জাতীয় প্রযুক্তি দিবস: স্বদেশী উদ্ভাবনের গৌরব ও ভবিষ্যৎ

🎧 Listen in Audio
0:00

প্রতি বছর ১১ই মে ভারত জাতীয় প্রযুক্তি দিবস (National Technology Day) পালন করে। এই দিনটি দেশের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সাফল্যের স্মরণ ও ভবিষ্যৎ অগ্রগতির জন্য অনুপ্রেরণা গ্রহণের প্রতীক। এটি শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়, বরং ভারতের বৈজ্ঞানিক আত্মনির্ভরতা ও বিশ্বব্যাপী পরিচয়ের প্রতীক।

জাতীয় প্রযুক্তি দিবস কেন পালিত হয়?

১৯৯৮ সালের ১১ই মে ভারত রাজস্থানের পোখরনে ‘অপারেশন শক্তি’র অধীনে সফল পারমাণবিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিল। এই দিনটি ভারতের জন্য ঐতিহাসিক ছিল কারণ এটি বিশ্বকে দেখিয়েছিল যে ভারত এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছে। এই পরীক্ষাটি ভারতকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এই বৃহৎ সাফল্যের পিছনে ছিল আমাদের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের কঠোর পরিশ্রম ও বহু বছরের গবেষণা। এই সাফল্যটি দেশকে নতুন শক্তি ও আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল।

এই বিশেষ দিনের স্মৃতি সর্বদা জীবন্ত রাখার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ১১ই মে কে জাতীয় প্রযুক্তি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। তখন থেকে প্রতি বছর এই দিনটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে সম্মান জানিয়ে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে কীভাবে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান দেশকে আত্মনির্ভর ও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। পাশাপাশি এটি তরুণদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণাও দেয়।

জাতীয় প্রযুক্তি দিবসের গুরুত্ব কী?

জাতীয় প্রযুক্তি দিবস প্রতি বছর ১১ই মে পালিত হয়। এই দিনটি ভারতের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিকে শ্রদ্ধা জানানোর দিন। ১৯৯৮ সালে এই দিনেই ভারত পোখরনে পারমাণবিক পরীক্ষা করে সমগ্র বিশ্বকে দেখিয়েছিল যে আমরা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর। এই ঐতিহাসিক সাফল্যের পর ভারত বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ ও শক্তির ক্ষেত্রে নতুন নতুন উচ্চতা অর্জন করেছে। এই দিনটি শুধু অতীতের সাফল্য নয়, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাবনারও প্রতীক।

এই দিনে দেশজুড়ে স্কুল, কলেজ ও প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি সংক্রান্ত সেমিনার, প্রদর্শনী ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। তরুণদের উদ্ভাবন, স্টার্টআপ ও গবেষণার দিকে আকৃষ্ট করার জন্যও এই দিনটি পালিত হয়। ভারত সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি এই উপলক্ষে নতুন প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করে এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রযুক্তিগত সমাধানের উপর জোর দেয়। যদি আপনিও প্রযুক্তিতে আগ্রহী হন, তাহলে এই দিনটি আপনার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।

জাতীয় প্রযুক্তি দিবস ২০২৫-এর থিম: ‘স্বদেশী উদ্ভাবন থেকে বিশ্বব্যাপী প্রভাব পর্যন্ত’

২০২৫ সালে এই দিনের থিম রাখা হয়েছে – ‘From Indigenous Innovation to Global Impact’ অর্থাৎ "স্বদেশী উদ্ভাবন থেকে বিশ্বব্যাপী প্রভাব পর্যন্ত"। এর উদ্দেশ্য হল ভারতের দেশীয় প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দেওয়া। এই দিনটি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও গবেষকদের অবদানকে সম্মান জানানোর এবং তরুণদের প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করার সুযোগ। যদি আপনিও উদ্ভাবন বা প্রযুক্তিতে আগ্রহী হন, তাহলে আজকের দিনটি আপনার জন্য নতুন চিন্তা ও অনুপ্রেরণার দিন হতে পারে।

ভারতের কিছু প্রধান প্রযুক্তিগত সাফল্য:

ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বহু বৃহৎ সাফল্য অর্জন করেছে। এই সাফল্যগুলি কেবল দেশকে বিশ্বে নতুন পরিচয় দিয়েছে তাই নয়, সাধারণ মানুষের জীবনকেও সহজ ও উন্নত করেছে। আসুন জেনে নিই ভারতের কিছু প্রধান প্রযুক্তিগত সাফল্য সম্পর্কে:

ইসরোর চন্দ্রযান ও মঙ্গল মিশন

ভারতের মহাকাশ সংস্থা ইসরো (ISRO) মহাকাশে বহু ঐতিহাসিক মিশন সম্পন্ন করেছে। চন্দ্রযান-১ চাঁদে পানির অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছিল, যা সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি বড় আবিষ্কার ছিল। এরপর ইসরো চন্দ্রযান-২ পাঠিয়েছিল, যাতে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তবুও এর অরবিটার আজও চাঁদের তথ্য পাঠাচ্ছে।

সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল মঙ্গল মিশন (Mangalyaan)। এটি ভারতের প্রথম মিশন ছিল যা সরাসরি মঙ্গল গ্রহে পৌঁছেছিল, এবং তাও প্রথম চেষ্টাতেই। এটি কম খরচে সম্পন্ন হয়েছিল, যার ফলে সমগ্র বিশ্ব ভারতের প্রযুক্তিগত ক্ষমতাকে প্রশংসা করেছিল।

কোভ্যাক্সিন – ভারতের নিজস্ব ভ্যাকসিন

করোনা ভাইরাস মহামারীর সময় যখন সমগ্র বিশ্ব ভ্যাকসিনের সন্ধানে ছিল, তখন ভারত খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল – কোভ্যাক্সিন। এটি ভারত বায়োটেক নামক কোম্পানি তৈরি করেছিল, যা সম্পূর্ণ স্বদেশী। এই ভ্যাকসিন কোটি কোটি মানুষকে দেওয়া হয়েছিল এবং এর কার্যকর ফলাফলও দেখা গিয়েছিল। এটি ভারতকে কেবল আত্মনির্ভর করে তোলে নি, বরং বিশ্বকেও ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছিল।

ডিজিটাল ইন্ডিয়া ও UPI-র মতো প্রযুক্তি

ভারত সরকার ডিজিটাল ইন্ডিয়া নামক একটি পরিকল্পনা শুরু করেছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আজ গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত মানুষ অনলাইনে কাজ করছে।

UPI (ইউপিআই) টাকা পাঠানো ও নেওয়া অনেক সহজ করে দিয়েছে। এখন যেকোনো ব্যক্তি মোবাইল দিয়ে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে টাকা পাঠাতে পারে – না ব্যাংকে যাওয়ার দরকার, না দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর। গুগল পে, ফোনপে, পেটিএম-এর মতো অ্যাপগুলি ইউপিআই-রই ফসল। ভারত এখন ডিজিটাল পেমেন্টে বিশ্বের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলির মধ্যে একটি।

AI, 5G ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে ভারতের অংশগ্রহণ

আজকের বিশ্বে AI (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতেও বহু স্টার্টআপ ও কোম্পানি AI ব্যবহার করে নতুন নতুন সমাধান আনছে – যেমন স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কৃষিতে।

5G প্রযুক্তি ভারতেও চালু হয়েছে, যার ফলে ইন্টারনেটের গতি অনেক বেড়ে গেছে। এই প্রযুক্তি স্মার্ট সিটি, অটোমেটিক গাড়ি ও রিমোট সার্জারির মতো আধুনিক সেবা সম্ভব করে তুলবে।

এই দিন থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

এই দিন থেকে আমরা শিখতে পারি যে প্রযুক্তি কেবল আরামদায়ক জিনিস নয়, বরং এটি দেশকে আত্মনির্ভর ও শক্তিশালী করার মাধ্যমও। যখন আমরা নিজের প্রযুক্তি নিজেই তৈরি করি, তখন আমাদের অন্য কোনও দেশের উপর নির্ভর করতে হয় না। যেমন – কোভ্যাক্সিন, চন্দ্রযান ও ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মতো উদ্যোগগুলি আমাদের দেখায় যে আমরাও বিশ্বের বড় শক্তিগুলির মতো চিন্তা করতে ও কাজ করতে পারি।

তরুণদের জন্য এই দিনটি একটি বড় বার্তা বহন করে – যদি তারা পরিশ্রম করে, নতুন আইডিয়ার উপর কাজ করে, তাহলে তারাও বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী বা উদ্ভাবক হতে পারে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

তাই প্রয়োজন এই যে আমরা প্রযুক্তিকে গ্রহণ করি, তার সঠিক ব্যবহার করি এবং তাতে ক্রমাগত বিনিয়োগ করি যাতে ভারত আগামী দিনে প্রযুক্তির বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারে।

```

Leave a comment