদেশে দুটি আবাসিক ইন্টারনেট প্ল্যান চালু করেছে। প্রথম প্ল্যানের মাসিক মূল্য ৬,০০০ টাকা (প্রায় ৪,২০০ ভারতীয় টাকা) এবং দ্বিতীয় প্ল্যানের মাসিক মূল্য ৪,২০০ টাকা (প্রায় ২,৯০০ ভারতীয় টাকা)। এছাড়াও ব্যবহারকারীদের ইনস্টলেশন ফি হিসেবে ৪৭,০০০ টাকা (প্রায় ৩২,৯০০ ভারতীয় টাকা) প্রদান করতে হবে। এই দাম ঐতিহ্যগত ব্রডব্যান্ড সেবার তুলনায় অনেক বেশি, কিন্তু Starlink দাবি করে যে, তার সেবার গুণমান এবং গতি এই অতিরিক্ত ব্যয়কে যুক্তিসঙ্গত করে।

Starlink-এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য

Starlink ইন্টারনেট সেবা ৩০০ Mbps পর্যন্ত ডাউনলোড গতি প্রদানের দাবি করে, যা ঐতিহ্যগত ইন্টারনেটের চেয়ে অনেক উন্নত। এতে কোন ডেটা লিমিট নেই, অর্থাৎ ব্যবহারকারী অসীম ডেটা ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, এই সেবা স্পিড থ্রোটলিং থেকে মুক্ত, যার অর্থ ব্যবহারকারী সর্বদা পূর্ণ গতি পাবেন। এটি বিশেষ করে সেসব দূরবর্তী এলাকার জন্য উপকারী যেখানে ইন্টারনেট গতি এবং স্থায়িত্বের সমস্যা রয়েছে।

দূরবর্তী এলাকার জন্য বরদান

Starlink-এর এই উচ্চ-গতির স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা দূরবর্তী এবং পিছিয়ে পড়া এলাকার জন্য বরদানের চেয়ে কম নয়, যেখানে এখনও পর্যন্ত ঐতিহ্যগত ব্রডব্যান্ড অথবা মোবাইল নেটওয়ার্কের সুবিধা পৌঁছাতে পারেনি। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি কোনও ভৌগোলিক বাধার প্রভাবে পড়ে না। পাহাড়, বন, উপকূলীয় এলাকা অথবা দূরবর্তী গ্রামীণ এলাকা—যেখানেই হোক না কেন, Starlink-এর টার্মিনাল ব্যবহার করে সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। এর ফলে ওইসব এলাকায় অনলাইন শিক্ষা, টেলিমেডিসিন, প্রশাসনিক সেবা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা ডিজিটালভাবে সংযুক্ত হবে, যার ফলে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পাবে।

ভারতের আগে বাংলাদেশ কেন?

Starlink-এর সেবা ভারতে আগে শুরু করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু সরকারি অনুমোদন এবং অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বিপরীতে, বাংলাদেশ সরকার Starlink-কে সময়মতো প্রয়োজনীয় সব অনুমতি দিয়েছে, যার ফলে কোম্পানি দ্রুত সেখানে সেবা শুরু করেছে। এটি দেখায় যে, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং পরিবর্তন গ্রহণে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বেশি আগ্রহ এবং সমর্থন দেখিয়েছে। এর ফলে সেখানকার মানুষ দ্রুত উচ্চ-গতির ইন্টারনেট পেতে শুরু করেছে, যখন ভারতে এখনও এর উদ্বোধন আটকে আছে।

ভারতে কখন শুরু হবে সেবা?

Starlink তার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ভারতে শুরু করার জন্য ইতোমধ্যেই দূরসংযোগ বিভাগ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছে। ভারতে এর ব্যাপক চাহিদা থাকতে পারে কারণ আজও দেশের অনেক গ্রামীণ, পাহাড়ি এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেটের সুবিধা নেই। Starlink-এর সেবা ওইসব এলাকার জন্য গেম চেঞ্জার হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে ভারত সরকার স্যাটেলাইট স্পেকট্রাম নিয়ে কোন স্পষ্ট এবং স্থায়ী নীতি তৈরি করেনি। এই নীতির অভাবে কোম্পানি আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেতে পারছে না, যার ফলে এর উদ্বোধনে বিলম্ব হচ্ছে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল উন্নয়নে গতি পাবে

Starlink-এর উদ্বোধনের ফলে বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লবে নতুন বেগ পাবে, বিশেষ করে সেসব এলাকায় যেখানে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটের সুবিধা অত্যন্ত সীমিত ছিল। এর সাহায্যে দূরবর্তী স্কুলে অনলাইন ক্লাস সম্ভব হবে, ক্ষুদ্র হাসপাতাল টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে যুক্ত হতে পারবে এবং গ্রামে বসবাসকারী মানুষও এখন ঘরে বসে ডিজিটাল সেবার সুবিধা নিতে পারবে। এর ফলে শুধুমাত্র শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্র শক্তিশালী হবে না, বরং ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং স্থানীয় উদ্যোগকেও নতুন সুযোগ পাবে, যার ফলে সমগ্র দেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির গতি বৃদ্ধি পাবে।

Starlink-এর বাংলাদেশে প্রবেশ এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয় যে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এখন একটি বাস্তব এবং ব্যবহারিক বিকল্প হয়ে উঠেছে। ভারতসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশকেও এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ডিজিটাল অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করার দিকে পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়ায় ত্বরান্বিত করা হয়, তাহলে ভারতের মতো বৃহৎ দেশেও Starlink-এর মতো সেবা ডিজিটাল ফাঁক পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

Leave a comment