বিহার সরকার ৪৫০০-এর বেশি পদে নতুন নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নগর উন্নয়নসহ বহু বিভাগে শীঘ্রই নিয়োগ শুরু হবে। সেওয়ারেজ, জল সরবরাহ এবং সেতু মেরামতসহ মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে।
চাকরি: বিহারের যুব সমাজের জন্য আবারও চাকরির দুয়ার খুলে গেছে। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন বিহার সরকার মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে ৪৭টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হল—রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ৪৫০০ পদে নতুন নিয়োগের অনুমোদন। এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র কর্মসংস্থানের দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি বিহারের উন্নয়নের গতিও নতুন করে ত্বরান্বিত করবে।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
বুধবার অনুষ্ঠিত নীতীশ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪৭টি এজেন্ডা অনুমোদিত হয়। এ সময় বহু পরিকল্পনা এবং পদ পুনঃস্থাপন নিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, কিন্তু সবচেয়ে বড় ঘোষণা ছিল—রাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন বিভাগে ৪৫০০-এর বেশি পদ পুনঃস্থাপনের অনুমোদন।
এই পদ পুনঃস্থাপনে শিক্ষা বিভাগ, নগর উন্নয়ন ও আবাসন বিভাগ, সমাজ কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ প্রধান। এই সকল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে খালি থাকা পদগুলি পূরণের প্রক্রিয়া এখন দ্রুত গতিতে শুরু হবে।
কোন বিভাগে কত নিয়োগ?
যদিও এখনও বিভাগ অনুযায়ী পদের সঠিক সংখ্যার আনুষ্ঠানিক তালিকা প্রকাশিত হয়নি, তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই পুনঃনিয়োগে সবচেয়ে বেশি পদ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগে। এছাড়াও সমাজ কল্যাণ এবং নগর উন্নয়ন ইত্যাদি বিভাগেও বেশি সংখ্যক নিয়োগ হবে।
এই পদগুলির জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া বিহার লোক সেবা আয়োগ (BPSC), কর্মচারী নির্বাচন আয়োগ (BSSC), এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির মাধ্যমে করা হবে।
যুব সমাজ উপকৃত হবে
বিহারে লক্ষ লক্ষ যুবক বছরের পর বছর ধরে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগের ধীরগতির কারণে বেকার যুবকদের মধ্যে হতাশা ছিল। কিন্তু এখন সরকার একসাথে ৪৫০০ পদে পুনঃনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা BPSC, BTSC, বা অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন যুবকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পুনঃনিয়োগ প্রক্রিয়াটি যদি স্বচ্ছ ও সময়োপযোগীভাবে করা হয় তাহলে বিহারের কর্মশক্তি এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
উন্নয়ন পরিকল্পনাও পেল সবুজ সংকেত
এই মন্ত্রিসভা বৈঠকে শুধুমাত্র চাকরির অনুমোদনই দেওয়া হয়নি, বরং রাজ্যের মৌলিক অবকাঠামো উন্নত করার জন্যও বহু পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে।
- সেওয়ারেজ প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ: সাসারাম, অরঙ্গাবাদ এবং সিওয়ানের মতো শহরগুলিতে আধুনিক সেওয়ারেজ ব্যবস্থার জন্য কোটি কোটি টাকার পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। এর ফলে এই নগরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা এবং ময়লার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
- জল সরবরাহ পরিকল্পনা: সিওয়ান, আরা এবং সাসারামের মতো শহরগুলিতে পানীয় জলের সরবরাহ উন্নত করার জন্য বৃহৎ প্রকল্পগুলি অনুমোদিত হয়েছে। এর ফলে নগরবাসীকে পরিষ্কার পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
- সেতু মেরামতের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ নীতি: রাজ্যের সেতুগুলির দেখভাল এবং মেরামতের জন্য একটি বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ নীতি অনুমোদিত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের মৌলিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করার দিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
- জাহাজ মেরামতের জন্য ড্রাই ডক: পটনার দুজরায় ৫ একর জমিতে ড্রাই ডক নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে, যার ফলে রাজ্যে জল পরিবহনের উন্নয়ন হবে এবং জাহাজ মেরামতের মতো প্রযুক্তিগত সেবা স্থানীয় পর্যায়ে উপলব্ধ হবে।
সরকারি সূত্র কী বলছে?
সূত্রের মতে, সরকারের ইচ্ছা এই পুনঃনিয়োগগুলি যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা, যাতে আগামী অর্থবছরে এই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের সেবা কার্যকরভাবে শুরু হতে পারে। শিক্ষা বিভাগে শিক্ষক এবং কেরানি পর্যায়ে নিয়োগ হবে, অন্যদিকে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ এবং সহকারীদের প্রয়োজন বলে জানা গেছে।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, 'মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের প্রধান লক্ষ্য যুবকদের কর্মসংস্থান এবং রাজ্যের মৌলিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করা। এই চিন্তাভাবনার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে।'
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
সরকারি সিদ্ধান্তে যেখানে যুবকদের মধ্যে উৎসাহ রয়েছে, সেখানে বিরোধী দল এটিকে নির্বাচনী কৌশল বলে অভিহিত করে সরকারের কাছে জিজ্ঞাসা করেছে যে এই নিয়োগের সময়সীমা কি নির্ধারিত হয়েছে? রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব বলেছেন, 'সরকারকে জানাতে হবে যে কবে নাগাদ নিয়োগগুলি সম্পূর্ণ হবে এবং এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে কিনা।'