কাশ্মীরের ঘটনার পর উচ্চ উচ্চতায় উড়তে সক্ষম ড্রোন কেনার পরিকল্পনা ভারতীয় বিমানবাহিনীর

🎧 Listen in Audio
0:00

পশ্চিম কাশ্মীরের পাহাড়গামে সন্ত্রাসবাদী ঘটনার পর ভারতীয় বিমানবাহিনী (IAF) উচ্চ উচ্চতায় উড়তে পারে এমন ড্রোন কেনার পরিকল্পনা করেছে। এই ড্রোনগুলিকে "হাই-এল্টিটুড প্লাটফর্ম সিস্টেম" (HAPS) বিমান বলা হবে, যা গুপ্তচরবৃত্তি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হবে।

নয়াদিল্লি: কাশ্মীরের পাহাড়গামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারতীয় বিমানবাহিনী আকাশে উচ্চ উচ্চতায় উড়তে পারে এমন ড্রোন (HAPS) মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার জন্য। এই ড্রোনগুলি কেবল সীমান্ত পর্যবেক্ষণ করবে না, বরং গুপ্তচরবৃত্তি এবং তথ্য সংগ্রহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ভারতীয় বিমানবাহিনী (IAF) এর এই পরিকল্পনা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি নতুন দিক নির্দেশ করে, যেখানে হাই-এল্টিটুড প্লাটফর্ম সিস্টেম (HAPS) বিমানের গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে।

HAPS বিমানের গুরুত্ব

HAPS বিমানগুলিকে 'ছদ্ম-উপগ্রহ' হিসেবেও পরিচিত, কোনো মানব চালক ছাড়াই উচ্চ উচ্চতায় ক্রমাগত উড়ান ভরতে সক্ষম হবে। এই ড্রোনগুলির উড়ান ক্ষমতা ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হবে, যা সাধারণ বিমানের উড়ান পথ থেকে অনেক বেশি উচ্চতা। এই ড্রোনগুলির প্রধান কাজ হবে পর্যবেক্ষণ করা, তথ্য সংগ্রহ করা এবং ইলেকট্রনিক গোয়েন্দা প্রদান করা। ভারতীয় বিমানবাহিনী বলেছে যে এই বিমানগুলির মাধ্যমে পাকিস্তান এবং চীন উভয়ের সাথে সীমান্তে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

সৌরশক্তিচালিত ড্রোন

IAF-এর এই সর্বশেষ পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক এবং সামরিক ব্যবহারের জন্য সৌরশক্তিচালিত ড্রোনের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা প্রতিফলিত করে। HAPS বিমানগুলি সৌরশক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, যা উপগ্রহের তুলনায় এগুলিকে আরও সাশ্রয়ী এবং টেকসই করে তোলে। এই বিমানগুলিকে উৎক্ষেপণ করার জন্য কোনও রকেটের প্রয়োজন হয় না, এবং এগুলিকে সহজেই বিভিন্ন স্থান থেকে মোতায়েন করা যায়। তদুপরি, এগুলির রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়াও উপগ্রহের তুলনায় সহজ এবং সাশ্রয়ী।

IAF তিনটি HAPS বিমান এবং তাদের সাথে সংযুক্ত সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং বিক্রেতাদের কাছে ২০ জুনের মধ্যে তথ্য জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পাকিস্তানের সাথে বর্ধমান উত্তেজনা এবং চীনের সাথে LAC (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল) -এর অবস্থান বিবেচনা করে এই ক্রয় প্রক্রিয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা উড়ানের প্রয়োজন

IAF-এর দাবি হলো এই HAPS বিমানগুলি কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা ক্রমাগত উড়ান ভরতে সক্ষম হবে, যাতে সীমান্তে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা যায়। তদুপরি, এই ড্রোনগুলির ডেটা লিঙ্ক এবং টেলিমেট্রি রেঞ্জ কমপক্ষে ১৫০ কিলোমিটার হতে হবে। এই বিমানগুলি গোয়েন্দা, পর্যবেক্ষণ এবং যোগাযোগ গোয়েন্দা কাজ সম্পন্ন করবে এবং রাতেও কাজ করার জন্য এগুলিকে সক্ষম করা হবে।

এছাড়াও, RFI-তে বলা হয়েছে যে এই ড্রোনগুলিতে ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল এবং ইনফ্রারেড ক্যামেরা থাকবে, যা রাতে বা কম আলোতেও কাজ করতে সক্ষম হবে। এই ড্রোনগুলির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এগুলি ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত জিনিসপত্র সনাক্ত করতে সক্ষম হবে।

ISTAR বিমানের পরিকল্পনা

IAF তাদের পরিকল্পনায় ISTAR (ইন্টেলিজেন্স, সারভেইল্যান্স, টার্গেটিং অ্যান্ড রিকনাইসেন্স) বিমানকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই বিমানগুলির উদ্দেশ্য হলো কার্যকর গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করা। এই বিমানগুলি সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার, ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল এবং ইনফ্রারেড সেন্সর ব্যবহার করে কার্যকর তথ্য সংগ্রহ করবে, যা দ্রুত প্রয়োগ করা যাবে।

ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ডিফেন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ট্রেড ইনিশিয়েটিভ (DTTI) এর অধীনে ISTAR প্ল্যাটফর্মের যৌথ উন্নয়ন এবং যৌথ উৎপাদন বিষয়ে বিবেচনা করা হয়েছিল, যদিও এই উদ্যোগ এখনও সম্পূর্ণ সফল হয়নি।

নিরাপত্তায় নতুন মোড়

ভারতীয় বিমানবাহিনীর এই নতুন উদ্যোগ কেবল সীমান্ত পর্যবেক্ষণ এবং গোয়েন্দা তথ্য উন্নত করবে না, বরং এটি নিরাপত্তাকে একটি নতুন দিকও দিতে পারে। এই ড্রোনগুলি, যা উচ্চ উচ্চতা থেকে সৌরশক্তি দ্বারা উড়বে, কেবল পাকিস্তান এবং চীনের সাথে সীমান্তে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আদর্শ হবে না, বরং বিভিন্ন সামরিক অভিযানেও অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে।

এই পদক্ষেপ উন্নত ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ক্ষমতা উন্নত করার ক্ষেত্রে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি নতুন প্রযুক্তিগত সাফল্যের দিকে ইঙ্গিত করে। এই ড্রোন ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং বর্ধমান সামরিক হুমকির প্রতি তাদের প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করবে।

Leave a comment