ওয়াকফ আইন: সুপ্রিম কোর্টে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি

🎧 Listen in Audio
0:00

আজ সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হবে। প্রধান বিচারপতি (CJI) সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি পিভি সঞ্জয় কুমারের দুই সদস্যীয় বেঞ্চ দুপুর ২ টা থেকে এই মামলার শুনানি শুরু করবে। এই বেঞ্চের সামনে ওয়াকফ বোর্ডের সমর্থনে এবং বিরোধিতায় দাখিল করা মোট ১০টি আবেদন তালিকাভুক্ত রয়েছে।

ওয়াকফ আইন ২০২৫: ভারতে ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে আবারও একটি বড় সাংবিধানিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আজ সুপ্রিম কোর্টে এই বিতর্কিত বিষয়টির শুনানি হতে চলেছে, যেখানে ভারতের প্রধান বিচারপতি (CJI) সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি পিভি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ দুপুর ২ টা থেকে ওয়াকফ আইন সংক্রান্ত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ আবেদনের শুনানি করবে।

যদিও কোর্টে মোট ৭০টিরও বেশি আবেদন দাখিল করা হয়েছে, যার মধ্যে কিছুতে ওয়াকফ সংশোধনী আইন ২০২৫ কে অসংবিধানিক ঘোষণা করে তা সম্পূর্ণ বাতিল করার দাবি করা হয়েছে, আবার কিছু আবেদনে এর বাস্তবায়নে তৎক্ষণাৎ নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করা হয়েছে।

১০টি মূল দিক থেকে ওয়াকফ আইন বিতর্ক বুঝুন

১. কী ঘটনা?

৪ এপ্রিল ২০২৫ সালে সংসদ থেকে পাস হওয়া ওয়াকফ বোর্ড সংশোধনী আইন ২০২৫, ৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় এবং ৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়। এই আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও আবেদন দাখিল করা হয়।

২. কারা আবেদনকারী?

সুপ্রিম কোর্টে যাঁরা প্রধান নেতা ও সংগঠন আবেদন দাখিল করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন AIMIM প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, AAP বিধায়ক আমানতুল্লাহ খান, RJD সাংসদ মনোজ কুমার ঝা, জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দ, অল কেরালা জমিয়াতুল উলেমা এবং এসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস।

৩. কী অভিযোগ?

আবেদনকারীদের দাবি, নতুন আইন ওয়াকফ সম্পত্তিকে দেওয়া সাংবিধানিক সুরক্ষা বাতিল করে এবং এটি মুসলমানদের সাথে বৈষম্য করে।

৪. AIMIM-এর যুক্তি

ওয়াইসি কোর্টে বলেন, ওয়াকফের সম্পত্তিকে দেওয়া সুরক্ষা সরিয়ে, অন্য ধর্মের সম্পত্তিকে ছাড় দিলে সংবিধানের ১৪ ও ২৫ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হয়।

৫. AAP বিধায়কের আপত্তি

আমানতুল্লাহ খান বলেন, ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে।

৬. সরকারের পক্ষ

কেন্দ্র সরকার এই আইনকে কেবল ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করে, ধর্মীয় বিষয় নয়। সরকার বলেছে, সংশোধনটি স্বচ্ছতা এবং দরিদ্রদের কল্যাণের জন্য প্রয়োজন।

৭. রাজ্যগুলির অবস্থান

হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং উত্তরাখণ্ড সহ ৭টি রাজ্য আইনের পক্ষে আবেদন দাখিল করেছে।

৮. সংসদীয় প্রক্রিয়া

সরকারের দাবি, বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এবং তাতে অনেক বিরোধী দলের পরামর্শও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

৯. দেশজুড়ে প্রতিবাদ

সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দেশের অনেক স্থানে প্রতিবাদ হয়েছে। সবচেয়ে हिंसक প্রতিবাদ পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে, যেখানে हिंसाয় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

১০. মমতা ব্যানার্জির ঘোষণা

বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্যে ওয়াকফ সংশোধনী আইন কার্যকর করা হবে না।

কী পথ?

আজকের শুনানিতে কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে আইনে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে কি না। পাশাপাশি সংবিধানের অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে এই আইনের বৈধতার পর্যালোচনা হবে। এই মামলার রায় কেবল মুসলিম সম্প্রদায় নয়, ভারতে ধর্মীয় ও সাংবিধানিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করতে পারে। এই মামলা ভারতের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক কাঠামোর ভারসাম্য, সংখ্যালঘু অধিকার এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা তৈরি করতে পারে।

এটি কেবল ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার ভারসাম্যের পরীক্ষা নয়, বিশ্বজুড়ে সংখ্যালঘুদের অধিকারের নজরদারি করছে এমন সংগঠনগুলিরও দৃষ্টি এদিকে রয়েছে।

Leave a comment