কুম্ভ ২০২৫: প্রয়াগরাজে ৪২ ঘণ্টা, মানুষের মহামিলনের সাক্ষী এক কর্পোরেট নারী

🎧 Listen in Audio
0:00

প্রয়াগরাজ, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: ভারতের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব মহাকুম্ভে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বাইরেও এই মিলনমেলায় ফুটে উঠেছে ভারতের বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি ও মানবতার চিত্র।

অপ্রত্যাশিত যাত্রার শুরু
কুম্ভ মেলায় যাওয়ার আগ্রহ থাকলেও টিকিট পাওয়া ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। ট্রেন, বিমান—কোথাও জায়গা নেই। শেষমেশ এক ট্রাভেল এজেন্টের সাহায্যে রবিবার আকস্মিকভাবে টিকিট নিশ্চিত হয়। সোমবার সকালে প্রয়াগরাজের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিমানে ‘মিনি ভারত’
সকাল সাড়ে ৮টার ফ্লাইটে ওঠার পরেই বোঝা গেল, এটি শুধু একটি ভ্রমণ নয়, বরং এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বিমানের যাত্রীদের বেশির ভাগই কুম্ভগামী। কেউ এসেছেন কাতার থেকে, কেউ ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। পোশাক, ভাষা, আচার—সব মিলিয়ে বিমানের মধ্যেই যেন তৈরি হয়েছিল এক ‘মিনি ভারত’।

প্রয়াগরাজে পৌঁছে কুম্ভের প্রাণচাঞ্চল্য
৭০ মিনিটের যাত্রার পর প্রয়াগরাজ বিমানবন্দরে পৌঁছতেই চোখে পড়ল উৎসবের আমেজ। বিমানবন্দর ফুল দিয়ে সাজানো, চারপাশে মানুষের ঢল। আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষায় ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ঋষভ জয়সওয়াল, যিনি ৪২ ঘণ্টার জন্য আমাদের আতিথেয়তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

সঙ্গমে স্নানের অভিজ্ঞতা
বেলা সাড়ে ১২টায় যাত্রা শুরু হয় গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে। নৌকায় ওঠার জন্য দর কষাকষির পর জনপ্রতি ১,৫০০ টাকায় রফা হয়। নদীর বুকে সারি সারি নৌকা, উড়ে চলেছে অসংখ্য সাদা পাখি। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর স্পিডবোট নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছে।

স্নানের জায়গায় পৌঁছে দেখা গেল, ভাসমান এক চাতালের ওপর দাঁড়িয়ে মানুষ একে একে জলে নামছেন। গঙ্গার ঠান্ডা জলে স্নান করার সময় এক অনন্য অনুভূতি হয়। স্নান শেষে কপালে লাল চন্দনের তিলক পরিয়ে দেওয়া হয়—যেন এক আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি।

কুম্ভের মেলা: ধর্মের বাইরে মিলনমেলা
শুধু ধর্মীয় আয়োজন নয়, কুম্ভের মেলাও এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বিশাল এলাকাজুড়ে লাখো মানুষের সমাগম, মেলার ভেতরে অযোধ্যার রামমন্দিরের প্রতিরূপ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা—সব মিলিয়ে এটি এক বহুমাত্রিক আয়োজন।

বিশেষ আকর্ষণ ছিল মেলার শৃঙ্খলা ও সহনশীলতা। হাজার হাজার মানুষ চলাফেরা করলেও কোথাও বিশৃঙ্খলা নেই, নেই কোনো বিশৃঙ্খল আচরণ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেন একই স্রোতে মিশে গেছে।

সমাপ্তি, কিন্তু স্মৃতির রেশ
রাতে ফেরার উড়ান ছিল তিনটায়। মাঝরাতেও প্রয়াগরাজের রাস্তায় ছিল মানুষের ভিড়, কিন্তু শৃঙ্খলাবদ্ধ। কলকাতায় ফিরে মনে হল—এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই ভারতের আসল পরিচয়।

কুম্ভ শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি ভারতবর্ষের আত্মার এক প্রতিচ্ছবি, যেখানে নানা ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম একসঙ্গে মিশে গেছে এক পাত্রে।

Leave a comment