চীনের ঋণের জালে আটকে ৭৫টি দরিদ্র দেশ

🎧 Listen in Audio
0:00

চীন ৭৫টি দরিদ্র দেশকে ঋণের জালে ফেলেছে। এখন এই দেশগুলিতে কোটি কোটি ডলারের ঋণ আদায়ের চাপ পড়েছে। BRI প্রকল্পের মাধ্যমে চীন দরিদ্র দেশগুলিকে নিজের কব্জায় আটকে রাখছে।

China BRI Project: বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে চীনের ঋণের জাল দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের মতে, চীন ৭৫টি সবচেয়ে দরিদ্র দেশকে কোটি কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। এখন এই দেশগুলিকে চলতি বছরে চীনকে ২২ বিলিয়ন ডলার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে এই দেশগুলির অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ পড়েছে।

Lowy Institute-এর প্রতিবেদনের উন্মোচন

অস্ট্রেলিয়ার Lowy Institute মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে চীন বিশ্বের ৭৫টি দরিদ্র দেশকে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এই দেশগুলিতে এত চাপ পড়েছে যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যয় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে চীন এখন এই দেশগুলির জন্য সহায়ক ব্যাংকার নয় বরং ঋণ আদায়কারী হয়ে উঠেছে।

BRI-এর মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলিকে জালে ফাঁসিয়ে রাখছে চীন

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ অর্থাৎ BRI প্রকল্পের অধীনে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় চীন দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে রাস্তাঘাট, সেতু, বিমানবন্দর, হাসপাতাল এবং অন্যান্য মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ব্যাপক পরিমাণে ঋণ দিয়েছে। চীন এই দেশগুলিকে উচ্চ সুদের হারে ঋণ দেয় এবং ধীরে ধীরে তাদের ঋণের জালে ফাঁসিয়ে দেয়। এর পরে তারা এই দেশগুলিতে নিজেদের কৌশলগত আধিপত্য জোরদার করে।

ঋণ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় চীন সবচেয়ে বড় ঋণদাতা হয়ে উঠেছে

২০১৬ সালের মধ্যে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছে। তার মোট ঋণ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা পশ্চিমা দেশগুলির মোট ঋণের চেয়েও বেশি। চীন অনেক দেশকে ঋণ দিয়ে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৌশলগত এলাকায় নিজের আধিপত্য জোরদার করেছে।

লাওসসহ অনেক দেশ ঋণের বোঝা নিয়ে কাতর

Lowy Institute-এর প্রতিবেদনে লাওসের উদাহরণও দেওয়া হয়েছে। লাওস দেশীয় শক্তি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের জন্য চীন থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু এখন সে ঋণের বোঝার নিচে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। লাওস যখন সবচেয়ে বেশি ঋণের প্রয়োজন ছিল তখন চীন ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে লাওসের মতো দেশগুলি গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে।

চীনেও বাড়ছে ঘরোয়া চাপ

যদিও চীন বিশ্বজুড়ে ঋণ বিতরণ করছে, কিন্তু এখন তার উপরও নিজ দেশের ভেতরে ঋণ আদায়ের চাপ বাড়ছে। পাকিস্তান, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া এবং লাওসের মতো দেশগুলিতে চীন প্রচুর ঋণ দিয়েছে। এছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ দেশগুলির প্রতিও চীনের দৃষ্টি রয়েছে।

ঋণের পেছনে চীনের কৌশলগত চাল

চীন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লাভের জন্য নয়, রাজনৈতিক লাভের জন্যও ঋণ ব্যবহার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে যেসব দেশ তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে, তাদেরকে চীন ঋণ দিতে শুরু করেছে। যেমন হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, বুর্কিনা ফাসো এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রকে তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ১৮ মাসের মধ্যেই চীন ঋণ দিয়েছে।

চীনের উপর ঋণের প্রকৃত তথ্য গোপন করার অভিযোগ

Lowy Institute-এর প্রতিবেদনের মতে চীন তার ঋণের তথ্য গোপন করে। BRI প্রকল্প সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়। ২০১-এ অন্য একটি প্রতিবেদন AidData অনুমান করেছিল যে চীন প্রায় ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।

Leave a comment