লিচু, এক সুস্বাদু ফল যা বাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয়, কিন্তু এর তাজাটনা ধরে রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ভারতে, লিচু সাধারণত গাছ থেকে তোলার ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়।
প্রযুক্তি: লিচুর মিষ্টি স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ এটিকে বাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে, কিন্তু এর তাজাটনা ধরে রাখা সবসময়ই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ভারতে লিচুর মৌসুম সংক্ষিপ্ত এবং ফলটি প্রায়শই মাত্র ৭ থেকে ১৫ দিনই তাজা থাকে। তবে, মাদাগাস্কারে উদ্ভাবিত একটি নতুন প্রযুক্তির কারণে সেখানে লিচু তিন মাস পর্যন্ত তাজা থাকে।
এখন কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রযুক্তি ভারতে আনার দিকে দ্রুত কাজ করছে, যার ফলে দেশের কৃষকদের অর্থনৈতিক লাভের পাশাপাশি রপ্তানির নতুন সুযোগও পাওয়া যাবে।
লিচু চাষ এবং ভারতের বিশ্বব্যাপী অবস্থান
বিশ্বে লিচুর উৎপাদন সর্বাধিক চীনে হয়, তারপরে দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। ভারতে বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে ব্যাপকভাবে লিচু চাষ হয়। বিশেষ করে বিহারের শাহী লিচু তার অনন্য সুগন্ধ এবং স্বাদের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। মুজফ্ফরপুরের শাহী লিচু জিআই ট্যাগও পেয়েছে, যা এর মানের প্রমাণ।
লিচু কেবল সুস্বাদু নয়, এটি ভিটামিন সি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের মতো পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে এর সর্বদা ভালো চাহিদা রয়েছে। ভারত থেকে লিচুর রপ্তানি ইউরোপ, আমেরিকা, উপসাগরীয় দেশ, নেপাল এবং বাংলাদেশে হয়, তবে তাজাটনা ধরে রাখার সমস্যার কারণে রপ্তানি সীমিত।
মাদাগাস্কারের প্রযুক্তির বিশেষত্ব কি?
লিচুর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এর দ্রুত নষ্ট হওয়া। ঐতিহ্যগতভাবে, ভারতে লিচু তোলার পর মাত্র ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমান রেডিয়েশন প্রযুক্তি দিয়ে এটিকে সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত তাজা রাখা যায়, কিন্তু তার বেশি নয়। মাদাগাস্কার এই সমস্যার সমাধান একটি নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছে, যেখানে লিচু থেকে অতিরিক্ত পানি কমিয়ে দেওয়া হয়।
তারপর লিচুটিকে বিশেষ ঠান্ডা এবং সিলযুক্ত প্যাকেটে সংরক্ষণ করা হয়। এই প্রক্রিয়াটির ফলে লিচুর শেল্ফ লাইফ তিন মাস পর্যন্ত বেড়ে যায়। ট্রেড প্রোমোশন কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (TPCI) এর চেয়ারম্যান মোহিত সিংলার মতে, এই প্রযুক্তি ভারতের জন্য গেম চেঞ্জার হতে পারে।
কেন্দ্রীয় সরকার মাদাগাস্কারের এই প্রযুক্তি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারতে প্রয়োগ করার জন্য চেষ্টা করছে। বিশেষ করে বিহারসহ অন্যান্য প্রধান লিচু উৎপাদনকারী রাজ্যগুলিতে এটি প্রয়োগ করে কৃষকদের বিশ্ববাজারে তাদের ফসল আরও ভালোভাবে বিক্রয় করার সুযোগ দেওয়া হবে। প্রযুক্তি আসার ফলে লিচুর আয়ুষ্কাল বাড়বে, যার ফলে রপ্তানিও বাড়বে এবং কৃষকরা তাদের ফসলের আরও ভালো দাম পেতে পারবেন।
কৃষকরা পাবে বড় লাভ
বিহারের মাটিতে জন্মানো লিচু তার মিষ্টতা এবং গুণমানের জন্য বিখ্যাত, যার ফলে এটি কৃষকদের জন্য আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে। ভাগলপুর, মুজফ্ফরপুর, সমস্তীপুর এবং চম্পারণের মতো জেলাগুলিতে লিচু চাষ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানকার শাহী লিচু এবং বাদামী লিচুর বাজারে চাহিদা ভালো। কৃষকরা জানান যে লিচু চাষ অপেক্ষাকৃত কম পরিশ্রমের, কিন্তু আয় বেশি হয়।
এছাড়াও, সরকার কৃষকদের বিক্রয়, বিপণন এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করছে। এখন কৃষকরা সরাসরি বাজারে গিয়ে ফসল বিক্রি করার পরিবর্তে, ব্যবসায়ীরা তাদের বাগানে এসে কেনাকাটা করেন, যার ফলে কৃষকরা সুবিধা এবং আরও ভালো দাম পান।
লিচু রপ্তানিতে বৃদ্ধির সম্ভাবনা
লিচুর শেল্ফ লাইফ বাড়ার ফলে ভারতের জন্য রপ্তানির নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। বর্তমানে, ভারত থেকে রপ্তানি সীমিত কারণ ফল দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। মাদাগাস্কারের প্রযুক্তি প্রয়োগ হলে ভারত বিশ্ববাজারে তার অংশগ্রহণ বাড়াতে পারবে। ইউরোপ, আমেরিকা, উপসাগরীয় দেশের মতো বড় বাজারগুলিতে দীর্ঘ দূরত্বের কারণে লিচুর রপ্তানি কম হয়, কিন্তু শেল্ফ লাইফ বাড়ার ফলে এই বাধা দূর হবে।
লিচুর এই নতুন প্রযুক্তির সাথে, ভারতের কৃষকরা কেবল অর্থনৈতিক লাভ পাবে না, বরং ভারতের কৃষি রপ্তানির ইমেজও শক্তিশালী হবে। এই প্রযুক্তি দেশের অন্যান্য ফল এবং কৃষি পণ্যের জন্যও উদাহরণ হতে পারে যে কিভাবে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন কৃষকদের আয় বাড়াতে পারে। আগামী সময়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারকে এই প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ এবং বিতরণের দিকে নজর দিতে হবে যাতে ছোট এবং মাঝারি কৃষকরাও এর সুবিধা পেতে পারে। সাথে সাথে কৃষকদের প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং প্যাকেজিংয়ের জন্য সচেতন করাও প্রয়োজন।