উত্তরাখণ্ডে ২০২৭-এর নির্বাচনে কংগ্রেসের নতুন কৌশল: পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর উপর ফোকাস

🎧 Listen in Audio
0:00

উত্তরাখণ্ডে ২০২৭ সালে অনুষ্ঠিত হতে চলা বিধানসভা নির্বাচনের কৌশলী পরিকল্পনা নিয়ে কংগ্রেস দল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিজেপিকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিতে কংগ্রেস এবার অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণী (ওবিসি), অনুসূচিত জাতি (এসসি), অনুসূচিত জনজাতি (এসটি) এবং অন্যান্য দুর্বল শ্রেণীর উপর বিশেষ মনোযোগ দেবে।

দেহরাডুন: উত্তরাখণ্ডের রাজনীতি আবার একবার ঘুরপাক খাচ্ছে, এবং এবার ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য করে কংগ্রেস বড় ধরণের কৌশলগত প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলের ফোকাস এখন স্পষ্ট, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণী (ওবিসি), অনুসূচিত জাতি (এসসি), অনুসূচিত জনজাতি (এসটি) এবং সংখ্যালঘুদের কেন্দ্র করে নির্বাচনী ভিত্তি দৃঢ় করা।

কংগ্রেস তাদের সাংগঠনিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে দুর্বল শ্রেণীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা, সমষ্টিগত নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং বিজেপির জাতিগত রাজনীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।

২০২৭ সালে বিজেপির সাথে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি

উত্তরাখণ্ডে গত এক দশকে কংগ্রেস ক্রমাগত পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে—চাই তা লোকসভা নির্বাচনই হোক বা বিধানসভা নির্বাচন। ২০২৭ সালের জন্য কংগ্রেস এখন জাতিগত জনগণনা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দলিত-পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর সমস্যাগুলির সাহায্যে বিজেপির বিজয়রথকে থামানোর কৌশল নিয়ে কাজ করছে।

নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলের হাইকমান্ড স্পষ্ট সংকেত দিয়েছে যে উত্তরাখণ্ডে এখন ব্যক্তিগত নেতৃত্ব বা আঞ্চলিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে সহ্য করা হবে না। সমষ্টিগত নেতৃত্ব এবং জাতিগত ভারসাম্যের উপর ভিত্তি করে গঠিত সংগঠনই কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করবে।

ওবিসি, এসসি-এসটি, সংখ্যালঘুদের উপর বিশেষ ফোকাস

উত্তরাখণ্ডের জনসংখ্যার বেশিরভাগ অংশ, প্রায় ৭৮% ওবিসি এবং সাধারণ শ্রেণী থেকে আসে। এছাড়াও, অনুসূচিত জাতির জনসংখ্যা প্রায় ১৯% এবং অনুসূচিত জনজাতির প্রায় ৩%। কংগ্রেস এই তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট কৌশল তৈরি করেছে যে তাদের ভিত্তি দৃঢ় করতে হবে সেখান থেকে যেখানে বিজেপি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

হরিদ্বার, উধমসিংহ নগর এবং উত্তরকাশী ইত্যাদি জেলা, যেখানে ওবিসি সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি, কংগ্রেসের জন্য বিশেষ কৌশলগত কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এই জেলাগুলিতে দল ২০২২ সালে কিছু আসন জয়লাভে সফল হয়েছিল, যা এখন ২০২৭ সালের ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।

প্রশিক্ষণ এবং জনসংযোগে জোর

প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি করণ মাহরা জানিয়েছেন যে কংগ্রেস এখন সংগঠনকে সক্রিয় করা এবং প্রতিটি শ্রেণীকে একত্রিত করার কাজ যুদ্ধের মতো শুরু করেছে। সকল জেলায় প্রশিক্ষণ শিবির চালু করা হচ্ছে, যেখানে কর্মীদের সামাজিক ন্যায়বিচার, কংগ্রেসের আদর্শ এবং বর্তমান সরকারের নীতির ত্রুটিগুলির উপর ভিত্তি করে যোগাযোগ তৈরি করার জন্য বলা হচ্ছে।

ওবিসি এবং এসসি-এসটি শ্রেণীর যুবকদের বিশেষভাবে সংগঠনে যুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, নারী ও বালিকাদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কৌশল নেওয়া হচ্ছে, যাতে দল সংবেদনশীল বিষয়গুলিতে তাদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে পারে।

জাতিগত জনগণনা রাজনৈতিক অস্ত্র হবে

জাতিগত জনগণনা, যা কংগ্রেস জাতীয় পর্যায়ে একটি বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছে, উত্তরাখণ্ডেও দলের প্রধান নির্বাচনী অস্ত্র হতে চলেছে। দল এটাকে সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে এবং বিজেপির জাতিগত ধ্রুবীকরণের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। কংগ্রেসের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন যে বিজেপি যেখানে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর ভোটব্যাঙ্কের উপর মনোযোগী থাকে, সেখানে কংগ্রেস সকল শ্রেণীকে প্রতিনিধিত্ব এবং সম্মান প্রদানের কথা বলে। এই নীতি অনুসরণ করে এখন সকল বিধানসভা ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিদের সামনে আনা হবে, যারা দুর্বল শ্রেণী থেকে আসে এবং জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখে।

‘একা নয়, সমষ্টিগত নেতৃত্বই কংগ্রেসের পরিচয় হবে’

হাইকমান্ড এবার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে উত্তরাখণ্ডে ‘আপনার ঢোল, আপনার বাজনা’ নীতি চলবে না। দলের সকল নেতা এখন একসাথে কাজ করবে এবং সমষ্টিগত নেতৃত্বের চিত্র তৈরি করবে। এর অধীনে কংগ্রেস এখন বুথ পর্যায় থেকে প্রদেশ সভাপতি পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে সমावेशী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে।

এই নয়, দল নারী, যুব এবং ছাত্র সংগঠনকেও দুর্বল শ্রেণীর মধ্যে সচেতনতা ছড়ানো এবং কংগ্রেসের সাথে যুক্ত করার দায়িত্ব দিয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত পর্যন্ত দলের লক্ষ্য হলো তাদের আদর্শ প্রতিটি শ্রেণীর কাছে পৌঁছানো।

Leave a comment