গুগল ভারতে ‘সেফটি চার্টার’ লঞ্চ করেছে, যা ব্যবহারকারীদের অনলাইন প্রতারণা ও জাল অ্যাপ থেকে রক্ষা করার জন্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রদান করে।
সেফটি চার্টার: ভারতে অনলাইন প্রতারণার ঘটনার ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ্য করে গুগল একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রযুক্তি জায়ান্টটি ‘গুগল সেফটি চার্টার’ নামে একটি নতুন সাইবার নিরাপত্তা নীতি ভারতে লঞ্চ করেছে, যা দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই চার্টারের মাধ্যমে শুধুমাত্র ব্যবহারকারীদের অনলাইন প্রতারণা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হবে না, বরং ইন্টারনেটের নিরাপদ ও স্বচ্ছ ব্যবহারকেও উৎসাহিত করা হবে।
কেন গুগলের এই পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল?
ভারতে ডিজিটাল লেনদেন এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে সাথে অনলাইন প্রতারণা, ফিশিং আক্রমণ, জাল অ্যাপ এবং স্ক্যাম কলের ঘটনাও দ্রুত বেড়ে উঠছে। রিপোর্ট অনুসারে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কোনও না কোনও ধরণের সাইবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিগুলিকে বিবেচনা করে গুগল এই নতুন উদ্যোগের সূচনা করেছে।
গুগল সেফটি চার্টারের প্রধান উদ্দেশ্য হল এমন অ্যাপ এবং ডিজিটাল পরিষেবা প্রচার করা যা ব্যবহারকারীর ডেটার সুরক্ষা, স্বচ্ছতা এবং স্পষ্ট অনুমতি নীতির পালন করে। এই উদ্যোগ একটি বৃহৎ ডিজিটাল ভোক্তা বাজার যেমন ভারতে একটি নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম গঠনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
গুগল সেফটি চার্টার কি?
গুগল সেফটি চার্টার একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা নির্দেশিকা, যা বিশেষ করে ভারতীয় ব্যবহারকারীদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর অধীনে গুগল বেশ কিছু প্রধান বিষয়ের উপর মনোযোগ দিয়েছে:
- ডেটা সুরক্ষা: অ্যাপগুলিকে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে স্পষ্ট অনুমতি নিতে হবে এবং তাদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে।
- প্রতারণা প্রতিরোধ: গুগল প্লে স্টোরে এমন টুল ব্যবহার করা হচ্ছে যা জাল, ডুপ্লিকেট এবং প্রতারণামূলক অ্যাপ চিহ্নিত করে তা অবিলম্বে সরিয়ে ফেলতে পারে।
- ব্যবহারকারী শিক্ষা: সময় সময় ব্যবহারকারীদের নিরাপদ ব্রাউজিংয়ের পরামর্শ, সতর্কতা এবং নোটিফিকেশন প্রেরণ করা হবে যাতে তারা সতর্ক থাকতে পারে।
- সার্টিফিকেশন সিস্টেম: যে অ্যাপগুলি গুগলের নিরাপত্তা শর্ত পূরণ করেছে, তাদের ‘সেফটি ভেরিফাইড’ ট্যাগ দেওয়া হবে, যার ফলে ব্যবহারকারীদের জন্য নির্ভরযোগ্য অ্যাপ চিহ্নিত করা সহজ হবে।
কোন অ্যাপগুলিকে ‘সেফটি ভেরিফাইড’ ট্যাগ পাবে?
গুগল প্রাথমিকভাবে যে প্রধান অ্যাপগুলিকে এই সেফটি চার্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে:
- PhonePe
- Paytm
- Bajaj Finserv
এই অ্যাপগুলিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য এবং স্বচ্ছতা সংক্রান্ত পরিবর্তন করা হবে। আগামী কয়েক মাসে আরও অনেক আর্থিক এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপকে এই উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ব্যবহারকারীদের জন্য কী পরিবর্তন হবে?
- যখন আপনি এখন গুগল প্লে স্টোর থেকে কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করবেন, তখন ‘সেফটি ভেরিফাইড’ ট্যাগ দেখে জানতে পারবেন যে এই অ্যাপ গুগলের নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুসারে কাজ করে কিনা।
- ব্যবহারকারীকে কোনও অ্যাপ ইনস্টল করার আগে তার রেটিং, ডাউনলোড সংখ্যা, অনুমতি বিবরণ এবং ডেভেলপারের তথ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হবে।
- এছাড়াও যদি গুগলের পক্ষ থেকে কোনও অ্যাপ নিয়ে নিরাপত্তা সতর্কতা বা নোটিফিকেশন আসে, তাহলে তা গুরুত্বের সাথে নেওয়া প্রয়োজন।
এর ফলে ব্যবহারকারীদের জন্য জাল KYC কল, ফিশিং লিঙ্ক এবং জাল অ্যাপের মতো বিপদ থেকে বাঁচা সহজ হবে।
ভারতে কেন এই উদ্যোগ বিশেষ?
ভারতের বিশাল জনসংখ্যা এখন ডিজিটাল লেনদেন এবং স্মার্টফোনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাবের কারণে অনেক মানুষ সহজেই অনলাইন প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় গুগলের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত সমাধান নয়, একটি সচেতনতা অভিযানও।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, গুগলের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে সাইবার অপরাধ কমানোতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে শুধুমাত্র ব্যবহারকারীদের নয়, অ্যাপ ডেভেলপারদেরও তাদের প্ল্যাটফর্ম আরও নিরাপদ করার জন্য উৎসাহিত করা হবে।