মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব: রাহুল গান্ধীর কঠোর বার্তা

🎧 Listen in Audio
0:00

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব সংকট দিন দিন বাড়ছে। রাহুল গান্ধী ভোপাল সফরে দলের নেতাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ও বিজেপি সমর্থকদের চিহ্নিত করার পরামর্শ দিয়েছেন।

MP News: মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও নেতৃত্ব সংকটের সমস্যায় জর্জরিত। সম্প্রতি দলের সাবেক সভাপতি ও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ভোপাল সফরকালে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দলের ভেতরে এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে যারা আসলে বিজেপির সাহায্য করছে। রাহুল গান্ধীর এই কঠোর বার্তার পিছনে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের জমিস্থিতি রয়েছে, যা দলের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাহুল গান্ধীর ভোপাল সফর ও সংগঠনকে শক্তিশালী করার বার্তা

৩ জুন রাহুল গান্ধী প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ভোপালে ছিলেন এবং সেই সময় তিনি দলের ‘সংগঠন সৃজন অভিযান’ শুরু করেছেন। তিনি কংগ্রেস নেতাদের স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে দলের ভেতরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরী। তার বক্তব্য ছিল, কোনও সিদ্ধান্ত উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হবে না, বরং নেতাদের মিলেমিশে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাহুল গান্ধী বিজেপির সাহায্যকারী নেতাদের চিহ্নিত করার কথাও বলেছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে দলে উপযুক্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত স্থানে বসানো হবে, যাতে কংগ্রেস শক্তিশালীভাবে এগিয়ে যেতে পারে।

রাহুল গান্ধী লোকসভা, বিধানসভা এবং পৌর নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে জেলা কংগ্রেস কমিটির ভূমিকাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করার কথাও বলেছেন। তার এই পদক্ষেপ কংগ্রেসের সংগঠনকে শক্তিশালী করার দিকে একটি বড় প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের জমিস্থিতি

মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের অবস্থা খুব ভালো নয়। ২০২৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কমলনাথের নেতৃত্বে ১৫ বছর পর সরকার গঠন করেছিল, কিন্তু এই সরকার মাত্র ১৫ মাস টিকেছিল। এরপর ২০২৩ সালের নির্বাচনে দলকে তীব্র পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যেখানে কংগ্রেস ২৩০ টি আসনের মধ্যে মাত্র ৬৬ টি আসনে জয়ী হয়েছে। এটি পূর্ববর্তী নির্বাচনের তুলনায় আসন সংখ্যায় প্রচুর হ্রাস, যদিও ভোটের শতাংশে মাত্র এক শতাংশের সামান্য হ্রাস পেয়েছে।

লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেসের পারফরম্যান্স হতাশাজনক ছিল। ২০১৯ সালে দল তাদের একমাত্র আসন ছিন্দওয়ারাও হারিয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস তাদের ভোটের শতাংশ ৩২.৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, যা পূর্ববর্তী পারফরম্যান্সের তুলনায় কম। এই ক্রমাগত ভোটের শতাংশ ও আসন সংখ্যা হ্রাস মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে সংগঠন দুর্বল

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কমলনাথ, দিগ্বিজয় সিং, সুরেশ পচৌরী, অজয় সিং রাহুল প্রভৃতি অনেক নেতা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দলকে ভেতর থেকে দুর্বল করেছে। গত নির্বাচনে পরাজয়ের পরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমেনি। রাজ্য সভাপতি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বদল হয়েছে, কিন্তু ফলাফল ভালো হয়নি।

লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সভাপতি জিতু পটওয়ারীও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দলের "ক্যান্সার" বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে দলকে উদ্ধার করার জন্য প্রথমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম বন্ধ করতে হবে। এই ধরণের বক্তব্য দলের আরও অনেক নেতার কাছ থেকে এসেছে, যারা এই সমস্যাকে কংগ্রেসের পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন।

Leave a comment