সুপ্রিম কোর্টের কঠোর ভৎসর্ণা: সাভরকার সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীকে সতর্কবাণী

সুপ্রিম কোর্টের কঠোর ভৎসর্ণা: সাভরকার সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীকে সতর্কবাণী
সর্বশেষ আপডেট: 25-04-2025

কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে বীর সাভরকার সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কঠোর ভৎসর্ণার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আদালত স্পষ্ট করে বলেছে যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান সহ্য করা হবে না এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের বক্তব্যের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়াদিল্লি: কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে বীর সাভরকার সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সুপ্রিম কোর্ট কঠোর ভৎসর্ণা করেছে। আদালত রাহুল গান্ধীকে বলেছে যে তাঁকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে উপহাস করা উচিত নয় এবং ভবিষ্যতে যদি এ ধরণের বক্তব্য দেওয়া হয়, তাহলে আদালত তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে। এই ঘটনা রাজনৈতিক এবং আইনি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ এই বক্তব্য কেবল রাহুল গান্ধীর জন্যই নয়, অন্যান্য নেতাদের জন্যও একটি সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

রাহুল গান্ধীর বক্তব্য কী ছিল?

রাহুল গান্ধী ১৭ ডিসেম্বর ২০২২-তে মহারাষ্ট্রের অকোলায় এক সংবাদ সম্মেলনে বীর সাভরকার সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সাভরকারকে ব্রিটিশদের দাস এবং পেনশনভোগী বলে অভিহিত করেছিলেন। রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য ভারতীয় রাজনীতি এবং ইতিহাসের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে বিবেচিত হয়েছে, কারণ বীর সাভরকার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন অন্যতম নেতা ছিলেন। তাঁর অবদান নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে, কিন্তু রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য সমালোচনার পাশাপাশি আইনি জটিলতার সৃষ্টি করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশ

সুপ্রিম কোর্ট রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আদালত বলেছে যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করা কোনভাবেই সহ্য করা হবে না। বিচারপতি রাহুল গান্ধীকে বলেছেন, আপনি একজন দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ, আপনার এ ধরণের অদায়িত্বশীল বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়। এর সাথে সাথে আদালত সতর্ক করে দিয়েছে যে ভবিষ্যতে যদি এ ধরণের বক্তব্য দেওয়া হয়, তাহলে আদালত এই বিষয়ে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে এবং ব্যবস্থা নিতে পারে।

হাইকোর্ট থেকে সমন বাতিলের আবেদন

এই বিতর্কে রাহুল গান্ধী ইলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তিনি সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁকে সমন জারি করেছিল। তবে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট সমন বাতিল করতে অস্বীকার করেছে। এরপর রাহুল গান্ধী এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পেরে রাহুল গান্ধীকে অতিরিক্ত সতর্ক করে দিয়েছে, ভবিষ্যতে যদি এ ধরণের বক্তব্য দেওয়া হয়, তাহলে আদালত আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।

রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আদালতের ব্যবস্থা

লখনউয়ের একজন আইনজীবী নৃপেন্দ্র পান্ডে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এবং তাঁকে হাজিরার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। এর আগে, লখনউয়ের এমপি-এমএলএ আদালত রাহুল গান্ধীর উপর ২০০ টাকা জরিমানা করেছিল, কারণ তিনি ক্রমাগত আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আদালত তাঁকে পরবর্তী শুনানিতে হাজির হওয়ার সতর্কতা দিয়েছিল এবং এই মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত শুনানির কথা বলেছিল।

সাভরকারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও আইনি বিতর্ক

রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিল। বীর সাভরকার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন অন্যতম নেতা ছিলেন, যাঁর অবদান নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু দল তাঁকে একজন নায়ক হিসেবে সম্মান করে, অন্যদিকে অন্য কিছু দল তাঁর কিছু কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাহুল গান্ধীর বক্তব্য এই পুরোনো বিতর্ককে আবার জাগ্রত করেছে, যার ফলে এই বিষয়টি আরও বিতর্কিত হয়ে উঠেছে।

রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া

রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস দল সুপ্রিম কোর্টের আদেশের সম্মান প্রদর্শন করেছে। কংগ্রেস বলেছে যে তারা আদালতে তাদের পক্ষ তুলে ধরবে এবং আইনের पालन করবে। দলটি এও বলেছে যে রাহুল গান্ধীর উদ্দেশ্য সাভরকারের অবদান নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করা নয়, বরং তাঁর বক্তব্য নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে দেওয়া হয়েছিল। তবে, আদালতের কঠোর সতর্কবার্তা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে এই ধরণের বক্তব্য আর চলবে না।

Leave a comment