মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফিরে আসা যতটা রোমাঞ্চকর, ততটাই চ্যালেঞ্জিং। মাসের পর মাস মহাকাশে কাটানোর পর যখন তারা ফিরে আসে, তখন তাদের শারীরিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
নয়াদিল্লি: মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফিরে আসা যতটা রোমাঞ্চকর, ততটাই চ্যালেঞ্জিং। মহাকাশে মাসের পর মাস কাটানোর পর যখন তারা ফিরে আসে, তখন তাদের শারীরিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে একটি আকর্ষণীয় পরিবর্তন হল 'বেবি ফিট'। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মহাকাশচারীরা শিশুদের মতো হাঁটতে হাঁটতে ঠোঁক্কা খায়। বিজ্ঞানীদের মতে, অভিকর্ষের অভাবে শরীরের ভারসাম্য ব্যাঘাতগ্রস্ত হয় এবং পায়ের ত্বকেও পরিবর্তন আসে।
বেবি ফিটের কারণ কি?
মহাকাশে থাকাকালীন মহাকাশচারীদের পায়ের ত্বকের পুরু অংশ ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়। এর কারণ হল সেখানে তাদের তলার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। পৃথিবীতে যখন আমরা হাঁটি, তখন আমাদের পায়ের তলা সর্বদা পৃষ্ঠের সংস্পর্শে থাকে, যার ফলে সেখানকার ত্বক শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু মহাকাশে তা হয় না, কারণ মহাকাশচারীরা শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ভেসে থাকে। যখন তারা পৃথিবীতে ফিরে আসে, তখন তাদের পায়ের ত্বক অত্যন্ত নাজুক ও সংবেদনশীল হয়ে যায়, ঠিক নবজাত শিশুর পায়ের মতো। তাই তারা কিছু সময় পর্যন্ত সঠিকভাবে হাঁটতে পারে না।
অভিকর্ষের অভাবে ভারসাম্যের উপর প্রভাব
অভিকর্ষের অভাবে শুধুমাত্র ত্বকই নয়, শরীরের পেশী ও হাড়ও দুর্বল হয়ে যায়। মহাকাশে মাসের পর মাস কাটানোর পর পৃথিবীতে হাঁটতে মহাকাশচারীদের অসুবিধা হয়, কারণ তাদের শরীর নতুন করে অভিকর্ষের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার ফলে তাদের শরীরে বোন ডেনসিটি লসের সমস্যাও দেখা দেয়। এটি হাড়কে দুর্বল করে তোলে এবং কখনও কখনও ভাঙ্গার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।
কিভাবে স্বাভাবিক হয় মহাকাশচারীরা?
মহাকাশে থাকাকালীন তাদের পেশী ও হাড়কে শক্তিশালী রাখার জন্য মহাকাশচারীদের নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারা প্রতিদিন প্রায় ২.৫ ঘণ্টা মহাকাশ স্টেশনে বিশেষভাবে তৈরি ব্যায়াম যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে। এর মধ্যে রয়েছে ডেডলিফ্ট, স্কোয়াট, বেঞ্চ প্রেসিং এবং ট্রেডমিল রানিং। এছাড়াও, হাড়ের শক্তি বজায় রাখার জন্য তারা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সম্পূরকও গ্রহণ করে।
মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর সুস্থতার জন্য কত সময় লাগে?
পৃথিবীতে ফিরে আসার পর মহাকাশচারীদের পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এই সময় তারা বিশেষ পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অংশ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে ফিজিক্যাল থেরাপি এবং ভারসাম্য উন্নত করার ব্যায়াম। ধীরে ধীরে তাদের ত্বক, হাড় ও পেশী আবার শক্তিশালী হয় এবং তারা আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে-চলতে পারে।
