ভারতের উদীয়মান প্রতিরক্ষা স্টার্টআপ: আত্মনির্ভরতার নতুন দিগন্ত

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সাথে জড়িত স্টার্টআপগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের নিরাপত্তা প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে অত্যাধুনিক সমাধান তৈরি করছে। এই স্টার্টআপগুলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), ড্রোন প্রযুক্তি, উচ্চ-প্রযুক্তির निরীক্ষণ ব্যবস্থা এবং স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্মের মতো ক্ষেত্রে কাজ করছে।

নয়াদিল্লি: ভারত এখন শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের আমদানিকারক নয়, বরং বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উৎপাদকও হয়ে উঠছে। 'মেক ইন ইন্ডিয়া' অভিযান এবং আত্মনির্ভর ভারতের অধীনে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশের নতুন শক্তি স্টার্টআপ হিসাবে উঠে আসছে। ভারতে উঠে আসা এই প্রতিরক্ষা স্টার্টআপগুলি কেবলমাত্র আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনই করেনি, বরং ভারতীয় সেনা এবং अर्धसैनिक বাহিনীকে অত্যাধুনিক সমাধান দিয়ে সজ্জিত করা শুরু করেছে।

২০১৯ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক ছিল, কিন্তু এখন এই চিত্র বদলাচ্ছে। ড্রোন, আন্ডারওয়াটার রোবোটিক্স, AI-ভিত্তিক निরীক্ষণ এবং স্মার্ট অস্ত্র তৈরিতে ভারতীয় স্টার্টআপগুলি বিদেশি বিকল্পগুলিকে কঠোর প্রতিযোগিতা দিচ্ছে। আসুন জেনে নিই এমন ৫টি ভারতীয় প্রতিরক্ষা স্টার্টআপের কথা, যারা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।

১. Garuda Aerospace – সর্বাবস্থায় কাজ করার জন্য 'ত্রিশূল' ড্রোন

  • প্রতিষ্ঠা: ২০০৭
  • মুখ্য কার্যালয়: চেন্নাই
  • প্রতিষ্ঠাতা: অগ্নিশ্বর জয়প্রকাশ

Garuda Aerospace ভারতের একটি অগ্রণী বহু-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ড্রোন স্টার্টআপ, যা निরীক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং কৃষিক্ষেত্রে অত্যাধুনিক ড্রোন তৈরি করে। কোম্পানির সবচেয়ে আলোচিত পণ্য 'ত্রিশূল', যা সীমান্ত निরীক্ষণ, জরুরী অবস্থা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রিয়েল-টাইম তথ্য প্রদান করে।

কোম্পানিটি ফেব্রুয়ারী ২০২৩-এ ২২ মিলিয়ন ডলারের সিরিজ-এ ফান্ডিং এবং অক্টোবর ২০২৩-এ ২৫ কোটি টাকার ব্রিজ ফান্ডিং পেয়েছে। এখন কোম্পানিটি ৫০টি দেশে তার পণ্যগুলির বিস্তারের পরিকল্পনার উপর কাজ করছে।

২. ideaForge – আকাশে निরীক্ষণ রাখার জন্য ভারতীয় 'আই'

  • প্রতিষ্ঠা: ২০০৭
  • মুখ্য কার্যালয়: মুম্বই
  • প্রতিষ্ঠাতা: অঙ্কিত মেহতা, আশিস ভাট, রাহুল সিং, বিপুল যোশী

ideaForge ভারতের প্রাচীনতম UAV কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি। এর উন্নত ড্রোনগুলি ভারতীয় সেনা, BSF এবং পুলিশ বাহিনী দ্বারা অপারেশনে ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় এর শেয়ারের দাম ২৫.৭১% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এর প্রভাব এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ইঙ্গিত দেয়।

যদিও সেপ্টেম্বর ২০২৪-এর ত্রৈমাসিকে কোম্পানিটি ১৩.৭ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে রাজস্ব বার্ষিক ৫৬% এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

৩. Sagar Defence Engineering – সমুদ্রের ভেতরে ভারতীয় শক্তি

  • প্রতিষ্ঠা: ২০০৭
  • মুখ্য কার্যালয়: মুম্বই
  • প্রতিষ্ঠাতা: নিকুঞ্জ পারাশর

এই স্টার্টআপ বিশেষ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য चालকবিহীন পৃষ্ঠতল (Unmanned Surface) এবং জলের নিচে চলমান যানবাহন (Underwater Vehicles) তৈরি করে। সাগর ডিফেন্স DRDO-র সাথে মিলে ভারতের প্রথম আন্ডারওয়াটার লঞ্চযোগ্য UAVও তৈরি করেছে।

সম্প্রতি এই স্টার্টআপটি বোয়িং-এর সহযোগী কোম্পানি Liquid Robotics-এর সাথে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব করেছে, যার উদ্দেশ্য হিন্দ-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্রের निরীক্ষণ ক্ষমতা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আরও শক্তিশালী করা। इससे ভারতীয় নৌবাহিনী निরীক্ষণ এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে ব্যাপক সহায়তা পাবে।

৪. Flying Wedge – স্বদেশী বোমারু ড্রোনে দক্ষতা

  • প্রতিষ্ঠা: ২০২২
  • মুখ্য কার্যালয়: বেঙ্গালুরু
  • প্রতিষ্ঠাতা: সুহাস তেজস্কান্দ

Flying Wedge খুব অল্প সময়ে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। এই স্টার্টআপ এমন আধুনিক অস্ত্র এবং ব্যবস্থা তৈরি করে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং শত্রুদের উপর সঠিক আঘাত হানতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হল এটি ভারতের প্রথম বেসরকারি কোম্পানি যা DGCA বাংলাদেশ অর্থাৎ नागर विमानन महानिदेशालय থেকে ড্রোন প্রযুক্তির সরকারী সার্টিফিকেট পেয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে কোম্পানির প্রযুক্তি কতটা নির্ভরযোগ্য এবং উন্নত।

২০২৪ সালে এটি ভারতের প্রথম স্বদেশী বোমারু মানবহীন বিমান FWD-200B উৎক্ষেপণ করেছে যার দাম প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এই বিমানটি পাইলট ছাড়াই দীর্ঘ দূরত্ব পর্যন্ত অপারেশন করতে সক্ষম।

৫. EyeROV – সমুদ্রের বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য 'জলের নিচের গুপ্তচর'

  • প্রতিষ্ঠা: ২০১৬
  • মুখ্য কার্যালয়: কোচি
  • প্রতিষ্ঠাতা: জনস টি. মাথাই, কন্নপ্পা পলনিঅ্যাপ্পান

EyeROV ভারতের প্রথম আন্ডারওয়াটার ড্রোন স্টার্টআপ যা ভারতীয় কোস্ট গার্ড এবং DRDO দ্বারা ব্যবহার করা হচ্ছে। এর দ্বারা উন্নত ROVs (Remotely Operated Vehicles) সমুদ্র নিরাপত্তা, জাহাজ निरीक्षण এবং সমীক্ষার মতো কাজে দক্ষ। কোম্পানিটি আগস্ট ২০২৪-এ ১০ কোটি টাকার প্রি-সিরিজ A ফান্ডিং পেয়েছে এবং এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিস্তারের পরিকল্পনা করছে।

আত্মনির্ভর ভারতের প্রতিরক্ষা নীতিকে দিচ্ছে শক্তি

iDEX (Innovation for Defence Excellence) এবং TDF (Technology Development Fund) এর মতো সরকারী পরিকল্পনাগুলি এই স্টার্টআপগুলিকে কেবলমাত্র অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত নির্দেশনা প্রদানই করে না, বরং DRDO এবং সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সরাসরি সহযোগিতার সুযোগও প্রদান করে। এর সাথে সাথে FDI-তে ছাড় এবং 'মেক ইন ইন্ডিয়া' নীতি বিদেশী অংশীদারিত্বের পথও প্রশস্ত করেছে।

Leave a comment