দিল্লি সরকারি স্কুলের জন্য বাস পরিষেবা পুনঃচালু

🎧 Listen in Audio
0:00

দিল্লির স্কুল: দিল্লির লক্ষ লক্ষ স্কুলছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য একটি স্বস্তির সংবাদ এল। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার উদ্যোগে দিল্লি সরকার সরকারি স্কুলগুলির জন্য বাস পরিষেবা পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপটি শিশুদের নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি অভিভাবকদের একটি বড়ো উদ্বেগ দূর করবে।

কেন এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

২০২২ সালে দিল্লির সরকারি স্কুলগুলির জন্য ডিটিসি বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সংস্থানের অভাব এবং প্রশাসনিক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর প্রভাব পড়েছিল সেসব শিশু ও তাদের পরিবারের উপর যারা এই বাসগুলির মাধ্যমে স্কুলে যেত। বাস পরিষেবা বন্ধ হওয়ার পর, অভিভাবকদের ব্যক্তিগত ভ্যান বা ক্যাব ভাড়া করতে হয়েছিল, যা কেবলমাত্র ব্যয়বহুল ছিল না, অনেক ক্ষেত্রে অসুরক্ষিতও ছিল।

কিছু ক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের দ্বারা শিশুদের সাথে অশ্লীল আচরণ এবং যৌন নির্যাতনের মত ঘটনাও ঘটেছে। এতে বিশেষ করে সেসব অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছিল যারা আর্থিকভাবে দুর্বল।

মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেন

শিশুদের নিরাপত্তা এবং অভিভাবকদের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ দেখে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। তিনি দিল্লির পরিবহন দপ্তরকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন যে সরকারি স্কুলগুলির জন্য বাস পরিষেবা পুনরায় চালু করা হোক।

তার চিঠিতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন:

'২০২২ সাল থেকে স্কুল বাস পরিষেবা বন্ধ হওয়ার পর শিশুদের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়েছে। অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন, কিন্তু এতে অনেক সময় অপরাধ এবং শিশুদের সাথে ভুল ঘটনা ঘটছে। এটি শিশুদের মৌলিক অধিকারেরও লঙ্ঘন, যা উপেক্ষা করা যাবে না।'

মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়টিকে আরও জোরদার করে মাদ্রাজ হাইকোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ের উল্লেখ করেছেন। সেই রায়ে আদালত বলেছিল যে স্কুলছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা বাস থাকা উচিত এবং তাদের সংখ্যাও বাড়ানো উচিত, যাতে শিশুরা নিরাপদে এবং সুবিধাজনক ভ্রমণ করতে পারে।

মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়ের উল্লেখ

মুখ্যমন্ত্রী গুপ্তা তার চিঠিতে মাদ্রাজ হাইকোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ের উল্লেখ করেছেন, যেখানে আদালত বলেছিল যে স্কুলছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ করে বাস সরবরাহ করা উচিত এবং তাদের সংখ্যাও বাড়ানো উচিত। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, যখন সরকার সম্প্রতি কয়েকশো নতুন বাস কিনেছে, তাহলে এই বাসগুলির কিছু শিশুদের জন্য সংরক্ষণ করা যায় না কেন?

ডিটিসির উত্তর

মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির জবাবে দিল্লি পরিবহন নিগম (ডিটিসি) -এর ব্যবস্থাপক এ. কে. রাও জানিয়েছেন যে বর্তমানে ডিটিসি কিছু স্কুলকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বাস সরবরাহ করছে। তিনি আরও বলেছেন যে, যদিও সিএনজি বাসের সংখ্যা সীমিত, তবে শিশুদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

এই বাসগুলি স্কুলগুলিকে ভাড়ায় দেওয়া হবে এবং এর জন্য একই নির্দেশিকা প্রযোজ্য হবে যা আগে স্কুল সেলের অধীনে নির্ধারিত ছিল।

কেন্দ্র সরকারের অনুমোদনও প্রয়োজন

ডিটিসি এটাও স্পষ্ট করেছে যে স্কুলগুলিকে বাস ভাড়ায় দেওয়ার প্রক্রিয়া কেন্দ্র সরকারের অনুমতিতে হবে। বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হবে যাতে সাধারণ যাত্রীদের জন্য চলমান বাস পরিষেবাগুলি প্রভাবিত না হয়।

এই সিদ্ধান্তের ফলে কি কি লাভ হবে?

শিশুদের নিরাপত্তায় উন্নতি: সরকারি বাসে প্রশিক্ষিত চালক ও সহকারী থাকে, যার ফলে শিশুদের যাত্রা নিরাপদ হয়।

অভিভাবকদের স্বস্তি: ব্যক্তিগত ভ্যান ও ক্যাবের খরচ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং শিশুদের স্কুলে যাতায়াতের উদ্বেগ কমবে।

যানজট কমবে: যদি হাজার হাজার শিশু সরকারি বাস ব্যবহার করে, তাহলে রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমবে এবং যানজটও কমবে।

সরকারি সম্পদের সঠিক ব্যবহার: নতুন ক্রয়কৃত বাসগুলির সঠিক ব্যবহার হবে, যা আগে শুধুমাত্র সাধারণ যাত্রীদের জন্য চালানো হচ্ছিল।

শিক্ষার আরও ভালো প্রবেশাধিকার: দূরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের জন্য স্কুলে যাওয়া আরও সহজ হবে, যার ফলে ড্রপআউটের হারও কমতে পারে।

কবে থেকে শুরু হবে এই পরিষেবা?

বর্তমানে এই বিষয়ে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি যে বাস পরিষেবা কবে থেকে শুরু হবে। কিন্তু পরিবহন দপ্তর ও দিল্লি সরকার যৌথভাবে দ্রুত কাজ করছে। খুব শীঘ্রই এর তারিখ এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশিত হতে পারে।

অভিভাবকদের কি করতে হবে?
 
যখনই পরিষেবা পুনরায় শুরু হবে, সরকারি স্কুলগুলিতে এর তথ্য দেওয়া হবে। অভিভাবকরা তাদের নিকটবর্তী স্কুল প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য পেতে পারেন এবং তাদের সন্তানদের এই পরিষেবায় যুক্ত করতে পারেন। এতে শুধুমাত্র শিশুদের যাত্রা নিরাপদ হবে না, অভিভাবকরাও মানসিক শান্তি পাবে।

দিল্লি সরকারের এই সিদ্ধান্তটি আসলে শিশুদের নিরাপত্তা ও অভিভাবকদের উদ্বেগ বুঝতে পারার একটি সিদ্ধান্ত। যদি এটি কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে এটি শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে না, অভিভাবকদের আস্থাও দৃঢ় করবে। এখন প্রয়োজন সকল স্কুল, দপ্তর ও অভিভাবকরা মিলে এই উদ্যোগকে সফল করবে।

Leave a comment