দেশের প্রথম নারী ট্রান্সজেন্ডার কথক নৃত্যশিল্পী দেবিকার অসাধারণ সাফল্যের গল্প

🎧 Listen in Audio
0:00

তাঁজ মহোৎসবে দেশের প্রথম নারী ট্রান্সজেন্ডার নৃত্যশিল্পী দেবিকা দেবেন্দ্র মুক্তমঞ্চে কথকের প্রদর্শনী দিয়েছেন। যা দেখে সকলেই তাঁর প্রতিভার মুগ্ধ হয়েছেন। দর্শকরা তালি দিয়েছেন। দর্শকদের ভালোবাসা ও উৎসাহ পেয়ে দেবিকাও সোনালী স্মৃতি সংগ্রহ করেছেন।

 

যদিও, দেবিকার প্রতিভার প্রশংসা করার মধ্যে কম লোকই জানেন যে ট্রান্সজেন্ডার নৃত্যশিল্পী হিসেবে তাঁকে অনেক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। দেবিকা বলেছেন কিভাবে তিনি এই স্থানে পৌঁছেছেন।

আসুন জেনে নেই দেবিকার পুরো যাত্রার গল্প, তাঁরই মুখে… 

কথক শেখার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন
দেবিকা জানিয়েছেন যে তিনি মূলত রাজস্থানের ধৌলপুরের বাসিন্দা। বর্তমানে দেশের প্রথম নারী ট্রান্সজেন্ডার কথক নৃত্যশিল্পী। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ সরকারের ট্রান্সজেন্ডার কল্যাণ বোর্ডের সদস্য। তিনি বলেন, জন্মের সময় ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় পাওয়া যায় না। এর জন্য ১৪ বছর সময় লাগে। তখন আপনি আপনার লিঙ্গ চিনতে পারেন, শরীরকে বুঝতে পারেন। আমার সাথেও এমনটাই হয়েছিল।

বাড়িতে তাঁর মা নৃত্য জানতেন। যখন তাঁরা জানতে পারেন যে দেবিকা একজন ট্রান্সজেন্ডার, পুরুষের দেহে একজন নারী, তখন তাঁকে অনেক সামাজিক বৈষম্যের সম্মুখীন হতে হয়। তাঁর শৈশব থেকেই নৃত্যে গভীর আগ্রহ ছিল, কিন্তু পরিবারের শর্ত ছিল যে তিনি তাঁর পরিচয় গোপন রাখবেন।

এই শর্ত দেবিকা মেনে নিতে পারেননি
কিন্তু এই শর্ত দেবিকা মেনে নিতে পারেননি। এরপর তিনি বাড়ি ছেড়ে দিল্লি চলে যান। সেখানে কেউ পরিচিত ছিল না। দিল্লিতে অনেক রাত রাস্তায় কাটাতে হয়েছিল। এতটুকুই নয়, পেট পূরণের জন্য ভিক্ষাও করতে হয়েছিল। এমন এক সময়ও এসেছিল যখন তাঁকে বেশ্যাবৃত্তির কথাও ভাবতে হয়েছিল।

সেটা ছিল খুব কঠিন সময়। কিন্তু ধীরে ধীরে সময় কেটে গেল। তিনি নিজেকে চিনতে পারলেন। ঠিক করলেন যে তাঁর জন্ম ভিক্ষা করে খাওয়ার জন্য হয়নি। তিনি পড়াশোনা করে নিজের অবস্থান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

এভাবে শুরু হল কথকের যাত্রা
দেবিকা দিল্লির ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলে একবার কথকের ওয়ার্কশপ হয়। তিনি তাতে অংশ নেন। সেখান থেকে তাঁর কথকের যাত্রা শুরু হয়। দিল্লিতে বেশ কিছুদিন কাটায় তিনি।

একদিন যখন তিনি রাস্তায় ভিক্ষা করার সময় কথকের মুদ্রা করছিলেন, তখন লখনউ ঘরানার পণ্ডিত লচ্ছু মহারাজের শিষ্য কথক গুরু কপিলা রাজের দৃষ্টিতে পড়েন। কপিলা রাজ তাঁকে লখনউ আসার আমন্ত্রণ জানান। এরপর দেবিকা কপিলা রাজগুরুর কাছে লখনউ গিয়ে কথকের সূক্ষ্মতা শিখেন। এখন তিনি প্রথম ট্রান্সজেন্ডার কথক নৃত্যশিল্পী।

শুধু ট্রান্সজেন্ডারদের মানুষ হিসেবে দেখুক
দেবিকা এলজিবিটি, ট্রান্সজেন্ডার এবং কিन्नর সম্প্রদায়ের সাথে জড়িত ভুল ধারণা দূর করার চেষ্টা করছেন। তাঁর মতে, সমাজে আর কিছুই চাই না, শুধুমাত্র ট্রান্সজেন্ডারদের মানুষ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। আজও অনেকে ট্রান্সজেন্ডার ও এলজিবিটি সম্প্রদায়কে অস্পৃশ্য হিসেবে দেখেন। তাঁদের শারীরিকভাবে অক্ষম মনে করেন। তাঁদের অধিকার দেওয়া হয় না।

জোর করে ভিক্ষাবৃত্তি ও বেশ্যাবৃত্তিতে ঠেলে দেওয়া হয়। সমাজের একটা ধারণা আছে যে কিन्नর সম্প্রদায়ের লোকেরা চৌরাস্তায় তালি পিটে টাকা ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু তা নয়। আমরাও মানুষ, এবং আমাদেরও সমাজে থাকার অধিকার আছে। আমাদেরও সুযোগ পেতে হবে।

তিনি রাজ্য সরকারেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন যে প্রথমবারের মতো কোনও সরকার ট্রান্সজেন্ডার কল্যাণ বোর্ড গঠন করেছে এবং তিনি সেই বোর্ডের সদস্য। সমাজে ধীরে ধীরে হলেও পরিবর্তন অবশ্যই আসবে।

Leave a comment