শশী থরুরের বক্তব্য ও উদিত রাজের প্রতিক্রিয়া: কংগ্রেসে মতবিরোধের আলো

🎧 Listen in Audio
0:00

কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থরুর আবারও নিজের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, দলের নেতৃত্বের কিছু নেতার সাথে তাঁর মতবিরোধ রয়েছে। থরুর এটাও বলেছেন যে, তিনি কংগ্রেসের মতাদর্শে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসী।

নয়াদিল্লি: কংগ্রেস দলে মতবিরোধের আলোচনার মধ্যেই জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থরুরের বক্তব্য আবারও তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ১৯ জুন তিনি বলেছেন যে, কংগ্রেস নেতৃত্বের কিছু নেতার সাথে তাঁর মতবিরোধ রয়েছে এবং দলের ভেতরে মতের বৈচিত্র্য রয়েছে। এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এদিকে কংগ্রেস নেতা ডাঃ উদিত রাজকে যখন শশী থরুরের এই বক্তব্যের উপর প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়েছিল, তখন তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্যের উপর তীব্র পাল্টা জবাব দিয়েছেন।

শশী থরুরের বক্তব্যে উদিত রাজের নীরবতা

শশী থরুর বৃহস্পতিবার স্বীকার করেছেন যে, কংগ্রেস নেতৃত্বের কিছু নেতার সাথে তাঁর মতবিরোধ রয়েছে। তিনি বলেছেন, কংগ্রেস দল একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন এবং মতবিরোধ হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমরা দলের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে যখন উদিত রাজের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করার অবস্থায় নেই।

এটি প্রথমবার নয় যখন শশী থরুরের দল সংক্রান্ত বক্তব্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এর আগেও তিনি কংগ্রেসের অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে আলাদা মতামত রেখে আলোচনায় এসেছেন। উদিত রাজ তবে এ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন।

মোদীর ‘লাইসেন্স রাজ’ বক্তব্যের উপর তীব্র প্রতিক্রিয়া

একদিকে যখন উদিত রাজ শশী থরুরের বক্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন, অন্যদিকে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিহারের সিওয়ানে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে তীব্র পাল্টা জবাব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বক্তব্যে কংগ্রেসের শাসনামলে ‘লাইসেন্স ও কোটা রাজ’ নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন যে, এর ফলে কেবলমাত্র দলের নেতারা ধনী হয়েছে, আর জনতা গরিব থেকে গেছে।

এর জবাবে উদিত রাজ তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন: কোটা ও লাইসেন্সের মাধ্যমেই দলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নতি হয়েছে। RSS ও বিজেপিকে এই ব্যবস্থায় সমস্যা হচ্ছে কারণ এটি বঞ্চিত শ্রেণীকে উপরে উঠার সুযোগ দেয়। তিনি আরও বলেছেন, গ্যাস এজেন্সি, পেট্রোল পাম্প, সরকারি চাকরি, পঞ্চায়েত নির্বাচন – সর্বত্র কোটা ব্যবস্থা দলিত-পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুযোগ দিয়েছে। RSS-এর মানসিকতা হলো এ শ্রেণীগুলি যেন দাস বনে থাকে, যখন কংগ্রেস তাদেরকে উপরে তুলেছে।

১০ বছরে মাত্র ১০ লক্ষ চাকরি

উদিত রাজ মোদী সরকারের চাকরি দেওয়ার দাবিতেও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন যে, ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত মোদী সরকার বেসরকারিকরণের গতি ত্বরান্বিত করেছে, যার ফলে সংরক্ষিত শ্রেণীর চাকরির সুযোগ কমেছে। লেটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে সংরক্ষণ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মোদী সরকার গত ১০ বছরে মাত্র ১০ লক্ষ চাকরি দিয়েছে, যখন কংগ্রেসের সময় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ SC, ST, OBC সরকারি চাকরি পেত।

বিহারের উদাহরণ দিয়ে উদিত রাজ বলেছেন যে, রাজ্যে আজ যারা SC, ST, OBC উচ্চপদে আছেন, তারা কোটা ও লাইসেন্স ব্যবস্থার কারণেই এগিয়ে যেতে পেরেছেন। যদি কোটা ও লাইসেন্স ব্যবস্থা না থাকত, তাহলে আজও দলিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষ একই জায়গায় থেকে যেত। বিজেপিকে এই ব্যবস্থায় বিরক্তি হচ্ছে কারণ এটি তাদের ‘সামাজিক আধিপত্য’ কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ করে।

কংগ্রেস নেতার এই বক্তব্য এমন সময় এসেছে যখন বিজেপি ২০২৪-এর পর নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের আলোকে নিজের নীতি পুনর্নির্ধারণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে উদিত রাজের মতো নেতাদের এই বক্তব্য দেখায় যে, কংগ্রেস কোটা ও সামাজিক ন্যায়ের বিষয়টিকে আবারও জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে আনার চেষ্টা করছে।

Leave a comment